অঞ্জুর পর নীরজ
নীরজ যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউজিনে বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেমেছিলেন, তখন বেঙ্গালুরুতে বসে টিভিতে চোখ রেখেছিলেন অঞ্জু ববি জর্জ। প্রথম তিনটি রাউন্ড নীরজের ভালো যায়নি। কমছিল পদক জয়ের সম্ভাবনা। অবশেষে চতুর্থ থ্রোটি গিয়ে পড়ল ৮৮.১৩ মিটার দূরত্বে। যা নীরজের পদক জয় নিশ্চিত করে দেয়, তিনি উঠে আসেন দুই নম্বরে। সেই স্থানই ধরে রাখেন শেষ অবধি, শেষ দুটি রাউন্ডে প্রত্যাশিতভাবে জ্যাভলিন ছুড়তে না পারলেও। এ ক্ষেত্রে নীরজের বাধা হয়ে দাঁড়ায় কুঁচকির চোটও। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ৯০ মিটারের মাইলস্টোনও তিনি স্পর্শ করতে পারেননি।
একই পরিস্থিতি থেকে পদক
২০০৩ সালে প্যারিসের বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে ভারতকে প্রথম পদক এনে দিয়েছিলেন লং জাম্পার অঞ্জু ববি জর্জ। এত বছর পর দেশকে নীরজ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের পদক এনে দেওয়ায় খুশি অঞ্জু। তাঁর জেতা ব্রোঞ্জের পর নীরজ জিতলেন রুপো। তবে নীরজের পদক জয়ের সঙ্গে নিজের পদক জয়ের পরিস্থিতির মিল খুঁজে পেয়েছেন তিনি। অঞ্জু ববি জর্জ বলেন, নীরজকে তৃতীয় রাউন্ড অবধি দেখে ভাবছিলাম, হে ঈশ্বর! আমিও তো এই পরিস্থিতিতেই ছিলাম। ভেবে শিহরণ জাগছিল। নীরজের মতো আমিও তৃতীয় রাউন্ডের পর চতুর্থ স্থানেই ছিলাম।
অঞ্জু স্মৃতিমেদুর
১৯ বছর আগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের দিন ঠিক কী হয়েছিল তা সংবাদসংস্থা পিটিআইকে জানাতে গিয়ে অঞ্জু বলেন, প্রথম রাউন্ডের পর আমি শীর্ষে ছিলাম। কিন্তু তৃতীয় রাউন্ডের পর নেমে যাই চতুর্থ স্থানে। কিন্তু তখন আমি আরও প্রত্যয়ী হই যে আমাকে কামব্যাক করতে হবে এবং পদক জিততে হবে। সেটা করতে পেরেছি। আমার বিশ্বাস একই ঘটনা ঘটেছে নীরজের ক্ষেত্রেও। উল্লেখ্য, নীরজের প্রথম থ্রো ফাউল হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় থ্রো ছিল যথাক্রমে ৮২.৩৯ মিটার ও ৮৬.৩৭ মিটারের। পঞ্চম ও ষষ্ঠ থ্রো দুটি ফের ফাউল। অঞ্জু ববি জর্জ লং জাম্পে প্রথম রাউন্ডে লাফান ৬.৬১ মিটার। এরপর দুটি ফাউল জাম্প তাঁকে নামিয়ে দিয়েছিল চারে। চতুর্থ রাউন্ডে ৬.৫৬ মিটারের লাফেও অবস্থানের হেরফের হয়নি। তবে পঞ্চম রাউন্ডে ৬.৭০ মিটারের লাফ নিশ্চিত করেছিল ঐতিহাসিক ব্রোঞ্জ।
গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
অঞ্জু ববি জর্জ বলেছেন, আত্মবিশ্বাস সহজে হারিয়ে ফেললে চ্যাম্পিয়ন পদকজয়ী হওয়া যায় না। বিশ্বের সেরাদের মধ্যে থাকতে হলে নিজের দক্ষতার প্রতি আস্থা রাখতে হবে। ফলাফল নিজের পক্ষে আনতে ও পদক জেতার দিকেই ফোকাস রাখতে হবে। অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে থাকা অঞ্জু নীরজের কীর্তি প্রসঙ্গে বলেন, অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রুপো জেতা নিঃসন্দেহে বড় কৃতিত্ব। যেভাবে চাপ সামলেছেন এবং কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে পদক নিশ্চিত করেছেন তা অসাধারণ। দেশকে এভাবেই নীরজ বারবার গর্বিত করুন, চাইছেন অঞ্জু।
আর ১৯ বছরের প্রতীক্ষা নয়
সাধারণত নীরজের প্রথম বা দ্বিতীয় থ্রোটি দারুণ হয়। আজ প্রথমটি ফাউল হওয়ায় সকলের মতো কিছুটা চাপ অনুভব করছিলেন অঞ্জুও। তবে এরপর নীরজের কামব্যাক ও পদক জয় স্বস্তি এনে দেয়। তাঁর পর নীরজ বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে পদক এনে দেওয়ায় খুশি অঞ্জু ববি জর্জ। নীরজ যেভাবে পদক জেতার পর ২০০৩ সালে অঞ্জুর কীর্তির কথা উল্লেখ করেছেন তাও মন ছুঁয়ে গিয়েছে দেশের প্রাক্তন লং জাম্পারের। তবে এরপর থেকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পদক জিততে ভারতকে ১৯ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হবে না বলেই বিশ্বাস অঞ্জু ববি জর্জের। কমনওয়েলথ গেমসেও ভারত প্রচুর পদক জিততে বলে আশাবাদী তিনি।