রিয়েল বনাম রেবেল সেনা: নয়া রাজনৈতিক সমীকরণের জল্পনা মহারাষ্ট্রে আসন্ন পুরনির্বাচনে

সেনা-দ্বন্দ্বে ছারখার হয়ে গিয়েছে মহারাষ্ট্রে মহাজোটের সরকার। শিবসেনায় আড়াআড়ি বিভাজনে পতন ঘটেছে উদ্ধব ঠাকরে সরকারের, সেই পথ ধরেই রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্রীে হয়েছেন বিদ্রোহী সেনা নেতা একনাশ শিন্ডে। বিজেপিকে সঙ্গে নিয়ে শিন্ডে হয়ে উঠেছেন মহারাষ্ট্রের 'অধীশ্বর'। কিন্তু আসন্ন পুরভোটে কী হবে সমীকরণ, কার দিকে মত দান করবেন মুম্বইবাসী।

মানুষের দরবারেই পরীক্ষা হবে কারা ‘রিয়েল’ সেনা

বৃহন্মুম্বাই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন বা বিএমসি-র নির্বাচন আসন্ন অক্টোবর-নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। এর মধ্যে মহারাষ্ট্র নতুন সরকার তৈরি হয়েছে। শিবসেনার 'রিয়েল' অর্থাৎ প্রকৃত শিবসেনারা সরে গিয়েছে, সরকারে এসে শিবসেনা 'রেবেল' বা বিদ্রোহী সেনা শিবির। নয়া মোড় এসেছে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে। এবার মানুষের দরবারেই পরীক্ষা হবে কারা 'রিয়েল' সেনা।

দুই সেনার লড়াই নাকি পৃথক রাজনৈতিক সমীকরণ

১২-১৫টি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন নির্বাচনের পাশাপাশি জেলা পরিষদ এবং নগর পরিষদ নির্বাচন এখনও অনুষ্ঠিত হয়নি। শিবসেনার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে পুরসভা নির্বাচনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ১৯৯৭ সালে প্রথম পুর-নির্বাচন থেকে বৃহন্মুম্বই পুরসভা সেনার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এবার দুই সেনার লড়াই হয়ে ওঠে নাকি, পৃথক রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হয় এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে, তা-ই দেখার।

এর আগেও জোটসঙ্গীদের মধ্যে পারস্পরিক লড়াই হয়েছে

উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা অতীতে পুরনিগমের নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে ক্ষমতা ভাগ করে নিয়েছিল। ২০১৭ সালে যখন উভয় দল একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল, জয় হাসিল করেছিল শিবসেনা। এছাড়া থানে দ্বিতীয় পুরনিগম হিসাবে এবং কল্যাণ-ডম্বিভালি মহানগর পালিকে তৃতীয় পুরিগমের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

২০০২ সালেও এমন সঙ্কট তৈরি হয়েছিল মহারাষ্ট্রে

সূত্রের খবর মহারাষ্ট্রের নবনিযুক্ত মুখ্যমন্ত্রী তথা শিবসেনাক বিদ্রোহী নেতা একনাথ শিন্ডে থানে এবং কল্যাণ-ডোম্বিভালি মহানগর পালিতে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। তাঁর কারণেই উল্লিখিত দুটি কর্পোরেশনই সেনার দখলে রয়েছে। বিগত নির্বাচনের দিকে তাকালে দেখা যাবে ২০০২ সালেও এমন সঙ্কট তৈরি হয়েছিল।

রাজ ঠাকরে শিবসেনা থেকে সরে এসে নতুন দল করেন

২০০২ সালে যখন নির্বাচন হয়েছিল উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বে, তখন উদ্ধব নিজেই টিকিট বন্টন করেছিলেন। সেই সময় রাজ ঠাকরে শিবসেনা থেকে সরে এসে নতুন দল করেছিলেন। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, উদ্ধব তাঁর সমর্থকদের টিকিট দেবেন না। এ হেন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েও শিবসেনা তার অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে দলের ভিত দুর্বল হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বিএমসিতে বিজেপির শক্তিও বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০১২ সালের মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন নির্বাচন

২০১২ সালের মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন নির্বাচনে শিবসেনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ দেখেছিল কারণ তাদের রাজ ঠাকরের নেতৃত্বাধীন মহারাষ্ট্র নির্বাণ সেনা-র মুখোমুখি হতে হয়েছিল। শিবসেনা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল এবং ক্ষমতায় থাকার জন্য তাদের বিজেপির কাছে যেতে হয়েছিল। শিবসেনা-বিজেপি জোট দেশের সবথেকে ধনী কর্পোরেশন বিএমসি দখলে রেখেছিল। আর থানে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে রাজ্যের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস-এনসিপি জোট।

২০১৭ সালে বিজেপি এবং শিবসেনা সম্মুখ সমর

২০১৭ সালে বিজেপি এবং শিবসেনা কর্পোরেশন স্তরে পৃথকভাবে লড়াই করেছিল। রাজ্য স্তরে তাদের জোট থাকা সত্ত্বেও পুরভোটে এককভাবে লড়ে বিজেপি দেখেছিল তারা এ রাজ্যেও হারাতে পারে। বিজেপি ৩২ থেকে বেড়ে ৮২ হয়েছিল। তবে বিজেপির চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও শিবসেনা ৮৪টি ওয়ার্ডে জিততে সক্ষম হয়।

বড় বাঁকের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেনার ভবিষ্যৎ

এখনও এটা বিশ্বাস করা হয় যে, শিবসেনার মুম্বই ইউনিট সবথেকে শক্তিশালী। কিন্তু সেনায় এখন বড় ধাক্কা এসেছে। শিবসেনা আড়াআড়ি ভেঙে গিয়েছে। কে কার অনুগত, সেই লড়াইয়ে বড় বাঁকের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেনার ভবিষ্যৎ। দাদর, মাহিম, কুরলা, চান্দিওয়ালির বিধায়করা শিবসেনা শিবির ছেড়ে বিদ্রোহী সেনা শিবিরে যোগ দিয়েছেন। তাঁরা উদ্ধব ঠাকরেকে ছেড়ে একনাথ শিন্ডের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। সুতরাং আসন্ন ভোটে সেনার কাছে বড় ধাক্কা হতে পারে এই ভাঙন।

শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরের সামনে সামনে চ্যালেঞ্জ

শিবসেনা যদি ৯০টিরও কম আসন পায় তবে উদ্ধব ঠাকরের পক্ষে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনগুলিতে ক্ষমতা ধরে রাখা সত্যিই কঠিন হবে। মুসলিম ভোটাররা এবার শিবসেনাকে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শিবসেনার পরাজয়ের হাত থেকে বাঁচতে বা মুখরক্ষায় এটি একটি সুযোগ হতে পারে। অন্যথায় আগামী দিনে দলের ভিত্তি খারাপ থেকে খারাপতর হতে থাকবে।

বিজেপির সমর্থনে আসরে নামতে পারেন শিন্ডে

শিবসেনার জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হল থানে এবং কল্যাণ-ডম্বিভলি পৌর কর্পোরেশন অঞ্চলগুলিকে বাঁচানো। বিদ্রোহী শিবসেনা শিবির প্রধান একনাথ শিন্ডে উভয় অঞ্চলেই আধিপত্য বিস্তার করছেন বলে জানা গেছে। থানে এবং কল্যাণ অঞ্চলে অনেক কর্পোরেটর এবং দলীয় কর্মী শিন্ডের অনুগামী। শিন্ডে শিবির ইতিমধ্যেই মূল সেনা শিবিরে ধাক্কা দিয়েছে এবং রাজনৈতিক বিপর্যয়ের সমানে দাঁড় করিয়েছে উদ্ধব ঠাকরেকে। আসন্ন অক্টোবর-নভেম্বর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজেপির সমর্থনে আসরে নামতে পারেন শিন্ডে। একইসঙ্গে কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় শিবসেনার প্রতীক নিয়েও লড়াই শুরু হবে।

বিজেপির টার্গেটে কোন কোন রাজ্য, মমতার বন্ধু-রাজ্য থেকে বিজয়-শপথ অমিত শাহেরবিজেপির টার্গেটে কোন কোন রাজ্য, মমতার বন্ধু-রাজ্য থেকে বিজয়-শপথ অমিত শাহের

More MAHARASHTRA POLITICAL CRISIS News  

Read more about:
English summary
Maharashtra politics stands in trouble before upcoming corporation elections due to Real versus Rebel Sena
Story first published: Sunday, July 3, 2022, 19:32 [IST]