করোনা পরিস্থিতি বাড়ায় চ্যালেঞ্জ
ঝুলন গোস্বামী বলেন, গত ২ বছর ধরে প্রতিটি সিরিজকেই নিজের শেষ সিরিজ মনে হয়েছে। বিশেষ করে কোভিড-পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালে ক্রিকেট শুরুর পর থেকেই। আমাকে চোট-আঘাতের সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছিল। ফলে একেকটি সিরিজ ধরেই এগোতে হয়েছে। চলতি বছর বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কা সিরিজই আমার শেষ সিরিজ হবে বলে মনে হচ্ছিল। বিশ্বকাপ চলাকালীন চোট পাই। শ্রীলঙ্কা সফরের আগে ফিট হতে পারিনি। আগামী বছর টি ২০ বিশ্বকাপের আগে এটাই শেষ ওয়ান ডে সিরিজ। এই সিরিজের জন্য প্রস্তুত হতে রিহ্যাবের জন্য বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ক্রিকেট আকাদেমিতে যাই। তারপর ইংল্যান্ডে শেষ সিরিজ খেলতে আসা।
আইপিএল নিয়ে সিদ্ধান্ত পরে
বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় গতকালও জানিয়েছেন, আগামী বছর থেকে মেয়েদের আইপিএল শুরু হবে। ঝুলন সেই টুর্নামেন্টে খেলতে পারেন। তবে আজ তিনি বলেন, মহিলাদের আইপিএল ঘোষণার পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। আপাতত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার কেরিয়ার শেষ হচ্ছে। যখন খেলা শুরু করেছিলাম ভাবিনি এতদিন খেলতে পারব। প্রথমে উইমেন্স ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়াতে ছিলাম। ২০০৬ সালের পর বিসিসিআইয়ের ছাতার তলায় আসি। চাকদহ থেকে আড়াই ঘণ্টা লাগত ট্রেনে কলকাতায় আসতে। বাড়ি ফিরে পরদিন ফের আসতে হতো। অঞ্জুম চোপড়ার কাছ থেকে দেশের প্রথম ক্যাপ পাওয়া, দেশের হয়ে প্রথম বোলিং করা সেরা স্মৃতি। অবশ্য এটা যে কারও ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ১৯৯৭ সালে ইডেনে মহিলাদের বিশ্বকাপ চলাকালীন বল গার্ল ছিলাম। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ফাইনাল খেলেছিল। সেদিনই দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। দেশের প্রতিনিধিত্ব করার লক্ষ্যে কঠোর পরিশ্রম শুরু করি। ২০০২ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে অভিষেক। জোরে বল করাই লক্ষ্য ছিল।
চাকদহ এক্সপ্রেসের আক্ষেপ
ঝুলনের কথায়, সেই সময় জোরে বল করে উইকেট পাওয়াই আমার লক্ষ্য় ছিল। কেন না, দেশের হয়ে আর খেলার সুযোগ পাব কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম না। পারফরম্যান্স ধরে রাখা নিয়েও সংশয় ছিল। ফলে লক্ষ্য ছিল একটাই, দেশের হয়ে খেলা এবং জোরে বল করা। সেই লক্ষ্য সব সময়ই আমার গোটা কেরিয়ারে থেকেছে। জোরে বল করার পরিকল্পনা আমার গোটা ক্রিকেট কেরিয়ারেই রয়েছে। ২০০৫ ও ২০১৭ সালে মহিলাদের বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছেন। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত কাপ জয়ের স্বপ্নপূরণ হয়নি প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের। ঝুলনের কথায়, আমরা যদি একটা বিশ্বকাপও জিততে পারতাম তাহলে সেটা দেশের মহিলা ক্রিকেটের ক্ষেত্রে দারুণ ব্যাপার হতো। প্রতিটি ক্রীড়াবিদেরই সেই লক্ষ্য থাকে। চার বছর ধরে নিরলস পরিশ্রমের পর কাপ জিততে পারলে তা স্বপ্নপূরণের মুহূর্ত হয়। টি ২০ বিশ্বকাপ-সহ তিনটি বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছি, তবে একবারও কাপ জিততে পারিনি। এটা ভেবে খারাপ লাগে। এই আক্ষেপটা রয়ে গেল। যদিও ভারতের এখনকার দল বিশ্বকাপ জিতবে বলে আশাবাদী ঝুলনের।
ফেয়ারওয়েল ম্যাচ
ঝুলন গোস্বামী শেষ ম্যাচ খেলার আগে বলেন, যখনই চোট পেয়েছি, তখনই সিরিজ, ম্যাচ মিস করেছি। বসে থাকতে বাধ্য হয়েছি, অংশ নিতে পারিনি। কিন্তু এটা ফাস্ট বোলারদের কেরিয়ারের অঙ্গ। চোট আঘাত আসবে, তা সামলে ঘুরে দাঁড়ানোই একজন ক্রিকেটারের চারিত্রিক দৃঢ়তার পরিচায়ক। ফলে যখন চোটের কারণে বাইরে থাকতে হতো, তখন মনে হতো ফাস্ট বোলার না হয়ে ব্যাটার হলেই ভালো হতো। ব্যাটার হলে চোট-আঘাতের এতটা সমস্যায় পড়তে হতো না। ১৯৯৯ সালের পর ইংল্যান্ডের মাটিতে এই প্রথম সিরিজ জিতেছে ভারতের মহিলা ক্রিকেট দল। ঝুলনের বিদায়ী ম্যাচ জিতলে হোয়াইটওয়াশ সম্পূর্ণ করা যাবে, যা হবে সোনায় সোহাগা। চলতি সিরিজে ভালো ফর্মে থাকা ঝুলন নিজেও চাইবেন দারুণভাবেই ম্যাচটিকে স্মরণীয় করে রাখতে।