একটা উৎকন্ঠার পর্ব পেরিয়ে অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়েছিল গতকাল দুপুরেই, আজ পাওয়া গেল জয়ের খবর, মাউন্ট আলিরত্নি টিব্বা সামিট হয়েছে। প্রথম ভারতীয় সামিট, তাও আল্পাইন স্টাইলে।
দক্ষিণ পশ্চিম দিক দিয়ে একদিনেই ক্লাইম্ব করে নেমে আসবে, সেইমত পরের দিন সকালে অর্থাৎ ৭ তারিখ ওরা ক্লাইম্ব শুরু করে। কিন্তু যত উঠতে শুরু করে, বুঝতে পারে উপরে ওভার হ্যাং রয়েছে, তাই ওরা দক্ষিণ দিকে সরতে শুরু করে, আর সে জন্য দেরি হতে থাকে। ওরা ক্লাইম্ব করছিল আল্পাইন স্টাইলে, অর্থাৎ কোনো ফিক্সড রোপ ছিলনা, ক্লাইম্বিং শেষে বারে বারে দড়ি খুলে নিয়ে যেতে হচ্ছিল। বিকেল ৫ টায় দেখে সামিট তখনও ২০০ মিটার উঁচুতে, তাই বাধ্য হয়ে ঠিক করল বিনাইটম্যান্ট করবে। ৫৩০০ মিটার উচ্চতায় কোনো স্লিপিং ব্যাগ, টেন্ট, স্নোবুট ছাড়াই একটি পাথরের গর্তে চারজন রাত কাটায়।
কথামতো সেইরাতেই লাইট সিগন্যালিং করে সামিট ক্যাম্পে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু আলো সামিট ক্যাম্প অব্দি পৌছায়নি, এদিকে ওয়াকি টকিও কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। পরের দিন সকালে ফের সকালে ক্লাইম্বিং করা শুরু করে এবং সাড়ে আটটায় সামিটে পৌঁছায়, তৈরী হল বাংলার পর্বতারোহণে ইতিহাস, কোনো গাইড ছাড়াই এরকম টেকনিক্যাল পিক সামিট! অত্যন্ত দক্ষ এবং সাহসী ক্লাইম্বার না হলে যা সম্ভব ছিলনা।
সেফটি গিয়ার খুলে ফের র্যাপলিং করে নামতে নামতে প্রায় সন্ধে হয়ে যায়, নেমে এসে দেখে সামিট ক্যাম্প খালি। এদিকে সামিট ক্যাম্পের কুক লাকপা শেরপা রাতে কোনো সিগনাল না পেয়ে, ওয়াকিতে রেসপন্স না পেয়ে ৮ তারিখ দুপুরেই নেমে এসে এলার্ট জারি করে। ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ালে ক্লাইম্বিং চলায় কোনো সময় নষ্ট করতে চায়নি।
অতিরিক্ত ক্লান্তি নিয়ে ওরা ৯ তারিখ সামিট ক্যাম্পেই বিশ্রাম নেয়, এদিকে ৯ তারিখ ভোর রাতে বেসক্যাম্প মেম্বার ও লাকপা শেরপা নেমে এসে মিসিং এর কথা জানায়। সেই দিনই মানালি মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট এর রেস্কিউ টিম রওনা দেয় বেসক্যাম্প এর উদ্দেশ্যে।
১০ তারিখ ওরা সামিট ক্যাম্প গুছিয়ে নামার চেষ্টা করে, কিন্তু বৃষ্টি সেই বাধ সাধে। চারজনের পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে অনুরোধের পরে হিমাচল প্রদেশ সরকার IAF কে হেলি রেস্কিউ এর জন্য অনুরোধ করে, কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকায় সেদিন হেলিকপ্টার ওড়েনি। তাই ১১ তারিখ ভেজা টেন্ট নিয়ে যখন ক্যাম্প ১ অব্দি নেমে সব শুকোতে দেয়, সেই সময় দেখে একটি হেলিকপ্টার ওদের দিকেই আসছে, বুঝতে পারে কিছু গড়বড় হয়েছে। কিছুক্ষণ বাদেই গ্রাউন্ড রেস্কিউ টিমের সাথে সবার দেখা হয় এবং সমস্ত ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়।
ফলস এলার্ম ছিল হয়তো, কিন্তু এই ফলস এলার্ম দেখিয়ে দিল বেঙ্গল মাউন্টেনিয়ারিং কমিউনিটি কতটা একজোট, সবাই সবার দায়িত্ব পালন করেছে। সরকারী বার্তার জন্য অপেক্ষা না করেই হেলিকপ্টারে উদ্ধারের জন্য লক্ষাধিক টাকা তুলে ফেলা গিয়েছে।
বাংলার সোনার মা, স্বাধীনতা দিবসের ৭৫ বছরের উদযাপনকে সামনে রেখে পুরস্কৃত নারীরা