বিটেনের রাজনীতিতে এখন উত্থান-পাতাল পরিস্থিতি! সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে এবার রয়েছেন ভারতীয় বংশদ্ভুত ব্রিটিশ নেতা ঋষি সুনাক (Rishi Sunak)। কনসারভেটিক পার্টির তিনিই অন্যতম মুখ। দৌড়ে যদি তিনি সফল হন তাহলে তিনিই হবে গ্রেট ব্রিটেন প্রধানমন্ত্রী। বরিশ জনসন পদত্যাগ করার পর শূন্য হয়েছে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী পদ।
গত সপ্তাহে কার্যত চাপের মুখেই পদত্যাগ করতে হয় বরিশ জনসনকে। তাঁর একের পর এক সহযোগী পদত্যাগ করেন। আর এরপরেই প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে যান বরিশ।
কাকে নেতা হিসাবে সামনে আনা হবে তা ঠিক করতে রয়েছে সংশ্লিষ্ট দলের একটি কমিটি। তাঁরাই দলের মধ্যে ভোট করানোর ব্যবস্থা করেন। তিনটে ধাপে সেই নির্বাচন হয়। নমিনেশন-এলিমিনেশন এবং ফাইনাল সিলেকশন। আর সেখানে অংশ নেন দলীয় সাংসদরা। যারা নমিনেশন দেবেন তাঁদের প্রত্যেকের অন্তত ২০ জন সাংসদের সমর্থন থাকতে হবে।
যে আটজন নমিনেশন দিতে পেরেছেন তাঁর মধ্যে ব্রিটিশ নেতা ঋষি সুনাক (Rishi Sunak)-এর সমর্থন সবথেকে বেশি। এবার বাছাই পর্ব শুরু হবে। আর তা করবে কমিটি। আজ বুধবার হবে প্রথম পর্যায়ের ভোট।
যে সাংসদ ৩০ জন সাংসদের সমর্থন পাবেন না তাঁকে বাদ দেওয়া হবে। এরপর হবে দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোট। পরপর বাছাই হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত থাকবেন দুজন প্রার্থী। এরপর সর্বাধিক ভোট পাবেন তাঁকেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ঘোষণা করা হবে। পাঁচ সেপ্টেম্বর হবে ফল ঘোষণা। তবে ব্রিটিশ নেতা ঋষি সুনাক (Rishi Sunak) এর ক্ষেত্রে মসনদ দখলের লরাই খুব একটা সহজ হবে না বলেই জানাচ্ছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। মোট পাঁচটি বাঁধা তাঁর সামনে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
কর সংক্রান্ত সমস্যা-
ব্রিটিশ নেতা ঋষি সুনাক (Rishi Sunak) দু'বছর ধরে ইউকে চান্সেলার পদে রয়েছেন। এবং ১ বছর সামলেছেন অন্য পদও। চান্সেলার থাকাকালীন ব্রিটেনে বীমা সংক্রান্ত কর, আয়কর সবই বেড়েছে সে দেশে। তিনি ঘোষণা করেছেন ২০২৩ এর মধ্যে কর্পোরেশন কর অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি হবে। ১৯৭৪ সালের পর তিনিই প্রথম কোনও চান্সেলর যিনি এই কর এভাবে বাড়াচ্ছেন।
ভারতীয় মহিলাকে বিয়ে-
ইনফোসিস কর্তা নারায়ণ মূর্তি'র মেয়ে অক্ষতা'র সঙ্গে বিয়ে হয় ঋষি'র। তাঁর স্ত্রী ভারতে কর দেন। অভিযোগ, ব্রিটিশ নেতা ঋষি সুনাক (Rishi Sunak) স্ত্রী'য়ের কর সংক্রান্ত তথ্য দেখিয়ে নিজে কর দেননি। যত তাঁর জনপ্রিয়তা সামনে এসেছে এমন একের পর এক কেলেঙ্কারি ঋষি'র বিরুদ্ধে সামনে এসেছে। যদিও এই প্রসঙ্গে অক্ষতা জানান, তিনি ভবিষ্যতে ভারতে এসে থাকতে চান। আর সেখানেই প্রশ্ন উঠছে ঋষি'র গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে।
দৈন্যদিন জীবনের খরচ বৃদ্ধি-
বিগত কয়েক বছরে ব্রিটেনে থাকা-খাওয়ার খরচ বেড়েছে অনেকটাই। এর ম্পধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে সে দেশের অর্থনীতিতে। এমনকি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের একটা অভাব দেখা গিয়েছে। গত কয়েকমাসে ব্রিটেনে একাধিকবার আন্দোলন হয়েছে। এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্যে চান্সেলর হিসাবে ঋষি কোনও উদ্যোগ নেননি বলেই অভিযোগ।
ভাইরাল হয়েছে ভিডিও-
বিরোধীরা বারবার অভিযোগ করেছেন ঋষি সাধারণ শ্রমিক শ্রেণির মানুষদের থেকে অনেক দূরে থাকেন। শ্রমিক শ্রেণির মানুষের কষ্ট বোঝেন না। এই সব অভিযোগ রাজনৈতিকমহলে ভেসে বেড়ায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পদপ্রারথি হওয়ার পর অভিযোগের গুরুত্ব বেড়েছে অনেকটাই। ভাইরাল হয়েছে ভিডিও। যেখানে ঋষিকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ''আমার বন্ধুরা উচ্চবিত্ত''। আরও কিছু মন্তব্য করেছিলেন সেখানে যা বিতর্ক তৈরি করেছে। যদিও ভিডিওটি ২১ বছর বয়সে বলেছিলেন বলেই দাবি।
লকডাউনের মধ্যেই পার্টি-
লকডাউনের মধ্যেই নববর্ষের পার্টি করেন বরিশ জনসন। যা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়। আর সেখানেই ছিল ঋষি। ফলে তা নিয়ে একটা বিতর্ক রয়েছেই। আর এই পাঁচ কারণে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে সমস্যা হতে পারে ঋষির। মত বিশ্লেষকদের। তবে শেষ পর্যন্ত কি হয় সেদিকেই নজর সবপক্ষের। এমনটয়াই মনে করা হচ্ছে।