পৃথিবী আর মঙ্গলের শব্দে বিরাট ফারাক
মঙ্গল পৃথিবীর তুলনায় অনেক ঠান্ডা। তার ফলে শব্দ বা আওয়াজ খুব মৃদু হয়। আর ক্ষীণ স্বরে লালগ্রহে শব্দ শুনতে পাওয়ার আর একটা কারণ কার্বন ডাই অক্সাইডের পাতলা বায়ুমণ্ডল এখানে শব্দ বহন করতে পারে না। মঙ্গলে আপনার পাশে কেউ কথা বললে মনে হবে আপনি অনেক দূর থেকে তা শুনতে পাচ্ছেন।
মঙ্গলে তৈরি করা কিছু সাউন্ড রেকর্ডিং বিশ্লেষণে
মঙ্গলে শব্দ এতটাই ক্ষীণ যে এখানে মাইক্রোফোন ব্যবহার করতে হবে। সামনাসামনি থেকে কথা বললেও মাইক্রোফোন ব্যবহার করা দরকার। মেক্সিকোর লস আলামোস ন্যাশনাল ল্যবরেটরির একজন গ্রহ বিজ্ঞানী মঙ্গল গ্রহ নিয়ে সম্প্রতি একটি নতুন পর্যবেক্ষণ সামনে এনেছে। ওই গ্রহ বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে গবেষক দল লাল গ্রহ বা মঙ্গলে তৈরি করা কিছু সাউন্ড রেকর্ডিং বিশ্লেষণ করেছে প্রথমবারের জন্য।
মঙ্গলগ্রহের ঘটনাপ্রবাহের কোনও শব্দ নেই
ওই রেকর্ডিংগুলো নাসার প্রিজারভেন্স রোভারের একটি মাইক্রোফোনের মধ্যে তোলা হয়েছিল। এবং এই স্পেস রোবটটি ২০২১ সালের ফ্রেব্রুয়ারি থেকে মঙ্গল গ্রহ অনুসন্ধানের কাজ করছে। ওই রেকর্ডিং মঙ্গলগ্রহের ঘটনাপ্রবাহের কোনও শব্দ ছিল না। রোভারটি পাথরের উপর একটি লেজার নিক্ষেপ করার সময় একটা শব্দ পাওয়া গিয়েছিল।
মঙ্গল গ্রহে শব্দের গতি পরিমাপের চেষ্টা
ওই গবেষক দল পাঁচ ঘণ্টা সময় ধরে মঙ্গলের শব্দ রেকর্ডিং করেছে। পাথরের উপর লেজার নিক্ষেপের একটি শব্দ হয়েছে। তা শুনতে লেগেছে বজ্রপাতের মতো। কিন্তু খুবই হাল্কা। তা নিয়েই গবেষণা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। মঙ্গল গ্রহে শব্দের গতি পরিমাপের চেষ্টা করছেন তাঁরা। জানা গিয়েছে মঙ্গলে মানুশের শ্রবণ সীমার মধ্যে রয়েছে সমস্ত শব্দ। উচ্চগ্রামের শব্দগুলি প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ২৫০ মিটার বেগে ভ্রমণ করে। নিম্নগ্রামের শব্দগুলির গতি প্রতি সেকেন্ডে ২৪০ মিটার। মাত্র কয়েক মিটার পর্যন্ত শোনা যেতে পারে।
কীভাবে শব্দতরঙ্গ বিভিন্ন উপকরণের মধ্য দিয়ে যায়
এলেনসবার্গের সেন্ট্রাল ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির একজন পদার্থবিদ এই গবেষণায় জড়িত না থাকলেও তিনি অধ্যয়ন করেন কীভাবে শব্দতরঙ্গ বিভিন্ন উপকরণের মধ্য দিয়ে চলে। যখন একটি শব্দ তরঙ্গ বায়ু বা তরলের মধ্য দিয়ে চলে, তখন তার চারপাশে অণুগুলিতে শক্তি যোগ করে। বাতাস ধীরে ধীরে সেই শক্তিকে চারদিকে নিয়ে যায়। একে শিথিলকরণের প্রভাব বলা হয়।
মঙ্গলের আবহাওয়া সম্পর্কেও জানা যাবে
অবশ্যই মঙ্গলে পাখি নেই। তা বলে এই নয় যে বিজ্ঞানীরা এলিয়েন জগতের শব্দ নিয়ে কোনও গবেষণা করবে না। শব্দের গতি পরিমাপ করা বিজ্ঞানীদের মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডল নিয়ে গবেষণার একটা দুয়ার খুলে দেবে। বায়ুর চাপ, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা সবই শব্দের গতিকে প্রভাবিত করে। এ থেকে মঙ্গলের আবহাওয়া সম্পর্কেও জানা যেতে পারে।