পাঞ্জাবী গায়ক তথা কংগ্রেস নেতা সিধু মুসে ওয়ালা খুনের তদন্তে বড়সড় তথ্য হাতে এল পাঞ্জাব পুলিশের। বৃহস্পতিবার পুলিশের হাতে আসে জ্বালানি তেলের রসিদ, যার সহায়তায় পুলিশ সিধু মুসে ওয়ালা খুনের সঙ্গে জড়িত চার শুটারকে সনাক্ত করতে পেরেছে। ইতিমধ্যেই বিশেষ তদন্তকারী দল এই মামলায় প্রধান অভিযুক্ত হিসাবে লরেন্স বিষ্ণোইয়ের নাম জড়িয়েছে।
সূত্রের খবর, খারারের তদন্তকারী এজেন্সির অফিসে বিষ্ণোইকে দীর্ঘসময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বুধবার খুব ভোরে ভারী সুরক্ষা বাহিনী দিয়ে দিল্লি থেকে বিষ্ণোইকে নিযে আসা হয়। পাঞ্জাব পুলিশ দাবি করেছে যে এই খুনের সঙ্গে যুক্ত চারজন শুটারকে সনাক্ত করলেও এখনও তাদের গ্রেফতার করা হয়নি। সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমের সূত্র জানিয়েছে যে বিষ্ণোইকে বিভিন্ন তদন্তকারীরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। সূত্র মারফৎ এও জানা গিয়েছে যে গোল্ডি ব্রারের জ্ঞাতি ভাই, যে বিষ্ণোই ঘনিষ্ঠ তাকেও নিয়ে আসা হয় এবং কয়েক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে তুলে নিয়ে আসা হয়। সিট জানিয়েছে, বিষ্ণোই এখনও পর্যন্ত তদন্তে কোনও ধরনের সহায়তা করেনি। সে অভিযোগ করেছিল যে সে অসুস্থ এবং তাকে চিকিৎসকের দল পরীক্ষাও করে। যদিও চিকিৎসকরা তাকে সুস্থ ঘোষণা করেছে।
সিট আরও দাবি করেছে যে বিষ্ণোইকে জেরার সময় কোনও জবরদস্তি করা হয়নি কিন্তু যদি সে ক্রমাগত অসহযোগিতা করে তবে তদন্তকারীরা অন্য উপায় খুঁজছে। পুলিশ সূত্রের খবর, চারজন শুটার যাদের সনাক্ত করা হয়েছে তারা হল প্রিয়বরাত ও তার সঙ্গী অঙ্কিত, উভয়ই সোনিপতের, মানু কুসা মোগার বাসিন্দা ও অমৃতসরের জগরূপ রুপা। পুলিশের একজন আধিকারিক বলেছেন যে অপরাধে ব্যবহৃত গাড়িতে পাওয়া একটি ছোট্ট ক্লু এবং প্রযুক্তিগত ইনপুটগুলি পাঞ্জাব পুলিশকে খুনের আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলির পথ উন্মোচন করতে সহায়তা করেছিল। এখনও পর্যন্ত বিষ্ণোই সহ ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এই ঘটনায়। খুনের ঘটনায় আততায়ীদের ব্যবহৃত বোলেরো গাড়ির ভেতর থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে ফতেহাবাদের এক পেট্রোল পাম্পের রসিদ, যেখানে তারিখ ছিল ২৫ মে, ২০২২। এই গাড়িটি পরে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে খায়ালা গ্রামের কাছে এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
গ্যাংস্টার-বিরোধী টাস্ক ফোর্সের এডিজিপি জানিয়েছেন যে সেদিনই পুলিশ ফতেহাবাদ পেট্রোল পাম্পের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখার জন্য তৎক্ষণাত যায়। তিনি বলেন, 'পুলিশ টিম সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং একজনকে সনাক্ত করে যে সম্ভবত শুটার, পরে তার পরিচয় জানা যায় সে সোনিপতের বাসিন্দা প্রিয়বরাত। পেট্রোল পাম্পে ডিজেল ভর্তির আগে এবং পরে বোলেরো যে পথ দিয়ে গিয়েছিল সেখান থেকেও সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছিল।' তিনি আরও জানিয়েছেন যে ইঞ্জিন এবং চেসিস নম্বরের সাহায্যে বোলেরোটির মালিককে সনাক্ত করা হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, অপরাধে ব্যবহৃত মহিন্দ্রা বোলেরো, টয়োটা করোনা ও সাদা রঙের অল্টো সহ সব গাড়ি পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে। টয়োটা করোলায় থাকা হামলাকারীরা অল্টোটি থামিয়ে অল্টোর মালিককে গান পয়েন্টে রেখে তা ছিনিয়ে নিয়েছিল, ঘটনার সময় করোলাটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা ফেলে রেখে যায় আততায়ীরা।
পুলিশ আরও জানিয়েছেন যে গ্যাংস্টাররা খারা বার্নালা গ্রামের মধ্যে দিয়ে সাদা রঙের বোলেরো নিয়ে পালিয়ে যায়। অন্যদিকে ৩০ মে মোগা জেলায় ধরমকোট থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় অল্টো গাড়িটিকে। পুলিশ এও জানিয়েছে যে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে অভিযুক্তদের রুট চিহ্নিত করা হয়েছে। বিষ্ণোই ছাড়া, অন্য ৯ জন ধৃতরা হল চরণজিৎ সিং ওরফে চেতন, সন্দীপ সিং ওরফে কেকড়া, মনপ্রীত সিং ওরফে মন্না, মনপ্রীত ভাউ, সরোজ মিন্টু, প্রভদীপ সিধু ওরপে পব্বি, মনু ডগার, পবন বিষ্ণোই ও নসীব।