চার মাস আগে ইউনিট, তারপরই ধাক্কা
ত্রিপুরায় মাত্র চার মাস আগে ইউনিট গড়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তার আগে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন সুবল ভৌমিক। কিন্তু তৃণমূলে এসে বিজেপির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে দেখা গিয়েছিল প্রবীণ এই নেতাকে। ত্রিপুরায় পুরসভা নির্বাচনে ভালো ফল করেছিল তৃণমূল। কিন্তু মুখ থুবড়ে পড়ে চার কেন্দ্রের বিধানসভা উপনির্বাচনে।
রাজ্য সভাপতি অপসারিত তৃণমূলে
উপনির্বাচনে তৃণমূলের শোচনীয় ব্যর্থতার পর থেকেই সুবল ভৌমিকের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে দলের সঙ্গে। তারপর সুবল ভৌমিককে রাজ্য সভাপতি করায় অনেকেই ক্ষুণ্ণ ছিলেন। এদিকে সুবল ভৌমিকের বিজেপি যোগ ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। তা বুঝতে পেরেই তৃণমূল আগেভাগে তাঁকে সরিয়ে দিল রাজ্য সভাপতির পদ থেকে। নইলে একজন রাজ্য সভাপতির অন্য দলে যোগ দেওয়া পার্টির পক্ষে খুবই খারাপ বার্তা দেয়।
বিজেপি-যোগের সম্ভাবনায় অপসৃত!
সুবল ভৌমিকের বিজেপি-যোগের সম্ভাবনা ক্রমেই বাড়ছে। রাজনৈতিক মহলের খবর তিনি ২৭ অগাস্ট বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। তার আগেই সুবল ভৌমিককে সরিয়ে মুখ রক্ষা করা হল। ২০২১ সালে ত্রিপুরায় পুর নির্বাচনে তৃণমূল ভালো ফল করে। তারপর ২০২২-এর এপ্রিল মাসে সুবল ভৌমিককে রাজ্য সভাপতি করা হয় ত্রিপুরা তৃণমূলের।
রাজ্য সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার নেপথ্যে
কিন্তু সুবল ভৌমিককে রাজ্য সভাপতি করার পর থেকেই তৃণমূল পিছু হটতে শুরু করে। যে তৃণমূল বাম ও কংগ্রেসকে টেক্কা দিয়ে পুর নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল। প্রায় ২০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। সেই তৃণমূল বিধানসভা উপনির্বাচন ২ বা ৩ শতাংশে নেমে যায়। কেন এই ব্যর্থতা, কাটাছেঁড়া করতে গিয়ে সামনে আসে অসন্তোষ। স্পষ্ট হয়ে যায় রাজ্য সভাপতির বিজেপি-সংযোগও। তারপরই সুবল ভৌমিককে রাজ্য সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তৃণমূলে শুরু হয়েছিল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, দলত্যাগ
চারটি বিধানসভা কেন্দ্রেই তৃণমূলের জামান বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। এর প্রধান কারণ ছিল সদ্য ফুটে ওঠা তৃণমূলে শুরু হয়েছিল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। নিজের পছন্দের ব্যক্তিদের পদ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল সুবলের বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে তোপ দেগেই তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেস যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক বাপ্টু চক্রবর্তী। এবার সুবল ভৌমিককে রাজ্য সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে তৃণমূল নতুন করে চলতে চাইছে।
নতুন রাজ্য সভাপতি কে, আপাতত অন্তর্বর্তী দায়িত্বে
সুবল ভৌমিক অপসারিত হওয়ার পর তৃণমূলের কংগ্রেসের তরফে দল পরিচালনার ভার দেওয়া হয়েছে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুস্মিতা দেবকে। ত্রিপুরায় পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন রাজীব ও সুস্মিতা। এবার তাঁদের উপরই বর্তাল অন্তর্বর্তী দায়িত্ব। শীঘ্রই নতুন রাজ্য সভাপতির নাম জানানো হবে বলে জানিয়েছে তৃণমূল।
তৃণমূলকে মাঝ দরিয়ায় ফেলে বিজেপিমুখী সভাপতি!
ঢাকঢোল পিটিয়ে সুবল ভৌমিককে রাজ্য সভাপতি করে এনেছিল তৃণমূল। কিন্তু তিনিই তৃণমূলকে মাঝ দরিয়ায় ফেলে বিজেপিমুখী হতে চলেছেন। ২০১৮-য় ঠিক একইভাবে তৃণমূলকে ভেঙে বিজেপি শক্তি বাড়িয়েছিল। সুদীপ রায় বর্মন সদলবলে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। এবারও সুবল ভৌমিকের হাত ধরে সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হয় কি না, তা বলবে ভবিষ্যৎ।