চিনা জাহাজ ইউয়ান ওয়াং ৫কে নিয়ে বিতর্ক, উদ্বেগ কিছু কম ছিল না। শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরে চিনা জাহাজের প্রবেশ নিয়ে ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করে। ভারতের দাবি ছিল, ইউয়ান ওয়াং ৫ জাহাজটি চিনের গুপ্তচর জাহাজ। বর্তমানে চিনা এই জাহাজটি শ্রীলঙ্কা থেকে ২,০০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অর্থাৎ ১১০০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণে অবস্থান করছে। বেজিংকে বাইপাস করে আফ্রিকার পূর্ব সমুদ্রপথে নতুন পথ অন্বেষণের একটা সম্ভাবনা তৈরি করেছে চিনের জাহাজটি। সেখানে ইউয়ান ওয়াং ৫ জাহাজটিকে মালাক্কা, সুন্দা ও লম্বক প্রণালী অতিক্রম করতে হয়েছে।
১,১০০ টনের এই জাহাজটি ভারত মহাসাগরের আরও গভীরে প্রবেশ করেছে। পূর্ব তিমুরের কাছে ওমবাই-ওয়েটর প্রণালী হয়ে অস্ট্রেলিয়ার উত্তর দিক দিয়ে বেজিংয়ের বন্দরের দিকে ক্রমেই এগিয়ে চলেছে। ইন্দোনেশিয়ার মালাক্কা, সুন্দা ও লম্বক প্রণালী অতিক্রমের সময় জাহাজটি আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের একেবারে কাছে চলে আসে। যার ফলে ভারতীয় নৌবাহিনী এই জাহাজটির গতিপথে পর্যবেক্ষণ করে। নৌবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইউয়ান ওয়াং ৫ জাহাজটি বেজিং থেকে পূর্ব আফ্রিকার মধ্যে নতুন একটি সামুদ্রিক পথের সম্ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল করেছে। কিন্তু তার জন্য জাহাজটিকে ভারতের জলসীমার খুব কাছ থেকে অতিক্রম করতে হয়।
নৌবিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নতুন সমুদ্র পথের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তা আগের থেকে অনেকটাই দীর্ঘ। বেজিং থেকে পূর্ব আফ্রিকার উপকূলে যেতে পারস্য উপসাগর ও এডেন উপসারের প্রণালী গুলো নতুন এই জলপথ এড়িয়ে চলছে। ওম্বাই ওয়েটার প্রণালীর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ পথ অবলম্বন করছে। তবে নতুন এই জলপথ চিনের জন্য অনেকটাই অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। এই নতুন সমুদ্র পথের ফলে কেনিয়া, তানজানিয়া, মোজাম্বিকের মোম্বাসার মতো বন্দরে চিনা জাহাজ সহজে প্রবেশ করতে পারবে। চিন বেল্ট রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। ইতিমধ্যে জিবুতিতে একটি ঘাঁটিও তৈরি করেছে। এই জলপথ সাবমেরিন বিরোধী অপারেশনে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
২২ অগাস্ট শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দর ছেড়ে যায় চিনা জাহাজটি। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে জাহাজটিকে হাম্বানটোটা বন্দরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার পর তীব্র সমালোচনা করে ভারত। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে বলে ভারতের তরফে অভিযোগ করা হয়। এর আগে আমেরিকা জানিয়েছিল, ইউয়ান ওয়াং সিরিজের জাহাজগুলো উন্নত প্রযুক্তি থাকে। যা গুপ্তচর বৃত্তিতে চিনকে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও এই জাহাজটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বহন ও উৎক্ষেপণে সম্ভব। চিনের তরফে প্রথম থেকে দাবি করা হয়, স্যাটেলাইট গবেষণার কাজে এই জাহাজটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে।