বিদেশে উচ্চশিক্ষার আশা নিয়ে অথবা কেউ চাকরি সূত্র বা নিছকই কদিনের ভেকেশন কাটাতে দেশের বাইরে যান। আর এক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার নাম শীর্ষ দেশগুলির মধ্যে রয়েছে। আপনার দেশের বাইরে কাটানো দিনগুলি যাতে বিস্বাদময় না হয়ে মধুর স্মৃতিতে ভরে উঠুক তার জন্যই আপনার প্রথম কিছু সপ্তাহ অস্ট্রেলিয়ায় কীভাবে কাটাবেন, কী করবেন সবকিছুর গাইডলাইন নিয়ে হাজির হয়েছি।
বিমানবন্দর থেকে হোটেল বা বাসস্থানে কীভাবে যাবেন
১) এয়ারপোর্ট থেকে পড়ুয়াদের পিকআপের জন্য নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনবোর্ডিং পোর্টাল দেখুন। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বহিরাগড় পড়ুয়াদের জন্য এই পরিষেবা প্রদান করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মগুলির মধ্যে এটি একটি কমপ্লিমেন্টারি পরিষেবা হতে পারে এবং প্রথমবার বিদেশে পড়তে আসা পড়ুয়াদের জন্য এই বিকল্প থাকতে পারে।
২) ওলা বা উবের ক্যাব ডেকে নিতে পারেন আপনার হোটেল বা বাসস্থানে যাওয়ার জন্য। আপনার কাছে প্রচুর ব্যাগ থাকলে এটা সুবিধাজনক বিকল্প হতে পারে। তবে বিমানবন্দর থেকে গাড়ি ভাড়া করে নিয়েও যেতে পারেন তবে এটায় একটু বেশি টাকা খরচ হবে।
৩) স্থানীয় পরিবহনগুলির মধ্যে বাস, ট্রেন বা এয়ারপোর্ট শাটল নিতে পারেন। দেখে নিন কিছু গণ পরিবহন যা বিমানবন্দর থেকে আপনার গন্তব্যে যেতে সহায়ক হবে।
বিসবেন
১) এয়ারট্রেন
২) কন এক্স আয়ন-বিসবেন বিমানবন্দর থেকে ডোর টু ডোর পরিষেবা
৩) স্কাইবাস শাটল সার্ভিস ( অনলাইন বা বিমানবন্দরের কিয়স্ক থেকে টিকিট কিনতে পারেন)
ক্যানবেরা
১) র্যাপিড থ্রি বাসরুট
২) একাধিক শাটল পরিষেবা
ডারউইন
১) সিটি শাটল পরিষেবা
২) মারকিউর ডারউইন এয়ারপোর্ট রিস্ট বা নভোটেল ডারউইন এয়ারপোর্ট রিসর্টে থাকলে বিনামূল্যে শাটল পরিষেবা পেয়ে যাবেন
৩) বাসলিঙ্ক
হোবার্ট
১) স্কাইবাস শাটল সার্ভিস (অনলাইন বা বিমানবন্দরের কিয়স্ক থেকে টিকিট কিনতে পারেন)
মেলবোর্ন
১) স্কাইবাস শাটল সার্ভিস (অনলাইন বা বিমানবন্দরের কিয়স্ক থেকে টিকিট কিনতে পারেন)
২) কন এক্স আয়ন-বিসবেন বিমানবন্দর থেকে ডোর টু ডোর পরিষেবা
পার্থ
১) বাস রুট ৩৮০-পার্থ সিটি সেন্টার ও টি-ওয়ান এবং টি-টু
সিডনি
১) এয়ারপোর্ট লিঙ্ক ট্রেন
২) শাটল সার্ভিস-রেডি টু গো, মোজিও
৩) বাস পরিষেবা-৪০০, ৪২০
জেট ল্যাগ কী এবং কীভাবে এটার সঙ্গে মোকাবিলা করবেন
আপনি যদি ঘন ঘন আন্তর্জাতিক পর্যটক হন অছবা প্রথম বার বিদেশে এসেছেন, তাহলে অবশ্যই এই জেট ল্যাগ বিষয়টি শুনেও থাকবেন এবং এর মধ্য দিয়েও গিয়েছেন। জেট ল্যাগ কথাটি অর্থ হল পূর্ব থেকে পশ্চিমে বা উল্টো লম্বা ভ্রমণের কারণে সৃষ্ট উপসর্গ। জেট ল্যাগ একটি ক্রোনোবায়োলজিক্যাল সমস্যা যা লম্বা ভ্রমণে টাইম জোন বদলানোর ফলে শারীরিক কার্যক্রমের ছন্দ নষ্ট হয়। এতে ঘুমের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয়। যতটা বলা সহজ বিষয়টা ততটা সহজ কিন্তু ন। নতুন টাইম জোন অনুযায়ী ঘড়ির সময় বদলালেও আমাদের শরীরের ঘড়ির সময় পরিবর্তন করা খুবই কঠিন। এর ফলে ফলে ক্ষুধা, ঘুম, হরমোন নিঃসরণ ইত্যাদি ব্যাহত হয়। সাধারণত জেট ল্যাগ কাটিয়ে উঠতে কয়েকদিন সময় লাগে। তাই আপনার ঘড়ির সময় বদলান এবং ধীরে ধীরে স্থানীয় সময়ের সঙ্গে ঘুমনোর চেষ্টা করুন।
