কংগ্রেস-ফ্যাক্টরে সরল কেসিআরের টিআরএস! তাল কাটল মমতার বিরোধী-বৈঠকের

কংগ্রেসকে মানতে পারবেন না তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও ওরফে কেসিআর। তাই তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা বিরোধী দলগুলির বৈঠক এড়িয়ে গেলেন৷ তাল কাটল মমতার বিরোধী ঐক্য স্থাপনের উদ্যোগে। যে কেসিআর ভারত ভ্রমণ করে বিজেপি বিরোধিতায় জোয়ার তুলতে চেয়েছিলেন, সেই তিনি কংগ্রেস-ফ্যাক্টরে দূরে সরলেন।

কেসিআর সরলেন মমতার বৈঠক থেকে, কেন?

আগামী মাসে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য একটি যৌথ অধিবেশন ডেকেছিলেন বংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সমস্ত বিরোধীদের এক জায়গায় এনে তিনি আলোচনায় বসতে চেয়েছেন। তার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লিতে গিয়েছেন, দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসকেও তিন ডেকেছেন এই আলোচনায়। কিন্তু কেসিআর কংগ্রেসের উপস্থিতির কারণেই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন।

বিরোধী সমস্ত দলকে এক জায়গায় আনা বিষম বস্তু

২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইকে সঙ্ঘবদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন নেতাদের এক ছত্রছায়ায় আনতে চেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধী ঐক্যকে বলবৎ করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। কিন্তু বিরোধী সমস্ত দলকে এক জায়গায় আনা সে এক বিষম বস্তু। এবং কঠিন পরীক্ষাও বটে।

উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিতির খাতায় নাম লেখাতে পারেন যাঁরা

তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি বা টিআরএস যারা বিজেপিকে পরাজিত করার লক্ষ্য নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল, তারা কংগ্রেসকে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে কঠোর আপত্তি জানিয়ে বৈঠক থেকে সরে দাঁড়াল। সূত্রের খবর, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি বা আপও এই বৈঠকে উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিতির খাতায় নাম লেখাতে পারে।

কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির

এদিন এক বিবৃতিতে টিআরএস প্রধান কে চন্দ্রশেখর রাও জানিয়েছেন, "কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও প্ল্যাটফর্ম ভাগ করার প্রশ্নই আসে না।" তাঁর কথায়, কংগ্রেসকে নিয়ে তাঁর আপত্তি ছিল। সেই আপত্তি সত্ত্বেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল কংগ্রেসকে। তিনি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে কটাক্ষ করে বলেন, "রাহুল গান্ধী তেলেঙ্গানায় একটি সাম্প্রতিক জনসভায় বিজেপির বিরুদ্ধে কোনও সমালোচনা না করে শুধু টিআরএস সরকারকে নিশানা করেছিলেন।" বিবৃতিতে তিনি বলেন, কংগ্রেস তেলেঙ্গানায় বিজেপির সঙ্গে দলবদ্ধ হয়েছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে তারা একযোগে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির বিরোধিতা করেছে।

বিরোধী রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দাঁড় করানোর পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন

এছাড়া টিআরএস বিরোধী রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দাঁড় করানোর পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী আগেই বেছে নেওয়া হয়েছিল এবং প্রার্থীর মতামত নেওয়া হয়েছিল, তার পরে বৈঠক ডাকা হয়েছিল। তা কেন? এই পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কেসিরাও। ঐকমত্যে পৌঁছানোর আগেই প্রার্থীর অনুমোদন নেওয়া এবং তারপর একটি বৈঠকের পরে নাম ঘোষণা করা ঠিক পদ্ধতি নয়। টিআরএস সূত্র জানিয়েছে, "অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বৈঠক থেকে দূরে থাকতে পারেন।"

বিরোধীদের পছন্দের প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব শারদ পাওয়ারকে

