প্রয়াত হলেন ভারতীয় টেনিসের অন্যতম কিংবদন্তি নরেশ কুমার। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। স্ত্রী সুনিতা, পুত্র অর্জন এবং দুই কন্যা গীতা এবং প্রিয়াকে রেখে গেলেন এই মহান নক্ষত্র। নরেশ কুমারের স্ত্রী সুনিতা কুমার একজন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী।
ভারতীয় টেনিসের অপর কিংবদন্তি জয়দীপ মুখোপাধ্যায় পিটিআই-কে বলেছেন, "গত এক সপ্তাহ ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। আমাকে জানানো হয়েছিল ওনার বাঁচার খুব একটা আশা নেই। এক জন বড় মাপের মেন্টরকে হারালাম আমি।" উল্লেখ্য, নরেশ কুমারের অধিনায়কত্বে ডেভিস কাপে অভিষেক হয়েছিল জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের।
১৯২৮ সালের ২২ ডিসেম্বর অবিভক্ত ভারতের লাহোরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন নরেশ কুমার। ১৯৪৯ সালে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের মধ্যে দিয়ে নিজেদের পেশাদার টেনিস কেরিয়ারে পথ চলা শুরু করেন তিনি। পাঁচের দশকে রামানাথন কৃষ্ণনকে সঙ্গী করে ভারতীয় টেনিসকে শাসন করেছিলেন নরেশ কুমার। ১৯৫২ সালে প্রথম বার ভারতের ডেভিস কাপ দলে তিনি সুযোগ পান এবং ডেভিস কাপে ভারতকে নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি।
এর তিন বছর পর তাঁর কেরিয়ার সব থেকে বড় সাফল্যটি আসে যখন তিনি ১৯৫৫ সালে উইম্বলডনে চতুর্থ রাউন্ডে পৌঁছন। শেষ পর্যন্ত আমেরিকার টনি ট্রাবার্টের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল তাঁকে। কুর্ট নিলসেনকে পরাজিত করে ওই বছর উইম্বলডন জিতেছিলেন ট্রাবার্ট। কেরিয়ারে পাঁচটি সিঙ্গলস টাইটেল জিতেছিলেন নরেশ কুমার। ১৯৫২ এবং ১৯৫৩ সালে আইরিশ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন তিনি। ১৯৫২ সালে জেতেন ওয়েলস চ্যাম্পিয়নশিপ। ১৯৫৭ সালে তিনি জেতেন এসেক্স চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন তিনি। এর পরবর্তী বছর অর্থাৎ ১৯৫৮ সালে সুইৎজারল্যান্ডে তিনি জেতেন ওয়েনগান টুর্নামেন্ট। ১৯৬৯ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ছিল তাঁর শেষ টুর্নামেন্ট। উইম্বলডনের সিঙ্গলসে চতুর্থ রাউন্ড পর্যন্ত পৌঁছানো ছাড়াও পুরুষদের ডবলসে ১৯৫৩, ১৯৫৫ এবং ১৯৫৮ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছিয়ে ছিলেন তিনি। মিক্সড ডবলসেও ১৯৫৭ কোয়ার্টার ফাইনালে তিনি পৌঁছান।
১৯৯০ ডেভিস কাপে ভারতের নন প্লেয়িং অধিনায়ক ছিলেন নরেশ। অধিনায়ক হিসেবে ১৬ বছর বয়সী লিয়েন্ডার পেজকে ভারতীয় দলে যুক্ত করা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জাপানের বিরুদ্ধে তিনি খেলিয়েছিলেন লিয়েন্ডারকে। কতটা সঠিক ছিল তাঁর সিদ্ধান্ত তা আজ প্রমাণিত। বর্তমানে বিশ্ব মানচিত্রে ভারতের টেনিসের অন্যতম মুখ কিংবদন্তি লিয়েন্ডার পেজ। অর্জুন পুরস্কার জয়ী নরেশ কুমার প্রথম টেনিস কোচ হিসেবে ২০০০ সালে সম্মানিত হন দ্রোণাচার্য্য জীবন কৃতি সম্মানে। কলকাতায় এলে গুরু নরেশ কুমারের কাছে বারবার ছুঁট যেতেন লিয়েন্ডার।