শুনব হাতির হাঁচি' এই ব'লে কেষ্টা, নেপালের বনে বনে, ফেরে সারা দেশটা। রবি ঠাকুরের এই কবিতা কে না জানে। কিন্তু তিমির বমি! তিনি দেখে থাকলেও তিমির বমি দেখার শখ আর কার হয়! সেই শখ ছিল না জেলেদের। কিন্তু সেই বমিতেই তাঁরা খুঁজে পেলেন ২৮ কোটি টাকা।
ঘটনা কেরালার ভিঝিনজামের। একদল জেলে ২৮ কোটি টাকা খুঁজে পেয়েছে তিমির বমি থেকে এবং সেই টাকা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছে। জেলেরা সাগরে ২৮.৪০০ কেজি ওজনের তিমির বমি বা অ্যাম্বারগ্রিস দেখতে পেয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় তীরে নিয়ে এসে উপকূলীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
উপকূলীয় পুলিশ শনিবার জানিয়েছেন যে, "তারা আমাদের অ্যাম্বারগ্রিস হস্তান্তর করেছে। আমরা বন বিভাগকে জানিয়েছি এবং তারা আমাদের কাছ থেকে তা গ্রহণ করেছে।" বন বিভাগ এটি নিশ্চিত করার জন্য অ্যাম্বারগ্রিসটিকে শহরের রাজীব গান্ধী সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজিতে (আরজিসিবি) নিয়ে গেছে। সূত্র জানায়, এক কেজি অ্যাম্বারগ্রিস, যা সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম প্রায় এক কোটি টাকা। যাইহোক, ভারতে এটি আইনত নিষিদ্ধ বিক্রি করা, কারণ তিমি একটি বিপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী যা প্রানী সুরক্ষা আইনের অধীনে সুরক্ষিত।
স্পার্ম হোয়েল বা স্পার্ম তিমি মাছের বমি কে অ্যাম্বারগ্রিস বলে। জীবাশ্ম বা ফসিল হিসেবে পাওয়া কাঠের রেজিনের মত পদার্থ কে বলে অ্যাম্বার।স্পার্ম তিমির বমি অ্যাম্বার এর মত দেখতে কিছুটা তাই এটিকে অ্যামবারগ্রিস বলে। এটি সাধারণত মোমের মত শক্ত পদার্থ যা স্পার্ম তিমির পেটে বা অন্ত্রে তৈরি হয়। সাগরের পানিতে এটি ভেসে থাকে এবং ভাসতে ভাসতে সাগর তীরে চলে আসে।এজন্য একে "floating gold" বা ভাসমান সোনা হিসেবে ডাকা হয়ে থাকে। এটি 'সমুদ্রের ধন' নামেও পরিচিত।খুব মূল্যবান সুগন্ধি তৈরি করতে এটি ব্যবহার করা হয়।এর সাথে মানুষের কদাচিৎ দেখা মেলে। দুষ্প্রাপ্যতার কারণে এটি খুবই মূল্যবান।বহুকাল থেকে মূল্যবান এই পদার্থ মানুষ ব্যবহার করে আসলেও এর উৎস সবার কাছে অজানা ছিল। কেউ মনে করতো সাগরের ঢেউয়ের মাথায় যে ফেনা থাকে তা জমে গিয়ে তৈরি হয় এটি।
কেউ আবার মনে করতো সমুদ্রে বিচরণকারী পাখি মরে গেলে তাদের মৃতদেহ সমুদ্রের পানিতে থাকতে থাকতে এদের বর্জ্য থেকে একসময় এটি তৈরি হয়। অনেক কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ১৮০০ সালের কোন এক বছর আবিষ্কৃত হয় যে, স্পার্ম হোয়েল নামক তিমি মাছের বমি থেকে তৈরি হয় এই মহামূল্যবান পদার্থ অ্যামবারগ্রিস। তিমির প্রজাতির মধ্যে এদের সংখ্যা বিরল।