এক মউকা কেজরিওয়াল কো
জাতীয় রাজনীতিতে একাধিকবার অরবিন্দ কেজরিওয়ালের উচ্চাকাঙ্খা দেখা গিয়েছে। কিন্তু মনীশ সিসোদিয়ার সাংবাদিক বৈঠকের পর লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী মুখ নিয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নাম নিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। ক্রমেই যেন 'এক মউকা কেজরিওয়াল কো' -এর পথ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদী গুজরাতের বাইরে বারাণসী কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হন। সেই সময় দুঃসাহস দেখিয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়াল বারাণসী থেকে প্রার্থী হন। ২০২৪ সালে লোকসভায় মোদীর বিরুদ্ধে কেজরিওয়ালের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা যেন একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল হলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নতুন স্লোগান
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কেজরিওয়াল ১৭ অগস্ট টুইটের মধ্য দিয়ে লোকসভা নির্বাচনের স্লোগান ঘোষণা করে দিয়েছেন। ১৭ অগস্ট টুইটারে কেজরিওয়াল দেশজুড়ে বিনামূল্যে তিনি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের প্রতিশ্রুতি দেন। কেজরিওয়াল শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের প্রতিশ্রুতি দিলে সামনে আসে দিল্লি মডেল। যা সত্যি আকর্ষণীয়। টুইটারে কেজরিওয়াল বলেন, 'আমাদের দেশকে আবার বিশ্বের এক নম্বর রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে। আমাদের ভারতকে মহান করতে হবে। আমরা মেক ইন্ডিয়া ওয়ান নামে জাতীয় একটি মিশন শুরু করেছি। যেখানে দেশের ১৩০ কোটি নাগরিককে যুক্ত করতে চাই।'
বিরোধী মুখ হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমস্যা
একাধিকবার বিরোধীদের মুখ হিসেবে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম উঠে এসেছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান সমস্যা হল হিন্দি ভাষী নন। উত্তর ও মধ্য ভারতের জনগণ হিন্দি ভাষীদের বিশেষ পছন্দ করেন। এছাড়াও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে জনপ্রিয়তা বাংলায় রয়েছে। তা রাজ্যের বাইরে নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরপ্রদেশ, গোয়ার নির্বাচনে, ত্রিপুরার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তবে সেরকম কোনও ফল করতে পারেননি। অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তোষণের একটি অভিযোগ রয়েছে। যা বাংলার বাইরের জনপ্রিয়তায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, গুজরাত ও হিমাচলপ্রদেশের নির্বাচনে কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে আপ অন্যতম শক্তিশালী দল হিসেবে উঠে আসার চেষ্টা করছে।
পিছিয়ে কেসিআর, নীতীশ কুমার!
বিরোধী মুখ হিসেবে তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের নাম উঠে এসেছে। কিন্তু মমতার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো তারও নিজের রাজ্যের বাইরে বিশেষ জনপ্রিয়তা নেই। এবং তিনি হিন্দি ভাষী নন। অন্যদিকে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নাম লোকসভায় বিরোধীদের মুখ হিসেবে একাধিকবার উঠে এসেছে। এনডিএ জোট থেকে বেরিয়ে মহাগটবন্ধনে যোগ দেওয়ার পর নীতীশ কুমারের নাম আরও জোড়াল হয়েছে। নীতীশ কুমার এনডিএ থেকে বেরিয়ে বলেছিলেন, ২০১৪ সাল থেকে যাঁরা ক্ষমতায় রয়েছেন, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর তারা ক্ষমতায় নাও থাকতে পারেন। এছাড়াও নীতীশ কুমারের একটি দুর্নীতিমুক্ত ইমেজ রয়েছে। বিহারের 'বিকাশ পুরুষ' হিসেবে বার বার নীতীশ কুমারের নাম উঠে এলেও বাধা জনপ্রিয়তায়। বার বার বিহারের ক্ষমতায় থাকার জন্য নীতীশ কুমার ও তাঁর দলকে অন্য দলের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে জোট করতে হচ্ছে। বিহারে নীতীশ কুমার বর্তমানে তিন নম্বর রাজনৈতিক দল। তার আগে রয়েছে বিজেপি ও আরজেডি।
মোদীর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছেন কেজরিওয়াল
বিজেপির একাধিক নেতা স্বীকার করে নিয়েছেন, ক্রমেই কেজরিওয়াল নরেন্দ্র মোদীর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন। বিজেপি ছাড়া কংগ্রেস ও আপ একাধিক রাজ্যে বর্তমানে ক্ষমতায় রয়েছে। বিজেপির অনেক নেতা পরোক্ষে দাবি করেছেন, অন্যান্য বিরোধীরা যেভাবে নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করেন, কেজরিওয়াল সেভাবে করেন না। যার জেরে ক্রমেই অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছেন। অন্যদিকে, দিল্লির একাধিক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে এসে কেজরিওয়াল ও দিল্লির আপ সরকারকে বিঁধতে চাইছে। তবে সেক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা বিজেপি এখনও করতে পারছে না। দুর্নীতির সঙ্গে আপের যোগ নিয়ে এখনও অনেকটাই ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে, কেজরিওয়াল দিল্লির শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যেহারে উন্নতি করেছে, করোনা মহামারীর সময় দিল্লি সরকার যেভাবে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তা অনেকের মনে দাগ কেটে গিয়েছে।