|
তারকা ছাড়াও সাফল্য
মধ্যপ্রদেশের প্রথমবার রঞ্জি জয় দেখিয়ে দিল সাফল্য পেতে তারকাদের প্রয়োজন পড়ে না। ভেঙ্কটেশ আইয়ার, আবেশ খানরা ছিলেন না। এবারের আইপিএলে ক্রিকেটপ্রেমীদের নজরে পড়া রজত পাটীদার, কুমার কার্তিকেয় কোচের আস্থার ভরসা দিলেন। নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিলেন ছোটবেলায় চোখের দৃষ্টির সমস্যায় ভোগা যশ দুবে, গৌরব যাদবের মতো ক্রিকেটাররা। রঞ্জি ট্রফি যখন শুরু হয় তখন মধ্যপ্রদেশ রাজ্য বা দলটাই ছিল না। ছিল হোলকার। যেখান থেকে ভারতীয় ক্রিকেট পেয়েছে মুস্তাক আলি, ভারতীয় দলের প্রথম অধিনায়ক সি কে নাইডুকে। পরে মধ্যপ্রদেশ উপহার দিয়েছে নরেন্দ্র হিরওয়ানি, রাজেশ চৌহান, অময় খুরাশিয়ার মতো ক্রিকেটারদের। ১৯৯০, ২০০০-এর দশকে নামডাক হয়েছিল দেবেন্দ্র বুন্দেলারও। কিন্তু মধ্যপ্রদেশও রঞ্জি জিততে পারে কেউই তা মনে করতেন না। ২৩ বছর আগে এই চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতেরই নেতৃত্বে মধ্যপ্রদেশ ফাইনালে কর্নাটকের কাছে পরাস্ত হয়েছিল। বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামীতে মধ্যপ্রদেশের সেই অপ্রাপ্তি কোচ হিসেবে মেটাতে সক্ষম হলেন পণ্ডিত। তাঁর চোখে আজ স্বাভাবিকভাবেই আনন্দাশ্রু।
মিটল অপ্রাপ্তি
১৯৯৮-৯৯ মরশুমে ২৪৭ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে চিন্নাস্বামীতে রঞ্জি ফাইনালে কর্নাটকের কাছে হেরেছিল পণ্ডিতের নেতৃত্বাধীন মধ্যপ্রদেশ। আজ দল জিততেই কোচই সবচেয়ে বেশি কেঁদেছেন বলে জানাচ্ছেন চ্যাম্পিয়ন দলের ক্রিকেটাররা। চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত বলেন, এটা এক দারুণ স্মৃতি হয়ে রইল। ২৩ বছর আগে এই মাঠ থেকেই বেরিয়ে গিয়েছিলাম খেতাব জিততে না পেরে। ঈশ্বরের আশীর্বাদে সেখানেই ফিরে আসতে পারলাম। অধিনায়ক হিসেবে আমি যা করতে পারিনি, তা করে দেখাল আদিত্য শ্রীবাস্তবের দল। মধ্যপ্রদেশের দায়িত্ব নেওয়া প্রসঙ্গে পণ্ডিত বলেন, আমি সব সময় চ্যালেঞ্জিং কাজ নিতে ভালোবাসি। এই দলে অনেক তরুণ ক্রিকেটার রয়েছেন। এই রাজ্যে ক্রিকেটীয় সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানোই লক্ষ্য। আমি এখানে খেলেছি, জানি এখানকার সংস্কৃতি।
পণ্ডিতের লক্ষ্য
ভারতীয় ক্রিকেটের দ্রোণাচার্য বলে অভিহিত পণ্ডিত বলেন, মধ্যপ্রদেশের কোচ হওয়ার প্রস্তাব যখন পাই, তখন তা হাতছাড়া করতে চাইনি। অনেক জায়গায় প্রতিভা থাকলেও ক্রিকেটীয় সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানো জরুরি হয়ে পড়ে। আদিত্য অসাধারণ অধিনায়ক। যা পরিকল্পনা হয়, তা হুবহু তিনি মাঠে বাস্তবায়িত করে থাকেন। ব্যাটিং ফর্ম প্রত্যাশিত মানের না থাকলেও আদিত্য দারুণ অধিনায়কত্ব করেছেন। সব সময়ই তাঁর প্রতি আমার আস্থা রয়েছে। মধ্যপ্রদেশকে অধিনায়ক হিসেবে যা এনে দিতে পারিনি, কোচ হিসেবে সেই ট্রফি এনে দিতে পেরেই ভালো লাগছে।
কোচকে কৃতিত্ব
মধ্যপ্রদেশের অধিনায়ক আদিত্য শ্রীবাস্তব বলেন, চন্দ্রকান্ত স্যরের কাঠ থেকে অনেক কিছু শিখছি। এটাই অব্যাহত রাখতে চাই। আমাদের দল খুবই ভালো। ঈশ্বর পাণ্ডে দলে থাকলেও চোটের কারণে তাঁকে পুরো মরশুম পাইনি। তারপরও রঞ্জি জিততে পেরে আমরা সকলেই খুশি, সকলেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছি। ম্যাচের সেরা শুভম শর্মা বলেন, প্রথম ইনিংসে শতরান করে ফেরার পর কোচ আমাকে বলেছিলেন বাকি সময়টা হাল্কাভাবে না নিতে। আজ ফিল্ডিংয়ের সময় কাঁধে চোট পেয়েছিলাম। ব্যথা কমানোর ওষুধ খেয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা ফাইনালেই নিজের সেরা ইনিংসটা খেলতে পেরেছি। এবারের রঞ্জি ট্রফির সেরা ক্রিকেটার হয়েছেন মুম্বইয়ের সরফরাজ খান।
ঈর্ষণীয় নজির
চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতকে অনেকেই চান্দু স্যর বলে অভিহিত করেন। ভারতীয় দলের প্রাক্তন ও বর্তমান তারকারা কুর্নিশ জানাচ্ছেন ঘরোয়া ক্রিকেটের সেরা কোচকে। কোচ হিসেবে চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত ৬ বার রঞ্জি জিতলেন। ২০০৩ ও ২০০৪ সালে মুম্বই তাঁর কোচিংয়ে রঞ্জি জিতেছিল। ২০১৬ সালেও মুম্বই পণ্ডিতের কোচিংয়ে রঞ্জি জেতে। ২০১৮ সালে বিদর্ভ তাঁর কোচিংয়েই প্রথম রঞ্জি জেতে এবং পরের বছর খেতাব ধরে রাখে। এবার মধ্যপ্রদেশও প্রথমবার রঞ্জি জিতল পণ্ডিতের কোচিংয়েই।