অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের পাশাপাশি প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে আরও এক মহিলা মোনালিসা দাসের। পার্থ গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে তাঁর নাম প্রকাশ্যে এলেও তিনি সে ভাবে প্রকাশ্যে আসেননি। আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোনালিসা দাসের নামে অনেক সম্পত্তি রয়েছে, এমন তথ্যও সামনে আসে। যা নিয়ে একেবারে হৈচৈ বেঁধে যায়।
শুধু তাই নয়, তাঁর পদোন্নতিতেও পার্থর প্রভাব আছে বলে মনে করেন অনেকে। অবশেষে মুখ খুললেন সেই অধ্যাপিকা। বললেন, 'আমি অর্পিতা মুখোপাধ্যায় বলে কাউকে চিনি না। জানিও না। আমাকে ইডি কখনও তলব করেনি।'
অনেক দিন বাদে সোমবার তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায়। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্ন উত্তরে তিনি বলেন, 'আমি অর্পিতা মুখোপাধ্যায় বলে কাউকে চিনি না। জানিও না। আমাকে ইডি কখনও তলব করেনি। ইডির নোটিসের প্রশ্নই নেই।' নিজেকে একজন সৎ শিক্ষিকা বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অবান্তর। পার্থ-কাণ্ডে আপনার নাম জড়াচ্ছে। কিছু বলবেন? এই প্রশ্ন করা হতেই তিনি বলেন, 'এই নিয়ে কিছু বলতে পারব না'।
শুধু নাম জড়ানোই নয়, দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে মোনালিসার বিরুদ্ধে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে। ডেপুটেশনও জমা দিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, মোনালিসার স্পষ্ট উত্তর, 'আমি একজন সৎ মানুষ। সৎ শিক্ষক। শিক্ষিত পরিবারের সন্তান। ইডির নোটিসের প্রশ্নই আসে না।'
অভিযোগের সঙ্গে যখন সম্পর্ক নেই, তখন এতদিন কেন বিশ্ববিদ্যালয় আসেননি মোনালিসা? অধ্যাপিকার উত্তর, 'আমি পারিবারিক কাজে ব্যস্ত ছিলাম। অসুস্থ থাকায় ওই সময় কাজ থেকে আমি অব্যাহতি নিয়েছিলাম।'
আপনার সঙ্গে বাংলাদেশ যোগ রয়েছে? বোলপুরের বাগানবাড়ির কেয়ার টেকিং কি আপনি করতেন ? এই নিয়ে কোনও উত্তর দেননি মোনালিসা দাস।
উল্লেখ্য, গত ২৩ জুলাই পার্থ গ্রেফতার হওয়ার পর কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা মোনালিসা দাসের নাম সামনে আসে। সূত্রের খবর ইডির নজরে রয়েছেন তিনিও। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথা যেমন শোনা যায়, সেই সঙ্গে ইডি সূত্রে খবর, মোনালিসারও বিপুল সম্পত্তি রয়েছে। আসানসোলের গড়াইরোডে তাঁর ভাড়া বাড়ির মালিক জানান, ১০ জুলাই শেষবার বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন মোনালিসা। তারপর ১ মাস ১০ দিন সেখানে যাননি তিনি।
২০১৪ সালে আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন মোনালিসা। সেই সময়েই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন পার্থ। কেউ কেউ বলেন, খুব কম দিনেই নাকি মধ্যেই অধ্যাপক থেকে বিভাগীয় প্রধানের পদ পেয়ে যান মোনালিসা দাস। এই উত্থানের নেপথ্যেও পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন বলে মনে করেন সহকর্মীদের একাংশ।
তাঁর সম্পত্তির উৎস নিয়েও অনেক প্রশ্ন রয়েছে। ইডি সূত্রে খবর মোনালিসা দাসের নামে রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট। শান্তিনিকেতন, নদিয়ায় বাড়ি রয়েছে একাধিক। শোনা যায়, এই সবই আসলে মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। তিনিই মোনালিসা দাসকে সেসব ফ্ল্যাট দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। প্রতিবেশীরা জানিয়েছিলেন তিনি মাসে দু থেকে তিনবার মোনালিসা আসানসোলের বাড়িতে আসতেন। সাদা গাড়িতে করে আসতেন। আবার চলেও যেতেন।
উল্লেখ্য, এই অভিযোগ সামনে আসার পর ইতিমধ্যেই কাজী নজরুল ইউনিভার্সিটির পক্ষ আয়োজিত দুই দিনের ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সের বক্তাদের তালিকা পার্থ ঘনিষ্ঠের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। ২৯ ও ৩০ জুলাই কাজী নজরুল ইউনিভার্সিটি সেমিনার হলে নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতা দিয়েই ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স হয়।
কনফারেন্সের বক্তাদের তালিকায় চিফ অ্যাডভাইজার হিসেবে নাম ছিল অধ্যাপিকা মোনালিসা দাসের। পার্থ কাণ্ড সামনে আসতেই সেই বক্তাদের তালিকা থেকে ও গেস্ট কার্ড থেকে নাম ও ছবি বাদ পড়ে মোনালিসা দাসের। নতুন করে বক্তাদের তালিকার বুকলেট তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মোনালিসার দাবি, তিনি অসুস্থ থাকায় নিজেই নাকি বাদ দিতে বলেছিলেন নাম। এ বিষয়ে কোনও কথা বলেননি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।