বয়স মাত্র ১৩,এর মধ্যেই সে ভারতকে এনে দিয়েছে পদক। তাও একটা নয় বিশ্ব মঞ্চের দু, দুটো পদক ছোট্ট মেয়ের সৌজন্যে ভারতের হাতে। যে মেয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করে দেশে ফিরেছে সে সিন্ড্রেলা দাস। রূপকথার সিন্ড্রেলা অনেক লড়াই করে পেয়েছিল তাঁর রাজকুমারকে। বাস্তবের সিন্ড্রেলার কাছে রাজকুমার মানে প্রত্যেকটি টুর্নামেন্টের পদক , চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। আর সেই লক্ষ্যেই দৌড়ে চলেছে কলকাতার সিন্ড্রেলা।
সিন্ড্রেলা খেলতে গিয়েছিল চেক প্রজাতন্ত্রে। সেখান বসেছিল ওয়ার্ল্ড ইউথ টেবিল টেনিস কন্টেনডারের আসর। সেখান থেকেই সে দেশের জন্য নিয়ে এসেছে দুটো পদক। তার এখন লক্ষ্য আগামী প্রত্যেকটা টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়নশিপ টাইটেল। আর অলিম্পিক ? সিন্ড্রেলা জানালেন, 'ওটা একদম শেষ সিঁড়ি। সেটা এখন কিছু সময় লাগবে। আমি ছোট ছোট স্টেপে ভাবতে চাই। আগামী যেসব টুর্নামেন্ট আমি খেলব সেগুলো হবে আমার অলিম্পিক পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার সিঁড়ি। সমস্ত টুর্নামেন্টের অভিজ্ঞতা আমি যদি অলিম্পিকে দেশের জন্য খেলতে পারি, সেই সমস্ত অভিজ্ঞতা আমি ব্যবহার করব'
সিন্ড্রেলা বলেন, 'আমি মনে করি এইসবে আমার পথ চলা শুরু হয়েছে। এই দুই পদক আমার চেষ্টা এবং স্বপ্নে একটা ছোট্ট পালক যোগ করল। সবে শুরু, এখান থেকে আমি শুধু সামনে এগোতে চাই। যা হবে, যা বাধা বিপত্তি আসবে এবার আমার সামনে আসবে। তার সঙ্গে আমি সামনে থেকে লড়াই করতে চাই। পিছনে তাকাতে আমি রাজি নয়।"
সিন্ড্রেলার খেলার প্রতি অধ্যবসায়ের কথা জানালেন তাঁর কোচ সৌম্যদীপ রায়। বললেন , "আমি আরও এক বছর আগের কথা বলছি। তখন ওর বয়স ১২। তো ফিটনেসের জন্য ফিজিক্যাল ট্রেনিং হয় আমাদের ধানুকা - ধানসিড়ি টেবিল টেনিস একাডেমিতে। রোজ ওই ট্রেনিং করতে আসে ও। তো ওই ট্রেনিং করতে গিয়ে ওর কব্জি ঘুরে গিয়েছিল।
সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্লাস্টার করতে হয়। বাইরে পিন দিয়ে হাত সেট করা হয়। এক মাসের বেশি খেলা বন্ধ। জানি না ওর মনের মধ্যে কী চলছিল। পরের দিন দেখি ও ক্লাবে এসেছে। আমরা জিজ্ঞাসা করেছিলাম কেন এই অবস্থায় এসেছে। ও কোনও কথাই শুনল না। ব্যাট হাতে তুলে নেয় তবে বাঁ হাতে। আর সেটা দিয়েই চলে প্র্যাকটিস।
নীরজ চোপড়ার নেতৃত্বে কমনওয়েলথ গেমসে ভারতীয় অ্যাথলেটিক্স দল, ৩৭ অ্যাথলিটের মধ্যে মহিলা ১৮ জন
আমার দেখে অবাক হয়ে গেছিলাম যে একটা ওইটুকু মেয়ে। কব্জি ঘুরে গেছে, হাতে প্লাস্টার, সেই অবস্থায় ও বাঁ হাত দিয়ে খেলতে আসছে। একদিনও ক্লাবে আসা বন্ধ হয়নি। সেই অধ্যবসায়ের একটা ছোট্ট ফল হয়তো ও পেল। আমাদের বিশ্বাস এই খিদেটা ওর মধ্যে থাকবে। আমি, পৌলমী দেশকে অলিম্পিক পদক বাদে সমস্ত টুর্নামেন্টের পদক এনে দিয়েছি। আশা করি আমাদের না পারা কাজ ও সম্পূর্ণ করবে"।