রাস্তাগুলিতে ছেয়ে গিয়েছে বিজেপির হোর্ডিং
শনিবার ২ জুলাই থেকে হায়দরাবাদে দুই দিনের জাতীয় কার্যনির্বাহী সমিতির সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের নেতৃত্বাধীন টিআরএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বিজেপি ২০২৩-এ তেলেঙ্গানা দখল করতে চাইছে। হায়দরাবাদের রাস্তাগুলিতে ছেয়ে গিয়েছে বিজেপির হোর্ডিং। গেরুয়া পতাকায় ঢেকেছে হায়দরাবাদ শহর।
মোদীকে বিঁধে পাল্টা হোর্ডিং টিআরএসের
টিআরএসও বর্তমানে প্রবল বিজেপি বিরোধী হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আক্রমণ করে একাধিক হোর্ডিং রয়েছে রাস্তায়। মোদী-নাড্ডাসহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব দুদিনের বৈঠকে শহরে থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে যাবেন এবং বিমানবন্দরে ফিরবেন। তাই কৌশলগতভাবে এগুলো স্থাপন করা হয়েছে। তিনটি কৃষি বিল, নোট বাতিল-সহ একাধিক ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে বিঁধে পাল্টা হোর্ডিং দিয়েছে টিআরএস।
তেলেঙ্গানাকে টার্গেট করে অনন্য প্রস্তুতি
বৈঠকের একদিন আগে দলের সভাপতি জেপি নাড্ডা রোড শো করেছিলেন। রোড শো-এর জন্য বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আসার পথে নাড্ডা বলেন, "আমাদের নেতারা মূল্যায়ন করছেন এবং ১১৯টি বিধানসভা কেন্দ্রে কর্মী ও ভোটারদের একত্রিত করছেন। বৈঠকের তিন দিন আগে দলের ১১৯ জন নেতাকে ১১৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের বিবরণ সম্বলিত তথ্য পরিবেশনের ভার দেওয়া হয়েছে।
বাড়ি বাড়ি জনসংযোগ লক্ষ্যপূরণে
জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের আগে দলের সাংগঠনিক মূল্যায়ন এবং কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। প্রতিটি নেতা বুথ স্তর থেকে শক্তি কেন্দ্র, মোর্চা এবং বিধানসভায় দলীয় কর্মীদের সঙ্গে দেখা করেছেন, কথা বলেছেন। তাঁরা প্রতিটি কর্মীর বাড়ি গিয়ে জনসংযোগ করেছেন। কেউ কেউ এসসি মোর্চা কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে খেয়েছেন, কেউ এসটি বা ওবিসি ক্যাডারের বাড়িতে গিয়েছেন।
প্রতিটি বুথ ধরে ধরে মূল্যায়নে জোর
বিজেপি নেতারা কর্মীদের দিল্লি এবং দলের রাজনৈতিক ধারার কাছাকাছি আনতে কাজ করছেন নিরন্তরভাবে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর মন কি বাত শুনতে বলা হয়েছিল তাঁদরে। একা নয়, ব্লক স্তরের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বুথ-স্তরের সংগঠনগুলিকে শক্তিশালী করার উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা চালানোর বার্তা দেওয়া হয়েছিল। প্রতিটি বুথ ধরে ধরে মূল্যায়নে জোর দেওয়া হয়েছিল।
বিজেপি কেন গতবার হেরেছে, জানতে রিপোর্ট
বিজেপি কেন গতবার হেরেছে, তার কারণ সম্পর্কে নোট নেওয়া হয়েছিল। প্রতিটি নেতাকে নির্বাচনী এলাকায় পাঠানো হয়েছিল সে সম্পর্কে জানতে। সেইসঙ্গে বিজেপি নেতাদের জানাতে বলা হয়েছিল- মোদী সরকার কী কী সুবিধা প্রদান করেছে। আর টিআরএস যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তার কী কী প্রদান করা হয়নি। বিজেপির স্থানীয় নেতারা এই সংক্রান্ত রিপোর্ট-সহ নির্বাচনী এলাকা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পরিবেশন করবেন এই সভায়।
