১৭টি বিজেপি বিরোধী দল আলোচনায় বসে যৌথ বিরোধী প্রার্থী হিসেবে উপরাষ্ট্রপতি পদে বেছে নিয়েছে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা মার্গারেট আলভাকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের কোনও প্রতিনিধি সেই বৈঠকে ছিলেন না। এদিন মনোনয়ন পেশেও তৃণমূল ছিল গরহাজির। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠে পড়েছে তৃণমূলের ভূমিকা নিয়ে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে কার দিকে সমর্থনের হাত বাড়াবেন।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের নাম উপরাষ্ট্রপতি পদে মনোনীত করেছে বিজেপি। তারপর দিনই বিরোধীরা সবাই মার্গারেট আলভাকে বেছে নেন। ১৬ জুলাই এসিপি প্রধান শারদ পাওয়ারের নেতৃত্বে বৈঠকে আলভার নাম ঘোষণা করা হয়। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গরহাজির থাকার জন্য বাহানা দিয়েছিলেন ২১ জুলাইয়ের। ২১ জুলাই তাঁদের কাছে আবেগের নাম। তৃণমূল নেতারা সবাই সেই সমাবেশ নিয়ে ব্যস্ত। তাই যেতে পারেননি বৈঠকে। এদিন মার্গারেট আলভার মনোনয়নেও অনুপস্থিত একই কারণে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি ২১ জুলাইয়ের বৈঠকে জানাবেন তৃণমূলের অবস্থান কী হবে। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল পদে ইস্তফা দিয়ে জগদীপ ধনখড় উপরাষ্ট্রপতি পদে মনোনীত হয়েছেন। তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সরকারের সম্পর্ক ছিল সাপে-নেউলে। কিন্তু রাজ্যপাল দিল্লি উড়ে যাওয়ার আগে পাহাড়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। তারপর দিল্লিতে গিয়ে অমিত শাহ-নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পর তাঁর নাম উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
এই অবস্থায় জল্পনা শুরু হয়েছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি ওই পদে জগদীপ ধনখড়কেই সমর্থন করবেন? কেননা পাহাড়ে মমতা-ধনখড় গোপন বৈঠক তারপর বিরোধী দলগুলির বৈঠকে মমতার দলের প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আবার বিরোধী দলগুলির পক্ষ থেকে যাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে সেই মার্গারেট আলভা মমতার প্রাক্তন সতীর্থ ছিলেন। ফলে অনেকগুলি সমীকরণ ভাবাচ্ছে মমতা কোন দিকে থাকবেন উপরাষ্ট্রপতি পদে।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর খুব ঘনিষ্ঠ নেত্রী ছিলেন মার্গারেট। সেইসময় তিনি পিএমও-র ইনচার্জ ছিলেন। আবার রাজীব গান্ধীর হাত ধরে তখনই উত্থান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মার্গারেট আলভার সঙ্গে বরাবরই সম্পর্ক ভালো ছিল মমতার। পিভি নরসীমা রাওয়ের মন্ত্রিসভায় আবার দুজনেই মন্ত্রী ছিলেন। এই প্রেক্ষিতে কংগ্রেস মনে করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমর্থন করবেন মার্গারেট আলভাকে।
কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, মার্গারেট আলভাকে বিরোধী প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করার আগে কংগ্রেস বা এনসিপি কেউই তৃণমূল কংগ্রেসের মত নেয়নি। সিদ্ধান্ত নিয়ে তারপর জানানো হয়েছিল তাদের। তাই তৃণমূল কংগ্রেস এখন মুখ ফিরিয়ে রেখেছে বিরোধী ১৭ দলের এই সিদ্ধান্ত থেকে। তারপর আবার ভাবছে মার্গারেট আলভা মহিলা ও সংখ্যালঘু-খ্রিস্টান নেত্রী। তিনি আবার সম্প্রতি কংগ্রেসের দুর্নীতি নিয়েও আত্মজীবনীতে সরব হয়েছেন। এমনকী সোনিয়া গান্ধীর সমালোচনাও করেছেন। সমস্ত দিকগুলিই খতিয়ে দেখছেন মমতা।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের সদ্য প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক খুব খারাপ ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু উভয়ের ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুবই সম্মানজনক ছিল বলে দাবি স্বয়ং রাজ্যপালের। তৃণমূল প্রতিনিধি দলের কাছে রাজ্যপাল বলেছিলেন তিনি ব্যক্তিগতভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফ্যান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ১৯৯০-এর দশকে সিপিএমের হাতে মার খেয়েছিলেন তখন সমস্ত বাধা পেরিয়ে দেখতে এসেছিলেন ধনখড়। সিপিএমের আপত্তি সত্ত্বেও তিনি এসেছিলেন ব্যক্তিগত উদ্যোগে। এই সম্পর্কগুলোও এখন সামনে আসছে। ধনখড় টুইট যুদ্ধ চালিয়ে গেলেও সর্বদা বার্তা দিয়েছেন রাজ্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার।