মঙ্গলবার বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা তাঁদের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে আদিবাসী নেত্রী দ্রৌপদী মুর্মুর নাম ঘোষণা করেন। বিরোধীরা তাঁদের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে যশবন্ত সিনহার নাম ঘোষণার কয়েকঘণ্টার মধ্যেই বিজেপি এই ঘোষণা করে। এই প্রসঙ্গে জেপি নাড্ডা বলেন, ২০ জনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে তাঁরা দ্রৌপদী নাম ঘোষণা করেছিলেন। এর কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছিলেন, দ্রৌপদী মুর্মু একজন আদিবাসী নেত্রী। ২০১৭ সালে বিজেপি রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে একইভাবে রামনাথ কোবিন্দকে বেছে নিয়েছিল।
রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, ভোটব্যাঙ্কের দিকে তাকিয়েই বিজেপি ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন রাজ্যপাল দ্রৌপদী মুর্মুকে বেছে নিয়েছেন। ওড়িশার যে অঞ্চলের বাসিন্দা দ্রৌপদী মুর্মু, সেখানকার মোট জনসংখ্যার ২৩ শতাংশ আদিবাসী সম্প্রদায় ভুক্ত। আবার ঝাড়খণ্ড, যেখানে দ্রৌপদী মুর্মু রাজ্যপাল ছিলেন, সেথানকার জনসংখ্যার ২৬ শতাংশ আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত।
অন্যদিকে, আগামী বছর ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন হবে। পরিসংখ্যান বলছে ছত্তিশগড়ে জনসংখ্যার প্রায় ৩৬ শতাংশ, মধ্যপ্রদেশে ১৭ শতাংশ, রাজস্থানে ১৪ শতাংশ মানুষ আদিবাসী সম্প্রদায়ের। আদিবাসী সম্প্রদায়ের আবেগ উস্কে দিতেই বিজেপি দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছেন।
চলতি বছরেই গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। গুজরাটের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষ আদিবাসী সম্প্রদায়ের। গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচনে ১৮২টি আসন রয়েছে। তার মধ্যে ২৭টি উপজাতি সম্প্রদায়ের প্রার্থীদের সংরক্ষিত। গুজরাটে ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ২৭টি সংরক্ষিত আসনের মধ্যে কংগ্রেস ১৫টিতে জয় লাভ করেছিল।
বিজেপি ৯টি আসন পেয়েছিল। ভিল আদিবাসী সম্প্রদায়ের নেতা ভাসাবার নেতৃত্বাধীন একটি রাজনৈতিক দল গুজরাটে সক্রিয়। তারা দুটি আসনে জয়লাভ করেছিল। বর্তমানে ভাসাবা আরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির সঙ্গে জোট বেঁধেছে। অন্যদিকে, বিজেপি চলতি বছর বিধানসভা নির্বাচনে ওই ২৭টি সংরক্ষিত আসনে ভালো ফল পেতে বদ্ধপরিকর।
সম্প্রতি বিজেপি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে নিজেদের গ্রহণ যোগ্যতা বাড়াতে একাধিক পদক্ষেপ করেছে। চলতি বছর ৬ এপ্রিল বিজেপির প্রতিষ্ঠা দিবসে আদিবাসীদের প্রসঙ্গ তুলে আনেন। তিনি বলেন, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আদিবাসীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু বরাবর আদিবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামীরা অবেহলিত হয়েছেন।
তাঁরা তাঁদের প্রাপ্য সম্মান পাননি বলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মন্তব্য করেন। তিনি আদিবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জাদুঘর উদ্বোধন করেন। পাশাপাশি আদিবাসী সম্প্রদায়ের কথা মাথায় রেখে একাধিক জনকল্যান মূলক প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। বিরসা মুণ্ডার মতো আদিবাসী নেতাদের সম্মান দিয়ে তিনি তাঁদের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করেন। ২০২১ সালের নভেম্বরে তিনি মধ্যপ্রদেশের ভোপালে বিরসা মুণ্ডার জন্মবার্ষিকীতে আদিবাসী গৌরব দিবস পালন করেন।
বরাবরই রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী নির্বাচনে চমকে দিয়েছে বিজেপি , নয়া সংযোজন দ্রৌপদী মুর্মু
মধ্যপ্রদেশের বিধানসভায় তপসিলি উপজাতিদের জন্য ৪৭টি আসন সংরক্ষিত। ২০১৮ সালে মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস সেখানে ৩১টি আসনে জয়লাভ করেছিল। বিজেপি মাত্র ১৬টি আসনে জয়লাভ করে। আদিবাসীদের শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে আরএসএস বনবাসী কল্যানকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিল।
কিন্তু আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা ছিল নজরকাড়া। সেখানে বিজেপির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো একসময় অসম্ভব মনে হয়েছিল। কিন্তু বিজেপি ধীরে ধীরে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। সেখান থেকে দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করে বিজেপি আদিবাসীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে।