গত কয়েকমাস ধরেই টালমাটাল পাকিস্তানের অর্থনীতি। দ্রুত পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফাঁকা হচ্ছে। এই পরিস্থিতি দেশবাসীকে চা কম পান করার পরামর্শ দিলেন পাকিস্তানের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন মন্ত্রী আহসান ইকবাল। তিনি জানান, ঋণ নিয়ে দেশে চা আমদানি করতে হচ্ছে। এর প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়ছে। ক্রমেই বাড়ছে ঋণের বোঝা।
আহসান ইকবাল দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে চা কম পান করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, দেশবাসী প্রতিদিন যদি এক বা দুই কাপ চা পান কমাতে পারেন, সেক্ষেত্রে চা আমদানি করতে সরকারের ওপর চাপটা অনেকটা কমবে। এই অর্থবর্ষে পাকিস্তান বিদেশ থেকে ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের চা আমদানি করেছে।
অবজারভেটরি অফ ইকোনমিক্স কমপ্লেক্সিটি অনুসারে, পাকিস্তান বিশ্বের মধ্যে সব থেকে বেশি চা আমদানি করে। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি ২০২০ সালে ৬৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের চা আমদানি করেছে। কিন্তু বর্তমানে পাকিস্তানের অর্থনীতি মোটেই স্থিতিশীল নয়। আমদানি কমাতে জোর দিচ্ছে ইসলামাবাদ। ইতিমধ্যে বিলাসজাত পণ্য আমদানির ওপর সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
কিন্তু চা আমদানি করতে গিয়ে পাকিস্তানের বৈদিশিক মুদ্রার ভাণ্ডারে টান পড়ছে। সেই বিষয়ে নজর দেওয়ার অনুরোধ করলেন পাক মন্ত্রী। তবে পাক মন্ত্রীর এই মন্তব্যে সোশ্যাল মিডিয়ার তীব্র বিতর্ক দেখা দিয়েছে। অনেকেই পাক মন্ত্রীর সঙ্গে সহমত হতে পারেননি। তাঁরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, চা পানের সঙ্গে কোনও সমঝোতা করবেন না।
গত কয়েক মাস ধরে পাকিস্তান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগাম ছাড়া মূল্য বৃদ্ধিতে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়। তার সঙ্গে গ্যাস ও তেলের দাম হু হু করে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা অনেকেই মনে করছেন, পাকিস্তানের ভঙ্গুর অর্থনীতির জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতা অনেকাংশে দায়ী।
ইমরান সরকারের সময় থেকেই দেশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো ভাঙতে থাকে। ইমরান খান পদচ্যুত হওয়ার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসেন শাহবাজ শরিফ। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেই দেশের আর্থনীতিকে চাঙ্গা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতিই সার। পাকিস্তানের অর্থনীতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে।
ক্রমাগত আন্তর্জাতিক বাজারে পাক মুদ্রার দাম কমতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে বৈদিশিক মুদ্রার ভাণ্ডার ক্রমাগত কমতে শুরু করেছে। ফেব্রুয়ারির শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের তহবিলে ১৬.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল। কিন্তু মে মাসে তা দাঁড়িয়েছে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই সংখ্যা যথেষ্ট উদ্বেগের বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। আমদানি করতেই পাকিস্তান ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে।
Bengal Corona Update: কিছুটা কমল রাজ্যে করোনা সংক্রমণের হার! চিন্তায় রাখছে পজিটিভিটি রেট
শক্তহাতে পাকিস্তানের অর্থনীতিতে লাগাম না ধরলে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
ইতিমধ্যে পাকিস্তানে বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিদ্যুতের ঘাটতি কমাতে সরকারি অফিসগুলোতে সপ্তাহে দুই দিন ছুটি ফিরিয়ে এনেছে। পাশাপাশি দেশের ব্যবসায়ী সমিতিগুলোকে রাত আটটার মধ্যে বাজার বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি পাক সরকার দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান করেছেন। পাক সরকার জানিয়েছে, পাকিস্তানের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে বেশ কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না হলে শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থা হবে বলে ইসলামাবাদ দেশবাসীকে সতর্ক করেছে।