ক্রিকেট সার্কিটের অন্যতম বরেণ্য এবং সম্মানীয় আম্পায়ার ছিলেন তিনি। আলিম ডারের পর পাকিস্তানের কোনও আম্পায়ার যিনি সমর্থকদের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি আসাদ রউফ। ২০০০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আম্পায়ারিং-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আসাদ। মোট ১৭০টি ম্যাচে তিনি আম্পায়ারিং করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ৪৯টি টেস্ট, ৯৮টি ওডিআই এবং ২৩টি আন্তর্জাতিক টি-২০। আইসিসি'র এলিট প্যানেল আম্পায়ারদের অন্যতম ছিলেন রউফ।
ক্রিকেট সার্কিটে নিজের আম্পায়ারিং-এর মধ্যে দিয়ে জায়গা করে নেওয়া আসাদের ২০২২-এ দাঁড়িয়ে ক্রিকেটের প্রতি কোনও আগ্রহ নেই। বর্তমানে লাহোরে লন্ডা বাজারে নিজের জামা-কাপোড়, জুতোর একটি দোকান চালান তিনি। পাকিস্তানের একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি তাঁর কাছে উপস্থিত হয়েছিল বর্তমানে তিনি কেমন আছে, কী করছেন তা দেখতে এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য। ক্রিকেট ছেড়ে কেমন রয়েছেন, এখন আর খেলা দেখেন কি না, এই সব প্রশ্নের উত্তরই তারা তুলে আনে। ক্রিকেট এখনও দেখা হয় কি না, সেই প্রসঙ্গে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে রউফ বলেন, "না, আমি নিজেই যখন পুরো জীবন খেলিয়ে কাটিয়ে দিলাম তখন এখন আর কাকে দেখার আছে। ২০১৩ সালের পর ক্রিকেটের সঙ্গে আমার আর কোনও যোগাযোগ নেই। কারণ আমি যে কাজটা ত্যাগ করি সেটা পুরোপুরি ভাবেই ত্যাগ করি।"
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুনামের সঙ্গে আম্পায়ারিং করালেও আইপিএল-এ আম্পায়ারিং করানোর সময়ে বিতর্কের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে তাঁর নাম। ২০১৬ সালে বিসিসিআই পাঁচ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করে রউফের উপর। ২০১৩ সালে আইপিএল-এর সময়ে রউফের বিরুদ্ধে ম্যাচ ফিক্সিং-এ জড়িয়ে থাকার অভিযোগ ওঠে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল এক জন বুকির থেকে তিনি মূল্যবান উপহার গ্রহণ করেছিলেন। সেই সময়েও নিজেকে নির্দোষ জানিয়েছিলেন রউফ। আজও ৬৬- বছর বয়সী আম্পায়ার শোনালেন একই কথা-'কোনও ভুল আমি করিনি।' তিনি বলেন, "এই সবের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্কই ছিল না। অভিযোগ ওদেরই (বিসিসিআই) তরফ থেকে এসেছিলেন আর ওরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল। পরবর্তী সময়ে এই বিষয়গুলি ছাড়া আমার সেরা সময়টা আমি কাটিয়েছি আইপিএল-এ।"
২০১২ সালেও বিতর্কিত অভিযোগে জর্জরিত হতে হয়েছিল রউফকে। আইসিসি'র একটা সময়ে অন্যতম সেরা আম্পায়ারের বিরুদ্ধে যৌন শোষণের অভিযোগ তুলেছিলেন মুম্বইয়ের এক মডেল। ওই মডেল দাবি করেছিলেন, রউফের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরেই সম্পর্কে যুক্ত তিনি এবং রউফ তাঁকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে সেই প্রতিশ্রুতি থেকে তিনি সরে আসেন। সেই সময়ে রউফ জানিয়েছিলেন তিনি নির্দোষ এবং সেই একই কথা দশ বছর পরেও বললেন রউফ। তিনি বলেন, "মহিসা সংক্রান্ত বিষয় যখন ঘটেছিল তার পরবর্তী বছরও তো আমি আইপিএল করাতে গিয়েছিলাম।"
লাহোরের লন্ডা বাজার বিখ্যাত সস্তায় জামা-কাপড়ের, জুতো এবং অন্যান্য দ্রব্য পাওয়ার জন্য। এই বাজারেই নিজের দোকান রয়েছে রউফের। তিনি বলেন, "ভাই, এটা আমার কাজ নয়, এখানে আমার স্টাফদের রুজি-রুটি, আমি ওদের জন্যই কাজ করি।"
ক্রিকেটের অন্যতম সেরা আম্পায়ার আজ নিজের দোকান খুলে ব্যাবসা করছেন। কোনও আক্ষেপ কি রয়েছে। এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "আমার কোনও অনুশোচনা নেই। আমি অনেক টাকা দেখেছি এবং পৃথিবীটাকে দেখেছি। আমার এক ছেলে বিশেষ ভাবে সক্ষম। অপরটা সদ্য আমেরিকা থেকে স্নাতক হয়ে ফিরে এসেছে। আমি দিনে পাঁচ বার নামাজ আদা করি। আমার স্ত্রীও দৈনিক পাঁচ বার নামাজ আদা করেন। আমার স্বভাবই হল, আমি যেটা শুরু করি সেটার শীর্ষে পৌঁছনোর চেষ্টা করি। আমি ক্রিকেট খেলেছি এবং তার শীর্ষে পৌঁছেছি, আমি যখন আম্পায়ারিং শুরু করি তখন নিজেকে বলেছিলাম, এরও শীর্ষে যাওয়ার চেষ্টা করব।"