বিধানসভা নির্বাচনের পারদ চড়ছে
চলতি মাসের গোড়ায় হায়দরাবাদে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক ছিল। তার আগে গোটা শহরকে গোলাপি রঙে মুড়ে ফেলে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্যে গেলেও তাঁকে স্বাগত জানাতে যাননি কেসিআর। উল্টে তেলেঙ্গানার সংবাদপত্রগুলিতে তুলে ধরা হয় রাজ্য সরকারের সাফল্যের নানা উল্লেখযোগ্য কাজের খতিয়ান। কেসিআরের পুত্র কেটি রামা রাও টুইটে লেখেন, হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটির এগজিকিউটিভ কাউন্সিল মিটিংয়ে অংশ নিতে যে জুমলাজীবীরা হায়দরাবাদের মতো সুন্দর শহরে এসেছেন তাঁদের স্বাগত জানাই। এখানকার দম বিরিয়ানি ও ইরানি চা খেতে ভুলবেন না যেন। তেলেঙ্গানায় আমাদের সরকার যা করেছে তা আপনারা নিজেদের রাজ্যে করার চেষ্টা করতে পারেন। তবে টিআরএসের পাল্টা গেরুয়া হোর্ডিং, ব্যানারে জোর টক্কর দেয় বিজেপিও।
|
মোদীকে আক্রমণ কেসিআরের
গতকাল চন্দ্রশেখর রাও একেবারে সরাসরি আক্রমণ করে বসলেন নরেন্দ্র মোদীকে। যাকে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের অন্যতম কৌশল বলেই মনে করছেন রাজনীতির বিশ্লেষকরা। রীতিমতো আটঘাঁট বেঁধে কেসিআর বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে তুলে ধরলেন কখনও মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন টাকার দাম পড়ে যাওয়া নিয়ে মোদীর ভাষণ, কিংবা বিজেপিতে যোগদানের পর নেতাদের বাড়িতে কেন্দ্রীয় এজেন্সির হানা কীভাবে বন্ধ হয়েছে তার কিছু উদাহরণ। কেসিআর বলেন, কেন্দ্র থেকে বিজেপি সরকারকে সরিয়ে অ-বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিজেপির বৈঠক অন্তঃসারশূন্য হয়েছে। যে প্রশ্নগুলির উত্তর তিনি চেয়েছিলেন তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি মোদী-সহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। জিডিপি কমে যাওয়া, টাকার দাম পড়ে যাওয়া, পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব বেড়ে চলার মতো ইস্যুগুলিকে টেনে এনে মোদীকে অযোগ্যতম ও দুর্বলতম প্রধানমন্ত্রী বলেও উল্লেখ করেন কেসিআর।
|
বিভিন্ন ইস্যুতে আক্রমণ
কেসিআর বলেন, ইন্দিরা গান্ধী সাহসী ছিলেন বলেই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন। এটা ছিল প্রত্যক্ষ ও ঘোষিত জরুরি অবস্থা। কিন্তু আজ ভারতে অঘোষিত জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে। নূপুর শর্মার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা যেভাবে সরব হয়েছেন তাকে স্বাগত জানিয়ে কেসিআর বলেন, একমাত্র বিচারব্যবস্থাই পারে ষড়যন্ত্রকারী, দৈত্য ও স্বৈরাচারীদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে। মুকুল রায়, হিমন্ত বিশ্বশর্মা, সিএম রমেশ, সুজনা চৌধুরী, ইয়াতালা রাজেন্দরদের ভিডিও দেখিয়ে কেসিআর বলেন, বিজেপিতে যোগদানের পরই এঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিজেপি ওয়াশিং পাউডার নিরমার মতো। কেসিআর আরও বলেন, বিজেপি একনাথ শিণ্ডের মতো নেতা তৈরি করছে। সরকার ফেলে দেওয়ার মতো এত ঔদ্ধত্য কেন? এমন প্রশ্নও তুলেছেন।
খোলা রাখলেন বিকল্পও
তবে এর মধ্যে ট্যুইস্টও রয়েছে। আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা সাংবাদিক বৈঠকে কেসিআর বলেন, মোদীর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত বৈরিতা নেই। তবে তাঁর নীতির বিরোধিতা আমি করছি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই বক্তব্যে আলোকপাত করেছেন। তাঁদের মতে, এর মাধ্যমে কেসিআর ভবিষ্যতের রাজনীতির কথা ভেবে একটা বিকল্প খোলা রেখেছেন। কেসিআরের বক্তব্যের পাল্টা দিতে ছাড়েনি বিজেপি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি বান্দি সঞ্জয় বলেছেন, কেসিআরের দিন ফুরিয়ে আসছে। টিআরএসে অনেক একনাথ শিণ্ডে রয়েছেন। তাঁর পুত্র, কন্যা বা ভাইপো হরিশ রাও বিদ্রোহী হতেই পারেন। যে ভাষায় কথা বলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তা লজ্জাজনক। তিনি বলেছেন, বিজেপির কোনও স্ট্র্যাটেজি নেই। তা যদি হবে তাহলে ১৮টি রাজ্যে বিজেপি সরকার চলছে কীভাবে? প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উনি নিজের তুলনা করছেন! মোদীজি ১৮ ঘণ্টা কাজ করেন, আর কেসিআর তাঁর ফার্মহাউসের বাইরে আসেন না। নিজেকে দেশনেতা তিনি যখন বলেন, তখন লোকে হাসেন।