গির অরণ্যে ভয়াবহ তাণ্ডব ঘটিয়েছে তাউকটে
ঘূর্ণিঝড় তাউকটে প্রভাবে গুজরাতের গির জাতীয় উদ্যানে এখনও সেই ধ্বংসস্তূপের ছবির বর্তমান। ২০২১ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় তাউকটে আছড়ে পড়েছিল গুজরাতে। তারপর কেটে গিয়েছে ১৫ মাস। এই সময়ের মধ্যেই রাজ্য বনবিভাগ একাধিক সমীক্ষা চালিয়ে জানতে পেরেছে, গির অরণ্যে ঘটে গিয়েছে ভয়াবহ তাণ্ডব। সেই তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে বনাঞ্চল।
ঘূর্ণিঝড়ের ফলে গির অরণ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ফাঁকা
ভারতের পশ্চিম উপকূলকে যেন ছিঁড়ে খেয়েছে রাক্ষুসে ঝড় তাউকটে। শুধু যে উদ্ভিদকুলকে ধ্বংস করে দিয়েছে এই ঝড়, তা নয়। বিপাকে পড়েছে প্রাণীকুলও। ঝড়ের ফলে গির অরণ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। সেখানে বিচরণ করতে শুরু করেছে সিংহরা। কারণ সিংহরা একটা ফাঁকা এলাকা পছন্দ করে। তার ফলে অন্যান্য বন্যপ্রাণীরা যাঁরা মূলত গাছকে নির্ভর করে বেঁচে থাকে, তারা পড়েছে বিপাকে।
ন্যাশনাল বোর্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফের পরিসংখ্যানে
২০১৯ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী গুজরাতের ৬৭৪টি এশিয়াটিক সিংহের প্রায় অর্ধেক ৩২৫ থেকে ৩৫০টি ১৪১২ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ওই অভয়ারণ্যে বাস করত। ন্যাশনাল বোর্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফের সদস্য এইস এস সিং বলছেন, যে গাছগুলি বনের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। শুকিয়ে যাওয়া গাছে আগুন লেগে দাবানলের সৃষ্টি হতে পারে। তখন সিংহ-সহ সমস্ত প্রাণীকূলই বিপাকে পড়তে পরে। সমস্যায় পড়বে তৃণভোজী নীলগাইয়ের মতো বণ্যপ্রাণীরাও।
১৯৮২-র ঘূর্ণিঝড়কেও হার মানাল তাউকটে
১৯৮২ সালের নভেম্বরে গুজরাতে আঘাত এনেছিল আরও একটি ঘূর্ণিঝড়। সেই ঘূর্ণিঝড়ে গির অরণ্যে ২.৮ মিলিয়নের বেশি গাছ উপড়ে পড়েছিল। এবার সেই রেকর্ড ভেঙে গিয়েছে। তারপর তিন বছর লেগেছিল তা পরিষ্কার করতে। এবারও পরিষ্কার করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এবার আরও অনেক বেশি গাছ পড়েছে। ফলে তা সরিয়ে ফেলতে সময় লাগবে।
গিরের ৩০ শতাংশ গাছ নষ্ট তাউকটের তাণ্ডবে
১৯৮২ সালের ক্ষতিগ্রস্ত এলকা বিচার করে বন বিভাগের তরফে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছিল এবার ৩ থেকে চার মিলিয়নের মতো গাছ উপড়েছে ঘূর্ণিঝড় তাউকটের প্রভাবে। গিরের ৩০ শতাংশ গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল বলে উপগ্রহ তথ্যের ভিত্তিতেও পাওয়া যায়। বণ্যপ্রাণীদের বাধাহীন চলাচল নিশ্চিত করতে বন বিভাগ সর্বতোভাবে চেষ্টা করছে।
পড়ে যাওয়া গাছ সরানো আবশ্যক গির অরণ্যে
বনাঞ্চলকে পরিষ্কার করতে নেমে একটা সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে বনবিভাগের কর্মীদের। অনেক পতিত গাছের পুনরুত্থাণ সম্ভব। ফলে বন বিভাগ তাদের অপসারণ করতে পারে না। গির অরণ্যে সিংহের সংখ্যা প্রায় সমান রয়েছে। এখন তার জন্য জঙ্গল ফাঁকা করা অর্থাৎ পড়ে যাওয়া গাছ সরানো আবশ্যক হয়ে উঠেছে।
বনাঞ্চলের গাছ অবিলম্বে পাতলা করাও প্রয়োজন
প্রাক্তন প্রধান বন সংরক্ষক উদয় ভোরা বলেন, গির অরণ্যকে প্রকৃতির করুণায় ছেড়ে দেওয়া যাবে না। শীঘ্রই উপড়ে ফেলা গাছগুলো পরিষ্কার করতে হবে। গিরের গাছ পাতলা করারও প্রয়োজন। সবুজ আবরণের ঘনত্ব ৬০ শতাংশের বেশি হলে তা সিংহের পক্ষে প্রতিকূল। বর্তমানে ৬০ শতাংশের বেশি ঘনত্ব গির অরণ্যে। তাই বনাঞ্চলের গাছ অবিলম্বে পাতলা করারও প্রয়োজন।