মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির অভাবে হাড়ের ক্ষয়
লেই গ্যাবেল জানিয়েছেন, হাড় মানুষের শরীরে একটি জীবন্ত অঙ্গ। এরা অত্যন্ত সক্রিয়। মানুষের শরীরে হাড় ক্রমাগত নিজেদের পুনরুদ্ধার করে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি হাড়ের ওপর প্রভাব ফেলে। মাধ্যাকর্ষণের অভাবে হাড় তার শক্তি হারায়। তিনি গবেষণায় জানিয়েছেন, বার্ধক্যের ১০ বছরে হাড়ের ক্ষয়, ছয় মাসে মাধ্যকর্ষণের অভাবে হাড়ের ক্ষয়ের সমতুল্য।
মহাকাশচারীদের ওপর গবেষণা
গ্যাবেল ও তাঁর সহকর্মীরা ৭ জন মহাকাশচারীর ওপর এই গবেষণা করেছিলেন। মহাকাশচারীদের মধ্যে চার জন পুরুষ ও ৪৭ বছরের তিনজন মহিলা ছিলেন। প্রত্যেকে চার থেকে সাত মাস মহাকাশে কাটিয়েছেন। এই সাত জন মহাকাশচারীর ওপর গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা উচ্চ রেজোলিউশনের পেরিফেরাল কোয়ান্টিটেটিভ কম্পিউটেড টমোগ্রাফি বা এইচআর-পিকিউসিটি নামক অতি সূক্ষ একটি যন্ত্র হাড়ের ঘনত্ব ও শক্তি পরিমাপের জন্য ব্যবহার করেছিলেন। এই যন্ত্রের সাহায্যে চুলের ঘনত্বের থেকেও সূক্ষ পায়ের হাড় টিবিয়ার ঘনত্ব ও শক্তি গণনা করা যায়। এই যন্ত্রের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা মোট চারটি পর্যায়ে হাড়ের শক্তি ও ঘনত্ব পরিমাপ করেন। মহাকাশচারীদের মহাকাশ অভিযানের ঠিক আগে, মহাকাশ অভিযান থেকে ফিরে আসার পর, তার ছয় মাস পর এবং এক বছর পর হাড়ের ঘনত্ব ও শক্তি পরিমাপ করা হয়।
গবেষণার ফলাফল
হাড়ের ঘনত্ব ও শক্তি পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, কোনও মহাকাশচারী যদি ছয় মাসের কম সময় মহাকাশে থাকেন, তাঁরা এক বছরের মধ্যে হারানো হাড়ের ক্ষয় পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন। কিন্তু যাঁরা মহাকাশে ছয় মাসের বেশি সময় থাকেন, তাঁদের বেশ কিছু হাড় স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বার্ধক্যের ১০ বছরে হাড়ের ক্ষয়ের সমান মহাকাশচারীদের হাড় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তবে এক বছরে ক্ষতিগ্রস্থ হাড়ের অর্ধেক পুনরুদ্ধার হয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ছয় মাসের বেশি মহাকাশে থাকা মহাকাশচারীদের হাতের নীচের দিকের হাড় সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। কারণ হিসেবে গ্যাবল জানিয়েছেন, এই হাড় শরীরে ওজন বহন করে না। তাই মাধ্যাকর্ষণ শক্তির অভাবে সেভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি।
মহাকাশে হাড়ের ক্ষয় রোধের উপায়
ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য এক বিজ্ঞানী স্টিফেন বয়েড জানিয়েছেন, ছয় মাসের বেশি সময় ধরে মহাকাশে থাকা মহাকাশচারীরা ওজন উত্তোলনের মাধ্যমে শরীরে হাড়ের ক্ষয় কিছুটা আটকাতে পারেন। এগুলো শরীরের হাড়কে সামগ্রিক শক্তি দেয়। তিনি বলেছেন, হাড়ের শক্তি ফিরিয়ে আনা অনেকটা সম্ভব। পৃথিবীতে ফিরে এলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে হাড় মোটা হতে শুরু করে। পুরনো শক্তি ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার করে হাড়। কিন্তু ট্রাবেকুলা নামের মইক্রোস্কোপিক টিস্যু একবার নষ্ট হয়ে গেলে, তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়।