ইচ্ছাশক্তির কাছে যে কোনও কিছুই প্রতিবন্ধকতা হতে পারে না তা প্রমাণ করলেন অনিল শর্মা। বয়স ৬৮ বছর। আমেদাবাদের অ্যাপোলো হাসপাতালে হাঁটু প্রতিস্থাপন করিয়েছেন। তারপরেও ট্রেকের প্রতি রয়েছে অমোঘ আকর্ষণ। ইন্দোরের এই ব্যক্তি এবার মাউন্ট এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে পৌঁছে ভেঙে দিলেন যাবতীয় মিথ।
ইন্দোরের অনিল শর্মা চাকরি করতে ব্যাঙ্কে। বরাবরই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে পছন্দ করেন। খেলাধুলোর প্রতিও তাঁর রয়েছে প্রচুর টান। কিন্তু ৫৭ বছর বয়স থেকে হাঁটুর জয়েন্টে অস্টিআর্থারাইটিস ভোগাতে শুরু করে তাঁকে। একরকম বন্ধই হয়ে যায় হাঁটাচলা। ১০০ বা ২০০ মিটার হাঁটতেও প্রচুর যন্ত্রণা হতো। তখনই তিনি সকলের পরামর্শে হাঁটুর প্রতিস্থাপন করানোর সিদ্ধান্ত নেন। যোগাযোগ করেন ডাক্তার কেসি মেহতার সঙ্গে। তিনি একদিকে যেমন চন্দ্র নি ক্লিনিকসের ডিরেক্টর এবং প্রধান, তেমনই আমেদাবাদের অ্যাপোলো হাসপাতালের হাঁটু সংক্রান্ত চিকিৎসা বিভাগের ডিরেক্টর ও প্রধান পদে রয়েছেন।
ডা. কেসি মেহতার তত্ত্বাবধানেই বিশেষ পদ্ধতিতে অনিল শর্মার হাঁটুর প্রতিস্থাপন হয়। কোষের খুব বেশি ক্ষতি না ঘটিয়ে ডায়াথার্মির ব্যবহার ছাড়াই হয় অপারেশন। এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে রোগী দ্রুত আরোগ্যলাভ করেন। এমনকী যেদিন হাঁটুর প্রতিস্থাপন হয় সেদিনও সামান্য হেঁটেছিলেন অনিল শর্মা। এক মাস পরেই পুরো সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক কাজকর্মে যোগ দেন। অপারেশনের তিন মাস পরেই একাই চণ্ডীগড়-কিন্নাউর উপত্যকায় ট্রেকে চলে যান। ২০১৫ সালে অনিল শর্মা একাই ১০ কেজি ব্যাগ নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন মাউন্ট এভারেস্টে। প্রতি বছর নিয়ম করে বিভিন্ন জায়গায় ট্রেকিংয়ে যান অনিল শর্মা। ২০১৩ সালে কিন্নাউর-স্পিতি-লাহাউল ভ্যালি, ২০১৪ সালে তুঙ্গনাথ-রুদ্রনাথ-মধ্যমাহেশ্বর, ২০১৫ সালে এভারেস্টের বেস ক্যাম্প, ২০১৬ সালে অন্নপূর্ণা দেবী বেস ক্যাম্প, ২০১৭ সালে রূপকুণ্ড, ২০১৮ সালে নেপালে লাংতাং ভ্যালি গ্লেসিয়ার ট্রেক ও গত বছর দেরাদুন-মুসৌরিতে সাফল্যের সঙ্গেই ট্রেক করে ফিরেছেন।
ডা. কেসি মেহতা বলেন, অনেক সময়ই দেখি হাঁটু প্রতিস্থাপন করাতে আসা রোগীরা জিজ্ঞাসা করেন অপারেশনের পর সিঁড়ি ভাঙতে পারবেন কিনা। আমি তখন উদাহরণ দিই অনিল শর্মার। যিনি অপারেশনের আগে ১০০-২০০ মিটারই হাঁটতে পারতেন না, তিনিই এখন একের পর পাহাড়ে ট্রেকিংয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত। মাউন্ট এভারেস্টের বেস ক্যাম্পেও পৌঁছে গিয়েছেন। ফলে তিনি যদি এমনটা করতে পারেন তাহলে ঘরে সিঁড়ি ভাঙা নিয়ে চিন্তার অবকাশই থাকা উচিত নয়। হাঁটু প্রতিস্থাপনের যে পদ্ধতি অবলম্বন করেন এই চিকিৎসক তা আন্তর্জাতিক নিয়মাবলীর চেয়েও ভালো। উপকৃতও হয়েছেন অনেকে। স্বাভাবিকভাবেই অনিল শর্মা তাই অনেকের কাছেই দৃষ্টান্ত হতে পারেন।