বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার প্রতিবাদে সে দেশের সংখ্যালঘু সংগঠনগুলি দেশের সর্বত্র বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছে। তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নাগাড়ে হামলা হচ্ছে, হিন্দু শিক্ষকদের হত্যা করা হচ্ছে এবং হিন্দু মহিলাদের উপর ধর্ষণের সংখ্যা প্রত্যেক দিন বাড়ছে। এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে একটি প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এমনটাই জানিয়েছে।
হিন্দু সংবাদ নামে বাংলাদেশের একটি সংবাদ সংস্থা টুইটারে লিখেছে যে, "নড়াইল সাহাপাড়ায় হিন্দুদের ওপর বর্বর মৌলবাদী জিহাদি হামলার প্রতিবাদে শাহবাগসহ সারাদেশে হিন্দু সংগঠনগুলো শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করেছে।" এর আগে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, যারা দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে কিন্তু হিন্দু সংগঠনের দাবি কোনও ব্যবস্থা নিতে এখনও পর্যন্ত ব্যর্থ সরকার।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন (এনএইচআরসি)ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রালয়কে হামলার তদন্ত করতে বলেছে এবং তা প্রতিরোধে অবহেলা ছিল কিনা তা নির্ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছে। এনএইচআরসি আরও বলেছে যে একটি "ধর্মনিরপেক্ষ দেশে" হিংসা কোনও অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়।"
গত ১৫ জুলাই নড়াইলের লোহাগড়ার সাহাপাড়া এলাকায় হিন্দু সংখ্যালঘুদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। জুম্মার নামাজের পর বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দিতে শুরু করে এই বলে যে একজন ১৮ বছর বয়সী ব্যক্তি ফেসবুকে তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। স্থানীয়দের মতে, পোস্টটি ১৮ বছর বয়সী কলেজ ছাত্র আকাশ সাহা করেছিল। গ্রামে শুক্রবার জুমার নামাজের পর ছাত্রের বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে তাকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখানো হয়।
ছেলেটি নিখোঁজ হওয়ার পর জনতা প্রতিবেশী হিন্দু সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা শুরু করে। যাদের বাড়ি পুড়ে গেছে তাদের একজন বলেছেন, "একদল দুষ্কৃতী আমাদের সমস্ত মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করার পর, অন্য দল এসে আমাদের দরজা খোলা দেখতে পায়। লুটপাট করার মতো কিছুই অবশিষ্ট না থাকায় তারা আমাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।" আর এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, "আমি জানি না এই হিংসা, হুমকি কতদিন আমাদের উপর চলবে। কে আমাদের ন্যায়বিচার দেবে? কে আমাদের নিরাপত্তা দেবে? আগুন দেওয়ার সময় আমি যদি ঘরে থাকতাম, তাহলে আমি মারা যেতাম। ঈশ্বর আমাকে বাঁচিয়েছিলেন। কিন্তু এটা কি বাঁচার কোনো উপায়?"
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আকাশের বাবা অশোক সাহাকে শুক্রবার পুলিশ আটক করেছে। আকাশের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে এখনও অবধি হামলাকারীদের কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।