যাঁরা ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণ করেন তাঁদের জন্য দরকারি টিপস
-আপনার আন্তর্জাতিক গন্তব্যে যাত্রা করার আগে আপনার দিনগুলিকে অতিরিক্ত সময় নির্ধারণ করা এড়িয়ে চলুন।
-বিদেশে পৌঁছনোর প্রথম বা দ্বিতীয় দিনে আপনার ঘুমের চক্রকে বদল করার চেষ্টা করুন।
-প্রথম দু'দিনের কঠোর শৃঙ্খলা একটি আলাদা হলেও তা অদূর ভবিষ্যতে আপনাকে সহায়তা করবে। যদি আপনি সকালে ঘুমোন এবং রাতে জাগেন তবে এটা তাড়াতাড়ি আপনাক এস্থির হতে সাহায্য করবে।
-নতুন টাইম জোনে পৌঁছে সকালবেলায় ঘুম ত্যাগ করুন। নয়তো আপনি মধ্যরাতে জেগে থাকবেন এবং দুপুরবেলা তন্দ্রচ্ছন্ন থাকবেন।
-জেট ল্যাগ থেকে নিজেকে উদ্ধার করতে তিন-চারদিনের সময় নিন যাতে আপনার কাজে যাওয়ার প্রথমদিন আপনি তরতাজা থাকেন।
-সময় হারানো (পূর্ব দিকে ভ্রমণ) ও সময় লাভের (পশ্চিম দিকে ভ্রমণ) থেকে পুনরুদ্ধার করা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং, কারণ আপনার শরীর একটি বর্ধিত দিনের চেয়ে সংক্ষিপ্ত দিনের সঙ্গে অনেক বেশি লড়াই করে।
প্রথমদিন যেগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত
সিম কার্ড কেনাঃ অস্ট্রেলিয়ার প্রধান তিন টেলিকম পরিষেবা হল টেলস্ট্রা, অপটাস ও টিপিজি (প্রাক্তন ভোডাফোন)। এছাড়াও বে কিছু পরিষেবা রয়েছে যারা কল ও ইন্টারনেট সহ মোবাইল প্ল্যান দেয়। তাই কোন পরিষেবা নেবেন তার আগে কিছু রিসার্চ করে নিন, যেটা আপনার জন্য সেরা হবে সেটাই নেবেন। সিমকার্ড বিমানবন্দরে কিনতে পাওয়া যায় বা অনলাইনে অর্ডার দিলেও অস্ট্রেলিয়ার আপনার স্থানীয় ঠিকানায় পৌঁছে দিয়ে যাবে।
খাবার
নতুন পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য কিছুদিন নিজেই রান্না করে খান। যেখানে থাকছেন সেখানকার স্থানীয় দোকানে নিয়ে কিছু চটজলদি খাবার নিয়ে আসুন। ডিম, পাউরুটি, মাখন, নুন ও গোলমরিচ নিজের কাছে রেখে দিন। খুব সহজেই এগুলি বানিয়ে নেওয়া যায় এবং জেট ল্যাগ থেকে নিজেকে উদ্ধার করার পর এগুলি তৈরি করে খেতে পারেন। এরপর আপনি যখন বাইরে বেরোবেন তখন নতুন খাবার ধীরে ধীরে খেতে শুরু করুন।
বেডিং
অস্ট্রেলিয়ায় ভাড়াটেদের ভাড়া দেওয়ার চুক্তিতে অধিকাংশ বাড়ির মালিক বেডিং দিয়ে থাকে। তবে এই প্যাকেজের মধ্যে বালিশ বা কম্বল এগুলি থাকে না। শীতলতম অস্ট্রেলিয়া শহরের মধ্যে মেলবোর্নে থাকার জন্য আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে উষ্ণ বেডিং নিয়ে যেতে হবে যাতে শীতল ঠাণ্ডা রাতে আপনি কাবু না হয়ে পড়েন। তবে যদি নিয়ে না আসেন তবে মেলবোর্নের স্থানীয় দোকান 'বিগ ডব্লিউ' তে বালিশ ও কম্বল পেয়ে যাবেন। আপনি যদি দিনের শেষের দিকে মেলবোর্নে আসেন, তাহলে আপনার পক্ষে বিছানার খোঁজে বের হওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। এই ক্ষেত্রে, আপনার প্রথম রাতের জন্য একটি এয়ার পিলো এবং উষ্ণ পোশাক নিয়ে ভ্রমণ করতে ভুলবেন না। মেলবোর্নে গরমের দিনও রাতের তাপমাত্রা বেশ নীচের দিকে থাকে, যা ৮ ডিগ্রি থেকে ১০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। শীতের রাত আরও ভয়ানক ঠাণ্ডা হয় কারণ অ্যান্টার্টিকা থেকে ঠাণ্ডা বাতাস আপনার হাড়হিম করে দেবে।
