সৌরভ ফিরে দেখলেন গ্রেগ চ্যাপেল জমানার শিক্ষা! সেরা শিক্ষক বেছে দিলেন কোন গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ?

জীবনে ঘুরে দাঁড়ানো বা কঠিন সময়ের চ্য়ালেঞ্জ সামলে কামব্যাকের জন্য সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে অনেকেই আদর্শ মেনে চলেন। সেই সৌরভই শিক্ষক দিবসে একটি বিশেষ ভিডিও পোস্ট করে দিলেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। দেবু মিত্র, জন রাইট থেকে গ্রেগ চ্যাপেল বা গ্যারি কার্স্টেনের মতো কোচেদের কথা উল্লেখ করেও তাঁদের কাউকে সেরা শিক্ষক বেছে নিলেন না। শিক্ষক দিবসে সেরা বাছলেন ব্যর্থতাকেই।

ব্যর্থতার আড়ালেই সাফল্য

ব্যর্থতার আড়ালেই লুকিয়ে থাকে সাফল্যের বীজমন্ত্র। এটাই দৃঢ় বিশ্বাস বিসিসিআই সভাপতির। ১৯৯২ সালে বেনসন অ্যান্ড হেজেস ওয়ার্ল্ড সিরিজ খেলতে গিয়েছিল ভারত। কপিল দেব, সঞ্জয় মঞ্জরেকর, সচিন তেন্ডুলকর, মহম্মদ আজহারউদ্দিনদের সঙ্গে ভারতীয় দলে ছিলেন সৌরভ। আজহারের অধিনায়কত্বে ব্রিসবেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে অভিষেক হয় সৌরভের। সেই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৬ উইকেটে হারে ভারতীয় দল। সচিন করেছিলেন ৭৭, সৌরভ ছয়ে নেমে ১৩ বলে ৩ রান করে অ্যান্ডারসন কামিন্সের বলে লেগ বিফোর হয়েছিলেন। এরপর ছিটকে যান ভারতীয় দল থেকে। তবে এই ব্যর্থতাই সৌরভকে চালিত করেছিল কামব্যাকের প্রক্রিয়ার পথে।

ফ্ল্যাশব্যাকে মহারাজ

সৌরভ বলেন, এরপর অনুশীলনের মাত্রা বাড়িয়ে দিই। কিছুতেই যখন জাতীয় দল ফিরতে পারছিলাম না, তখনই নিজেকে তৈরি করি সচিন তেন্ডুলকরের মতো ভারতীয় দলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করব বলে। এরপর ১৯৯৬ সালে লর্ডসে অভিষেক। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে ১৮৩ রান পরিচিতি বাড়ায়, স্পনসরশিপ মেলে, এনডোর্সমেন্ট আসে, তবে মানুষ বিশ্বাস করেছিলেন এই ছেলেটা খেলতে পারে বলে। ২০০০ সালে ভারতীয় অধিনায়ক হওয়ার পর ঠিক করি, আমার সঙ্গে যা হয়েছে তা যেন তরুণ ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে না হয়। প্রত্যেককেই দলের সিনিয়র মেম্বারদের মতো অনুভূতি দিয়ে তাঁদের জোশ, প্রত্যয়কে কাজে লাগিয়ে সেরাটা বের করে আনতে সক্ষম হন মহারাজ। ২০০৩ সালে বিশ্বকাপ ফাইনালে পরাজয়ের হতাশা আজও রয়েছে। তবে ওই ব্যর্থতাও পরবর্তীকালে সাফল্যলাভের জেদ বাড়িয়ে দেয়। সৌরভ বলেন, সব দেশকে হারিয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠেও হেরে যাওয়ার পর মনে হয়েছিল, যদি আরও বেশি অনুশীলন করতাম, যদি অন্য কৌশল অবলম্বন করে ম্যাচ খেলা যেত! কিন্তু এরপরই অস্ট্রেলিয়াকে তাদের দেশে গিয়ে হারানোর জেদ চেপে বসে সৌরভের। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে সচেতন হন। পরে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সাফল্যও আসে।

সৌরভের প্রত্যয়

সৌরভের কথায়, তখন অস্ট্রেলিয়াকে সকলে ভয় করতো। অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা লাগাতার বাউন্সার দিয়ে প্রতিপক্ষ ক্রিকেটারদের মনোবল ভেঙে দিয়ে জয় ছিনিয়ে নিতেন। কিন্তু সৌরভের ভারত সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারতকে চ্যাম্পিয়ন করানোর লক্ষ্যে প্রস্তুতির জন্য গ্রেগ চ্যাপেলকে কোচ করে আনা হয়েছিল। যদিও এরপর সৌরভকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দল থেকে বাদও দেওয়া হয়। তবু সৌরভ সেই অনুশীলনের মাত্রা বাড়িয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে সফল হয়ে ফের কামব্যাক করেন। তবে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে রাহুল দ্রাবিড়ের ভারত মুখ থুবড়ে পড়ে। সৌরভ আরও বলেন, ভারতীয় দলের বাইরে গিয়েছে, ফিরেও এসেছি। শারীরিক ও মানসিকভাবে নিজেকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছিলাম কঠোর পরিশ্রম করে। এতটাই উন্নতি ঘটাই যে ওই সময় নিজেকে ১৯ বছরের ক্রিকেটার মনে হতো। তবে খারাপ সময়ও নিজের লক্ষ্যে অবিচল ছিলাম।

হাল না ছাড়ার পরামর্শ

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তারপরেও নিশ্চিত ছিলেন তাঁর মধ্যে ক্রিকেট অবশিষ্ট রয়েছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২৩৯ রান করা থেকে একটি টেস্ট সিরিজে সাড়ে পাঁচশো রান, কিংবা এক বছরে ৯ টেস্টে ১২০০-র উপর রান করেছিলেন সৌরভ। মনে মনে ঠিক করেছিলেন, কী হয়েছে বা কী হচ্ছে সেটা বড় নয়। হারব না। মাঠে ব্যাট হাতে জবাব দেব। কারণ এখনও খেলা বাকি রয়েছে। আর সেই উদাহরণগুলি তুলে ধরেই তিনি বলেছেন, প্রত্যেকের জীবনেই ব্যর্থতা আসে। সেই ব্যর্থতাই সবচেয়ে বড় শিক্ষক। আমাদের জীবনে এমন সময় আসে যখন বুঝে উঠতে পারি না কী করা দরকার। কিন্তু ব্যর্থতা কিছু না কিছু শিখিয়েই যায়। হাল বা আশা ছাড়ব না, এই প্রত্যয়ই কামব্যাকের রসায়ন বলে উপলব্ধি মহারাজের।

More SOURAV GANGULY News  

Read more about:
English summary
Sourav Ganguly Looks Back To Tough Times Of His Career. He Also Shares Special Message On Teachers Day.