|
লর্ডস টু ম্যানচেস্টার
২০০২ সালে লর্ডসে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনালে ভারত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩২৬ রানের টার্গেট তাড়া করছিল। দলগত ১০৬ রানে অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আউট হওয়ার পর ভারত ৪০ রানের ব্যবধানে হারায় আরও চারটি উইকেট। ২৪ ওভারে ৫ উইকেটে ১৪৬ এই পরিস্থিতি থেকে ১২১ রানের পার্টনারশিপ গড়েছিলেন যুবরাজ সিং ও মহম্মদ কাইফ। কাইফ শেষ অবধি ৮৭ রানে অপরাজিত থেকে ৩ বল বাকি থাকতে ভারতকে ঐতিহাসিক জয় এনে দিয়েছিলেন। আর তারপরেই লর্ডসের ব্যালকনিতে সৌরভের সেই জার্সি ওড়ানো। ২০ বছর পর ম্যানচেস্টারে ভারত অনেকটা সেরকম পরিস্থিতি থেকেই ইংল্যান্ডকে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছে। ভারতের টার্গেট ছিল ২৬০। ১৬.২ ওভারে ৭২ রানে চার উইকেট পড়ে যায়। সেখান থেকে ভারতের জয় নিশ্চিত করে হার্দিক পাণ্ডিয়া ও ঋষভ পন্থের জুটি। পঞ্চম উইকেটে তাঁরা দুজন ১১৫ বলে ১৩৩ রান যোগ করেন। এতেই ভারতের জয়ের পথ প্রশস্ত হয়।
সৌরভের প্রশংসা
হার্দিক ৫৫ বলে ৭১ রান করেন। ঋষভ পন্থ ১১৩ বলে ১২৫ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জেতান। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বেহালার বাড়িতে বসে ভারতের একদিনের সিরিজ জয় দেখেছেন। এই খেলা দেখার সময় লর্ডসে ন্যাটওয়েস্ট ফাইনাল জয়ে যুবরাজ-কাইফ জুটির সঙ্গে পন্থ-পাণ্ডিয়া জুটির মিল পাচ্ছিলেন কিনা সেটা জানতে চাওয়া হয় সৌরভের কাছে। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক হেসে বলেন, এঁরাও দুজন ভালো খেলেছেন। বিশেষ করে পন্থ যেভাবে শেষ অবধি থেকে দলকে জিতিয়েছেন। হার্দিকও ভালো প্লেয়ার। ভালো বোলিং করছেন, ব্যাটিং করছেন। আইপিএল জিতে ওঁর আত্নবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছে। ক্যাপ্টেন হিসেবে আইপিএল জেতায়। এটা ভারতের পক্ষেই ভালো।
পাণ্ডিয়ার পারফরম্যান্স
ইংল্যান্ডে সিরিজ নির্ণায়ক ম্যাচে তিনটি মেডেন-সহ ৭ ওভারে মাত্র ২৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন হার্দিক। তারপর ব্যাট হাতে ভারতের জয়ে অবদান রেখে সিরিজ-সেরা হওয়া। টি ২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩৩ বলে ৫১ রান করার পাশাপাশি ৩৩ রানে চার উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হন হার্দিক। আইপিএলের পর হার্দিক তিনটি একদিনের আন্তর্জাতিকে মোট ১০০ রান করেছেন। সর্বাধিক ৭১। গড় ৫০, স্ট্রাইক রেট ১০১.০১। উইকেট পেয়েছেন ৬টি। চলতি বছর টি ২০ আন্তর্জাতিকে ৯টি ম্যাচ খেলেছেন। রান করেছেন ২১৭, সর্বাধিক ৫১। গড় ৪৩.৪০, স্ট্রাইক রেট ১৪৯.৬৫। বল হাতে ৬টি উইকেট পেয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই টি ২০ বিশ্বকাপের আগে হার্দিকের উপস্থিতি ও ধারাবাহিক সাফল্য দলে ভারসাম্য বজায় রাখার পক্ষেও সহায়ক হয়েছে।
শোয়েবের সার্টিফিকেট
হার্দিক পাণ্ডিয়া এভাবে এগোলে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে কপিল দেবের রেকর্ড ভাঙতে পারবেন বলে মন্তব্য করেছেন ওয়াসিম জাফর। হার্দিককে নিয়ে উচ্ছ্বসিত পাকিস্তানের প্রাক্তন স্পিডস্টার শোয়েব আখতার। শোয়েব নিজের ইউটিউব চ্যানেলে বলেন, ফিটনেসের কারণে দীর্ঘ সময় ভারতীয় দলের বাইরে থাকা হার্দিকের পক্ষে ভালো হয়েছে। আগে ক্যাজুয়াল থাকলেও এখন অনেক বেশি ফোকাসড লাগছে, মাঠেও উপভোগ করছেন। হার্দিক বিরল প্রতিভা। দারুণ ফিল্ডার, খুব ভালো ফাস্ট বোলার। ভারতীয় দলের পেস ব্যাটারিকে শক্তিশালী করেছেন। পরের দিকে যখন বোলাররা সুবিধা করতে পারেন না, তখনও হার্দিক সপ্রতিভই থাকেন।
ফোকাসে জোর
শোয়েব আরও বলেন, ভারতের মতে দেশে তারকা হওয়া বড় দায়িত্বের বিষয়। আমি আশা করি, হার্দিক নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ থেকে নিজের খেলায় ফোকাস ধরে রাখতে পারবেন। খ্যাতি, অর্থ, সম্মান সব তিনি পাবেন ফোকাসড থাকলেই। সেই সঙ্গে হার্দিক একজন দারুণ ব্যাটার। বল দেখে তিনি শট খেলে থাকেন, প্রচুর কম্প্যাক্ট শটও মারতে পারেন। ফলে হার্দিস নিশ্চিতভাবেই বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হয়ে উঠতে পারবেন। হার্দিকে ফোকাস ধরে রাখার পরামর্শও বারবার দিয়েছেন শোয়েব।