তেলেঙ্গানায় পদ্ম ফোটানো নিশ্চিত করতে
বিজেপি এবার জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের জন্য তেলেঙ্গানাকে কেন বেছে নিল? তেলেঙ্গানায় বিজেপির সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ব্যতিক্রমী। গেরুয়া শিবির এবার তেলেঙ্গানায় পদ্ম ফোটানো নিশ্চিত করার পরিকল্পনা করছে। বিজেপি তেলেঙ্গানার মানুষের কাছে কেন্দ্রীয় স্কিমগুলি উপস্থাপন করতে চাইছে। একইসঙ্গে বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনের দৌড়ে একটি ভবিষ্যৎ কর্মসূচি প্রস্তুত করতে চাইছে।
তেলেঙ্গানাকে টার্গেট, বিজেপির পরিকল্পনা
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এ রাজ্যের ১৭টি আসনের মধ্যে চারটি জিতেছিল। এই অবস্থায় আরও সুসংহত সংগঠন তৈরি করতে চাইছে বিজেপি। বিজেপি একসঙ্গে দুটি সংকেত পাঠাতে চাইছে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির সুপ্রিমো কেসিআরকে। বিজেপি তাদের লড়াইয়ের অবস্থান স্পষ্ট করে দিতে চাইছে। এক, তেলেঙ্গানায় হিন্দুত্বের ভাবাবেগ। দুই, টিআরএস-এর মতো আঞ্চলিক দলের নেতাদের মধ্যে প্রচলিত বংশবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে তারা লড়তে চাইছে।
কেসিআরের দুর্বলতা ও দুর্নীতিকে টার্গেট বিজেপির
বিজেপি এই যুদ্ধে হাতিয়ার করতে চাইছে মুখ্যমন্ত্রী কেসিআর-এর দুর্বলতা ও দুর্নীতিকে। মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন হিসাবে তাঁর প্রাসাদোপম বাংলো, রাজ্য সচিবালয় ভেঙে দেওয়া এবং একটি পরিবারের হাতে সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার মতো সিদ্ধান্তগুলিকে হাতিয়ার করে এগোতে চাইছে বিজেপি। বিজেপির কথায়, "তেলেঙ্গানায় কেসিআরের পরিবার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। তার ছেলে কেটিআর এবং মেয়ে হল সেই গেটওয়ে যার মধ্য দিয়ে প্রতিটি ফাইল এবং সিদ্ধান্ত পাস করতে হয়। কোনও বিধায়ক বা মন্ত্রী এখানে প্রাসঙ্গিক নন। তারপর তেলেঙ্গানায় প্রবেশ করা দুর্নীতি যা জনগণকে প্রভাবিত করছে।"
থ্রি-এন প্রতিশ্রুতি নিয়ে কেসিআরকে কটাক্ষ
তারপর বিজেপি টার্গেট করছে কেসিআর সরকারের অপূর্ণ প্রতিশ্রুতি। থ্রি-এন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন কেসিআর। পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্যের জন্য আন্দোলনের সময়, কেসিআর স্লোগান তুলেছিলেন 'নিধুলু-নীলু-নিয়ামাকালু' অর্থাৎ তহবিল, জল এবং চাকরি। এ প্রসঙ্গেই গেরুয়া শিবির কেসিআরকে নিশানা করার পরিকল্পনা করেছে।
বিজেপির জন্য কঠিন লড়াই
২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, অনেক বিজেপি প্রার্থী জামানত হারিয়েছে এবং দলটি শুধুমাত্র একটি আসন জিততে সক্ষম হয়েছিল। পরের বছর লোকসভা নির্বাচনে ১৭টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে চারটিতে জয়লাভ করে বিজেপি তেলেঙ্গানায় শক্তিশালী চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। বিজেপির সবচেয়ে বড় লাভ হয়েছে নিজামবাদ জেলা থেকে। যেখানে কেসিআরের মেয়ে তথা বর্তমান সাংসদ কে কবিতা অরবিন্দ ধর্মপুরীর কাছে হেরেছেন। সাম্প্রতিক উপনির্বাচনেও বিজেপি ভালো ফল করেছে।