উচ্চ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের একটি খুঁটিতে হাত দিয়েছিল দলিত কিশোর। সেই অপরাধে দলিত পরিবারকে ৬০,০০০ টাকা জরিমানা করা হয় বলে অভিযোগ। ১ অক্টোবরের মধ্যে জরিমানার টাকা দিতে হবে। না হলে ওই দলিত পরিবারের ওপর পাথর নিক্ষেপ করা হবে পঞ্চায়েতে বিচার সভায় শাস্তির নিদান দেওয়া হয়। শাস্তির পরেই দলিত পরিবার নিজেদের বাড়ি থেকে দেবতার মূর্তি সরিয়ে বি আর আম্বেদকরের ছবি স্থাপন করেছেন। দলিত পরিবাবেব দাবি, এবার থেকে তাঁরা ভগবানের প্রার্থনা করবেন না। আম্বেদকরের ছবির কাছে প্রার্থনা করবেন। ঈশ্বর তাঁদের প্রার্থনা শোনেন না।
শোভাম্মা তার পরিবারের সাথে বেঙ্গালুরু থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে কোলার জেলার মালুর তালুকের উল্লেরহল্লিতে থাকেন। ৯ সেপ্টেম্বর গ্রামের মোড়লরা ছেলের শাস্তি স্বরূপ ৬০ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন। মোড়লদের অভিযোগে, শোভাম্মার স্পর্শে তাঁদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান অপবিত্র হয়ে গিয়েছে। এরপরেই কয়েকটি দলিত সংগঠন শোভাম্মার ঘটনার বিরোধিতা করতে থাকে। তারপরেই শোভাম্মার ঘটনা প্রচারে আসতে শুরু করে। শোভাম্মা দলিত সংগঠনের পরামর্শে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানা গিয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, গ্রামটিতে প্রায় ৭৫-৮০টি পরিবারের বাস এবং বেশিরভাগ পরিবারই ভোক্কালিগা সম্প্রদায়ের। গ্রামে প্রায় ১০টি দলিত পরিবার রয়েছে। শোভাম্মার বাড়ি গ্রামের উপকণ্ঠে এবং তার ছেলে টেকাল গ্রামের একটি স্কুলে দশম শ্রেণির ছাত্র। ৮ সেপ্টেম্বর ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিল শোভাম্মার কিশোর ছেলে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানের একটি খুঁটি ভুল করে ছুঁয়ে ফেলে। এরপরেই গ্রামের মোড়লরা তাঁকে ডেকে পাঠান। ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। না দিতে পারলে পাথর নিক্ষেপ করা হবে বলে জানানো হয়। শোভাম্মাকে বলা হয়েছে, মূর্তিটি অপবিত্র হয়ে গিয়েছে। পুনরায় রঙ করতে হবে। শোভাম্মা বলেন, বেঙ্গালুরুতে পরিচারিকার কাজ করেন। মাসের শেষে ১৩ হাজার টাকা আয় করেন। এই পরিস্থিতিতে তিনি কী করে ওই টাকা দেবেন। ঘটনায় শোভাম্মা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান। তিনি বলেন, 'ঈশ্বর যদি আমাদের প্রার্থণা গ্রহণ করতে না চান, ঈশ্বর যদি আমাদের স্পর্শে অপবিত্র হয়ে যান, তাহলে আমরা ঈশ্বরের প্রার্থনা করব না। আমরা আম্বেদকরের ছবির কাছে প্রার্থনা করব।'
আম্বেদকর সেবা সমিতির পরিচালনাকারী স্থানীয় কর্মী সন্দেশ বলেছেন, সোমবার রাতে তিনি ঘটনাটি জানতে পেরে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান। তিনি বলেন, 'আমি তাঁদের বাড়িতে গিয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করতে সাহায্য করেছি। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও যদি এই ধরনের সামাজিক অপকর্মের প্রচলন থাকে তাহলে গরীব মানুষ কোথায় যাবেন?'
কোলার জেলা প্রশাসক ভেঙ্কট রাজা বলেন, শোভাম্মার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁকে বাড়ি তৈরির জন্য কিছু অর্থ সাহায্য করা হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশকে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কর্ণাটকে এই ধরনের ঘটনা নতুন নয়। এর আগে দলিত কিশোরের মন্দিরে ঢোকার অপরাধে পরিবারের কাছ থেকে ২৫,০০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।