ট্রাভেল কার্ড গণ পরিবহনের জন্য
ব্রিসবেনঃ গো কার্ড (ট্রেন, ট্রাম, বাস ও ফেরি ভ্রমণ)
ক্যানবেরাঃ এসিটি-মাই ওয়ে (বাস)
ডারউইনঃ নর্থ টেরিটরি-ট্যাপ অ্যান্ড গো (বাস)
হোবার্টঃ মেট্রো টাসমানিয়া-গ্রীনকার্ড (বাস)
মেলবোর্নঃ পিটিভি-মাইকি (ট্রেন, ট্রাম ও বাস)
পার্থঃ স্মার্টরাইডার (ট্রেন, বাস ও ফেরি)
সিডনিঃ ওপাল (ট্রেন, ট্রাম, বাস ও ফেরি)
শীতের পোশাক
মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে অস্ট্রেলিয়ান শীত বেশ কনকনে হতে পারে, আপনার প্রথম সপ্তাহেই নিখুঁত শীতের পোশাক খুঁজে পাওয়া আবশ্যক।
ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট
যত শীঘ্র আপনি অস্ট্রেলিয়ায় নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তৈরি করবেন ততই আপনি আপনার আর্থিক বিষয়গুলি সহজে পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন। টাকা লেনদেন অথবা অর্থ স্থানান্তরও অনেক সহজ হবে। কমনওয়েলথ ব্যাঙ্ক, ন্যাব বষাঙ্ক ও ওয়েস্টপ্যাক ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
স্থানীয় সুপারমার্কেট
অস্ট্রেলিয়ার কিছু স্থানীয় সুপারমার্কেট হল উলওর্থস, কোলস ও আলদি
অস্ট্রেলিয়ার কিছু ভারতীয় দোকান
নতুনভাবে এই দেশে আপনার জীবন শুরু করতে আমরা বিভিন্ন শহরের সিবিডি এলাকায় কিছু ভারতীয় স্টোরের একটি তালিকা তৈরি করেছি।
ব্রিসবেন
অল ইন ওয়ান ইন্ডিয়ান গ্রসারি স্টোর
ইন্ডিয়ান স্পাইস শপ চার্মসাইড
মণিকা ইন্ডিয়ান গ্রসারি
কেদরন স্পাইস সেন্টার
ইন্ডিয়ান স্পাইস শপ
ক্যানবেরা
নিউ স্পাইস ওয়ার্ল্ড শপ
আপনা ইন্ডিয়ান বাজার
স্পাইস মার্কেট এসিটি
ইন্ডিয়ান মেগা মার্ট
ডারউইন
দ্য চিলি চয়েস
মলি সুপার মার্কেট অ্যান্ড ইন্ডিয়ান গ্রসারি
ক্যাস স্পাইসড ওয়াংগুরি
হোবার্ট
স্পাইস ওয়ার্ল্ড
দ্য স্পাইস শপ
ইউর মিনি মার্ট
মুনলাইট নেপালিস অ্যান্ড ইন্ডিয়ান গ্রসারি স্টোর
মেলবোর্ন
মেলবোর্ন গ্রসারি-গ্রসারি শপ/ইন্ডিয়ান স্পাইস স্টোর/হোলসেল গ্রসারি/গ্রসারি ডেলিভারি
লেটসেভ কনভিনিয়েন্স অ্যান্ড ইন্ডিয়ান গ্রসারি স্টোর
স্পাইস ল্যাব ডকল্যান্ড
কারি কর্নার
এক্সেল ফুড মার্ট
আপনাদেশি ইন্ডিয়ান গ্রসারি
পার্থ
স্পাইস ওয়ার্ল্ড
স্পাইস টাচ
কোয়ালিটি ইন্ডিয়ান গ্রসারি
স্পাইস হাব হাউস অফ ইন্ডিয়ান গ্রসারি
মহারাজা স্টোর
সিডনি
এমজিএম স্পাইস-ইউর কমপ্লিট ইড়্ডিয়ান গ্রসারি স্টোর
নিউ ইন্ডিয়ান হাউস সুরি হিলস শপ
যশ ইন্ডিয়ান স্পাইস 'এন' ডিলাইটস
কাঠমাণ্ডু কনভেনিয়েন্স স্টোর
আশা করছি এই গাইডলাইন আপনাদের অস্ট্রলিয়া সফর আরও সহজ ও দারুণ করে তুলবে। পড়ুয়া হোক বা কর্মসূত্রে যান অস্ট্রলিয়া সর্বদা নতুনদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। তাই নতুন দেশকে জানুন এই গাইডলাইনের মাধ্যমে।
উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য কেন পড়ুয়ারা যুক্তরাজ্যকেই বেছে নেন?