কেন্দ্রীয় সরকার ভারত বায়োটেকের ইন্ট্রা-নাজাল ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে। কীভাবে এর প্রয়োগ হবে আর কীভাবেই বা কাজ করবে, তা নিয়ে উৎসুক মানুষজন। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ভারত বায়োটেকের এই নাজাল ভ্যাকসিন কেন্দ্রের ছাড়পত্র পেয়েছে মঙ্গলবারই। তারপর থেকেই এই ভ্যাকসিনের ব্যবহার নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক গাইডলাই দিয়েছে।
সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন ১৮ বছর বয়সি ও তার বেশি বয়সিদের জন্য জরুরিভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। এই ইন্ট্রানাজাল রিকম্বিন্যান্ট কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন, যার নাম বিবিভি ১৫৪, তা করোনা সুরক্ষার জন্য আদতে নাকের টিকা। ভারতের প্রথম নাজাল বা অনুনাসিক টিকা।
ভারত বায়োটেকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মতে নাকের মিউকোসায় ইমিউন রেসপন্স করে। সংক্রমণের স্থানে বা সংক্রমণকে অবরুদ্ধ করতে এবং কোভিড ১৯-এর সংক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম। এটি প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য আদর্শ। নাক দিয়ে এই টিকা গ্রহণ করায় শরীরের সঠিক জায়গায় তা কাজ করে।
ইন্ট্রানাজাল ভ্যাকসিন বিবিভি ১৫৪ অ্যান্টিবডি তৈরি করে শ্বাসযন্ত্রে। এটি স্টোরেজ করে রাখা ও প্রদান জন্য সর্বোত্তম তাপমাত্রা ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নাক দিয়ে এই ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়। ফলে দ্বিগুণ কাজ হয় এই ভ্যাকসিনে। মহামারী ও স্থানীয় সংক্রমণ রুখতেও এটি বিশেষ কার্যকরী। গণ টিকাদানের ক্ষেত্রেও এটি বিশেষ উপযোগী হবে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞমহল।
এই বিবিভি ১৫৪ ভ্যাকসিনটি একটি শিম্পাঞ্জি অ্যাডেনোভাইরাসকে একটি ভাইরাল ভেক্টরে পরিবর্তন করে, যা হোস্ট কোষে সার্স-কোভ-২-এর স্থিতিশীল স্পাইর প্রোটিন বহন করবে। যখন একজন ব্যক্তিকে বিবিভি ১৫৪ টিকা দেওয়া হবে, তখন শরীরের রোগ প্রতিরোধক কোষগুলি স্থিতিশীল স্পাইক প্রোটিন প্রকাশ করবে। ফলস্বরূপ, শরীর সার্স-কোভ-২-এর স্পাইক প্রোটিনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবটি তৈরি করবে।
যদি একজন ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে সার্স-কোভ-২-এর সংস্পর্শে আসেন, তাহলে অ্যান্টিবডির উপস্থিতির কারণে ইমিউন সিস্টেম উপরের ও নিম্ন উভয় শ্বাসযন্ত্রের ট্রাক্টে কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধ করবে। এইভাবে একইসঙ্গে বিবিভি ১৫৪-র একসঙ্গে সার্স-কোভ-২ এবং কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধ করার সম্ভাবনা থাকছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. মনসুখ মালব্য এদিন টুইটে করে জানান, কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভারত প্রথম থেকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এই লড়াইয়ে ভারত বায়োটেকের অবদান উল্লেখযোগ্য। আগেও তাঁরা করোনা ভ্যাকসিন এনে মানুষকে বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছে। এবার তাঁরা নিয়ে এল নাজাল ভ্যাকসিন। তাঁদের এই উদ্যোগ অনুমোদন পেয়েছেন। ভারত বায়োটেকের তৈরি করা এই ভ্যাকসিনটি শিম্প্যাঞ্জি অ্যাডেনোভাইরাস ভেক্টোরেড অ্যাড সিডিএসকো দ্বারা অনুমোদিত রিকম্বিনেন্ট নাজাল ভ্যাকসিন। এই ভ্যাকসিনটি হল করোনার জন্য তৈরি করা একটি অভিনব অ্যাডনোভাইরাস ভেক্টরযুক্ত ভ্যাকসিন। এটি শরীরে অ্যান্টিজেন সরবরাহকারী ভেক্টর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শরীরের বাইরে থেকে আসা কোনও ভাইরাসকে সহজেই চিহ্নিত করতে পারে।
ইঞ্জেকশন ছাড়াই করোনা টিকা দেওয়ার একটা প্রচেষ্টা চলছিল বহুদিন ধরেই। ভারত বায়োটেক সম্প্রতি করোনার ভ্যাকসিন বিবিভি ১৫৪-র তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল সম্পন্ন করেছিল। তারপরই ভারত বায়োটেক ছিল অনুমোদনের অপেক্ষায়। ভারত বায়োটেকের ইন্ট্রানাজাল ভ্যাকসিন সেই অনুমোদন পেয়ে গেল। এদিন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে সেই অনুমোদন বার্তা স্বয়ং কেন্দ্রীয়মন্ত্রী দিয়েছেন।
করোনা রোধে ইন্ট্রা-নাজাল ভ্যাকসিন! ভারত বায়োটেককে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন