ঋদ্ধিকে ধরে রাখতে ব্যর্থ সিএবি
সিএবির তরফে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ঋদ্ধিমান সাহা সিএবিতে এসে সভাপতি অভিষেক ডালমিয়ার কাছে রাজ্য ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থার নো অবজেকশন সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করেন। তাঁর আবেদনের প্রেক্ষিতে অন্য রাজ্যের হয়ে খেলার জন্য এনওসি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে ঋদ্ধিমানের জন্য শুভেচ্ছাও জানানো হয়েছে সিএবির তরফে। তবে সিএবি সূত্রে জানা গিয়েছে, ঋদ্ধিমানকে এদিনও বাংলায় থেকে যাওয়ার জন্য বোঝানোর চেষ্টা করেন অভিষেক ও স্নেহাশিস। কিন্তু তাতে বরফ গলেনি।
১৫ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন
২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলার হয়ে একদিনের ম্যাচে অভিষেক হয়েছিল ঋদ্ধিমানের। টি ২০ অভিষেক ওই বছরই এপ্রিলে। রঞ্জি অভিষেক ২০০৭ সালের নভেম্বরে। ফলে ক্রিকেটার হিসেবে বাংলা দলের সঙ্গে দীর্ঘ ১৫ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন হলো আজ। দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের দল থেকে বাদ পড়েন ঋদ্ধিমান। তারপরই তিনি বলেছিলেন, বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের আশ্বাস পাওয়ার পরেও দল থেকে বাদ পড়ে তিনি অবাক। যদিও ভারতের হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড় দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেই ঋদ্ধিকে বলে দেন তাঁকে টেস্ট দলের জন্য আর ভাবা হচ্ছে না। সৌরভের সঙ্গে কথোপকথন প্রকাশ্যে আনায় সিএবি কর্তারা ঋদ্ধিমানের সমালোচনা করেন। তবে ঋদ্ধি সবচেয়ে বেশি আহত হন যুগ্ম সচিব দেবব্রত দাস তাঁর দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায়।
অভিমান ঋদ্ধির
ঋদ্ধিমান ভারতীয় টেস্ট দল থেকে বাদ পড়ার পর সিএবিকে জানিয়েছিলেন, তিনি এ বছর রঞ্জি খেলবেন না। পারিবারিক কারণেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানান। তারপরই দেবব্রত দাস ঋদ্ধিমানকে নিয়ে যে মন্তব্য করেন তার নিন্দা করেছেন অনেকেই। সাংবাদিক বোরিয়া মজুমদার ঋদ্ধিমানকে হুমকি দিলেও কোনও অজ্ঞাত কারণে ঋদ্ধির পাশে প্রকাশ্যে দাঁড়ায়নি সিএবি। এরপর আইপিএলে চ্যাম্পিয়ন গুজরাত টাইটান্সের হয়ে দুরন্ত পারফরম্যান্স উপহার দেন ঋদ্ধিমান। বাংলার হয়ে খেলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ঋদ্ধিমান দাবি করেছিলেন দেবব্রত দাসের নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা। সিএবি সভাপতি অভিষেক ডালমিয়া অবশ্য দেবব্রতর বক্তব্যের দায় নিতে চাননি। এরপর রঞ্জি কোয়ার্টার ফাইনালে ঋদ্ধিমানকে বাংলা দলে রাখা হয়। কিন্তু ঋদ্ধির অভিযোগ ছিল, তাঁকে না জানিয়েই এই সিদ্ধান্ত। এমনকী দল ঘোষণার আগে গুজরাত টাইটান্স দলে থাকা মহম্মদ শামির সঙ্গে কথা বললেও ঋদ্ধির সঙ্গে কথা বলেনি সিএবি। তিনি বাংলা দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে দেন। বারবার জানিয়ে দেন, বাংলার হয়ে আর খেলবেন না। এদিনও তিনি বলেন, কোনও ইগোর কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়। একটি বিশেষ কারণে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। অর্থাৎ নাম না করে নিশানা দেবব্রতকেই। ভবিষ্যতে কোনও প্রয়োজনে বাংলাকে সহযোগিতা করতেও প্রস্তুত। ঋদ্ধি এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এই পরিস্থিতি নিয়ে বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে তাঁর কথা হয়নি।
প্রশ্নের মুখে সিএবির ভূমিকা
বাংলার সঙ্গে ১৫ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর অভিমানী ঋদ্ধি যে আজ অনেক খারাপ লাগা নিয়েই সিএবি ছাড়লেন তা বোঝা গিয়েছে। তবে সাংবাদিকদের সামনে ঋদ্ধি স্বভাবসিদ্ধভাবেই তোপ দাগেননি। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, বছরখানেক তিনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলতে চান। আগামী মরশুমে কোন দলে খেলবেন তা এদিন খোলসা করেননি। ক্রিকেট কেরিয়ার শেষের পর তিনি কোচিং বা মেন্টরের ভূমিকাও পালন করবেন। অর্থাৎ যুক্ত থাকবেন ক্রিকেটের সঙ্গেই। বাংলার ক্রিকেট মহল মনে করছে, দেবব্রত দাসের বক্তব্যের বিরুদ্ধে সিএবি কোনও ব্যবস্থা নিলে হয়তো ধরে রাখা যেত ঋদ্ধিমানকে। অন্তত সিএবি আরও আন্তরিকতা দেখিয়ে সুষ্ঠুভাবে গোটা বিষয়টি সামাল দিতে পারতো। কিন্তু অভিষেক ডালমিয়ার নেতৃত্বাধীন সিএবি তা করতে যে পারেনি তা স্পষ্ট। কোন কারণে এমনটা হলো সেটাও অনেকেই বুঝছেন, কিন্তু প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। তাতেই প্রশ্ন থাকছে, সিএবির কাছে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারদের স্বার্থ নাকি কর্তারাই ক্রিকেটারদের ঊর্ধ্বে? উল্লেখ্য, ঋদ্ধিমান সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করা দেবব্রত দাসকে পুরস্কারস্বরূপ ভারতীয় দলের প্রশাসনিক ম্যানেজার করে ইংল্যান্ডে পাঠানো হয়েছে।