|
জয় শাহ সমালোচনার মুখে
২০২০ সালে এশিয়া কাপ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে বারবার পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল। শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কট ও তার জেরে বিক্ষোভের পরিস্থিতিতে এশিয়া কাপ সরানো হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে। গতকাল ভারত-পাকিস্তান খেলা ছিল। ভারত জিততেই গোটা দলকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিজেপির অনেক নেতাও রোহিত শর্মার দলের জয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে টুইট করেন। বিভিন্ন জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব থেকে আমজনতা, সকলেই উচ্ছ্বসিত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত গত টি ২০ বিশ্বকাপে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ায়। কিন্তু সেই জয়ের মুহূর্তই সমালোচনার মুখে ফেলেছে জয় শাহকে।
|
জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ
জয় শাহর সঙ্গে বসে খেলা দেখেন বিসিসিআইয়ের কোষাধ্যক্ষ অরুণ সিং ধুমল, যিনি কেন্দ্রীয় যুবকল্যাণ ও ক্রীড়ামন্ত্রীর ভাই। ছিলেন এমিরেটস ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান শেখ নাহিয়ান বিন মুবারক আল নাহিয়ান। গ্যালারিতে ছিলেন বলিউডের তারকা বিজয় দেভারকোন্ডা, ঊর্বশী রাউতেলা থেকে শুরু করে সাদ বাজওয়া, যিনি পাকিস্তানের চিফ অব আর্মি স্টাফ কামার জাভেদ বাজওয়ার পুত্র। খেলায় যেমন সমানে সমানে টক্কর চলছিল, তেমনই গ্যালারিতেও দুই দেশের সমর্থকদের শব্দব্রহ্ম অভাবনীয় পরিবেশ তৈরি করেছিল। দুই বল বাকি থাকতে ভারত জয়লাভ করে। হার্দিক পাণ্ডিয়ার ছক্কায় ভারতের জয় নিশ্চিত হতে হাততালি দিতে দেখা যায় জয় শাহকেও।
|
সরব তৃণমূল-কংগ্রেস
এরপরই ভাইরাল হয়ে যায় একটি ভিডিও। যাতে দেখা যায় জয় শাহ-র দিকে একজন ভারতের পতাকা বাড়িয়ে দিলে তিনি তা ধরতে অস্বীকার করেন। এরপরই তৃণমূল, কংগ্রেস, তেলঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি-সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি অমিত শাহ ও জয় শাহকে নিশানা করে বিজেপিকেও আক্রমণের রাস্তা বেছে নেন। বিজেপির মুখে দেশপ্রেমের কথা ভণ্ডামি বলেও উল্লেখ করা হয়। জয় শাহর কীর্তি দেশাত্মবোধে আঘাত বলে দাবি করে বিরোধীরা। অমিত শাহর পুত্র বলে জয় রেহাই পাবেন কিনা সেই প্রশ্ন তোলা হয়। অজুহাত নয়, সদুত্তরের দাবিও জানায় তৃণমূল। জয়রাম রমেশ টুইটে কটাক্ষ করে লেখেন, জয় যেন বলছেন আমার বাবা আছে, জাতীয় পতাকা রেখে দিন। কংগ্রেস নেতা অজয় কুমার বলেন, পতাকা পলিয়েস্টার না হয়ে খাদির হওয়ায় ধরেননি বোধ হয়।
|
শিবসেনা শাহ-র পাশেই
তবে শিবসেনার প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী টুইটে জয়ের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তিনি লিখেছেন, এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সভাপতি হিসেবে নিরপেক্ষ থাকতে গিয়ে জয় শাহ যা করেছেন তা মোটেই জাতীয় পতাকার প্রতি অবমাননা নয়। জয়কে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণ বন্ধেরও দাবি জানান প্রিয়াঙ্কা। যদিও তার আগের টুইটেই ভাইরাল ভিডিও শেয়ার করে তিনি দাবি করেছিলেন, জয় শাহ জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছেন। পরে আসল কারণ বুঝে ব্যাকফুটে যান প্রিয়াঙ্কা। আইসিসির কোড অব এথিক্সের ২.২.২.২ ধারায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, "A Director, Committee Member or Staff Member must not promote the interests of any particular stakeholder (such as a National Cricket Federation or a group of National Cricket Federations), or of any third party (such as a governmental or political body), where doing so would conflict with his
overriding duty to act in the best interests of all of the ICC's collective
membership and the sport of cricket as a whole."
|
জাতীয় ক্রীড়া দিবসে জয়ের বার্তা
ফলে জয় শাহ যদি ভারতের জাতীয় পতাকা ওড়াতেন তাহলে তিনি স্বার্থের সংঘাতে জড়়িয়ে পড়ে বিধিভঙ্গের দায়ে পড়তেন। কেন না, আইসিসির নিয়মানুযায়ী কোনও পদাধিকারী কোনও পক্ষকেই প্রকাশ্যে সমর্থন করতে পারেন না। এশিয়া কাপ আয়োজন করে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল। সেখানে জয় শাহ ভারতীয় হলেও বাকি দলগুলিকে ছেড়ে ভারতকে সমর্থন করতে পারেন না। এটা সব দেশের সব পদাধিকারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ফলে নিয়ম-কানুন না জেনে সস্তা চমকের জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি জয় শাহকে যে আক্রমণ করছে তা ঠুনকো ছাড়া কিছু নয়। আজ আবার জাতীয় ক্রীড়া দিবস। সেই উপলক্ষে জয় শাহ টুইটের মাধ্যমে বার্তা দিতে কিন্তু ভোলেননি। তবে তাতেই থামছে না বিতর্ক। অনেকেই আসল কারণকে অস্বীকার করেই নিজেদের যুক্তি সাজাচ্ছেন রাজনৈতিক আক্রমণ করতে।