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ১৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে এবং ২১ জুলাই ফলাফল ঘোষণা করা হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২২টি রাজনৈতিক দলকে দিল্লিতে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি এবং তার মিত্রদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের বিষয়ে আলোচনা করতে চেয়েই এই বৈঠক। দিল্লিতে পৌঁছানোর পরই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এনসিপি সুপ্রিমো শারদ পাওয়ারের সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করেন এবং তাঁকে বিরোধীদের পছন্দের প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেন।

শারদ পাওয়ারকে প্রস্তাব দিয়েছে যে সমস্ত রাজনৈতিক দল

শারদ পাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে জানা গেছে। তাঁর দল বলেছে, শারদ পাওয়ারের মতো প্রবীণ একজন নেতা নিশ্চিত হার ঝেনে সেই যুদ্ধে লড়তে নারাজ। কারণ তিনি মনে করেন যে বিরোধীদের কাছে জয়ের মতো প্রয়োজনীয় সংখ্যা নেই। শরাদ পাওয়ারকে যাঁরা রাষ্ট্রপতি হিসেবে চেয়েছিল, তাদের মধ্যে কংগ্রেস ও শিবসেনাও ছিল। এখন তৃণমূলও তাঁকে সরাসরি প্রস্তাব দিয়েছে।

কংগ্রেসকে শিখণ্ডি করে টিআরএস এড়িয়ে গেল বিরোধী বৈঠক

কংগ্রেস ও বামেরা বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী। তাঁরা উভয়েই বৈঠকে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। কিন্তু মমতা বন্যোাযপাধ্যায়ের বন্ধু দল টিআরএস তাঁরা সবার আগে রণেভঙ্গ দিল। কংগ্রেসকে শিখণ্ডি করে তাঁরা এড়িয়ে গেল বিরোধী বৈঠক। ফলে বিজেপির পোয়াবারো। বিজেপি মনেপ্রাণে চাইছে বিরোধীরা যাতে এক না হতে পারে। আর বিরোধীরা যে এক হতে পারবেন না সবাই, তা ভালো মতোই জানে বিজেপি। টিআরএস ছাড়াও বিজেডি ও ওয়াইএসআর কংগ্রেস পূর্বে বিভিন্ন ইস্যুতে বিজেপির পক্ষই নিয়েছে।

কারা উপস্থিত থাকবেন মমতার ডাকা বিরোধী বৈঠকে

তবে এই বৈঠকে কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে, জয়রাম রমেশ এবং রণদীপ সুরজেওয়ালা, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা বা জেএমএমের সভাপতি ও মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব, আরজেডির তরফে তেজস্বী যাদব, সিপিআইয়ের বিনয় বিশ্বম এবং সিপিএমের ইলামারাম করিম। ডিএমকে-র টিআর বালু, শিবসেনার সুভাষ দেশাই, আরএলডির জয়ন্ত চৌধুরী, ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ এবং জম্মু ও কাশ্মীর পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির মেহবুবা মুফতিও যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। কর্ণাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচডি কুমারস্বামী এবং জনতা দল সেকুলারের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়াও এই বৈঠকে যোগ দেবেন।

বিরোধীরা যারা বিজেপির পক্ষেই রায় দেন

বিজেপি বিরোধিতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাক্তন বিজেপি মিত্র আকালি দলকেও আমন্ত্রণ পাঠিয়েছেন, তবে তাদের বৈঠকে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের বিজু জনতা দল বিজেডিকেও দেখা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে না। গত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটকে সমর্থন করেছিলেন তিনি। গত মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে তিনি দেখা করেছিলেন। আর ওয়াইএসআর কংগ্রেসকে নিয়েও ধন্দ রয়েছে।

বিজেপি ছন্নছাড়া বিধানসভায়, নেতৃত্বহীনতাকেই দুষছেন দলের বিধায়কদের একাংশবিজেপি ছন্নছাড়া বিধানসভায়, নেতৃত্বহীনতাকেই দুষছেন দলের বিধায়কদের একাংশ

More TRS News  

Read more about:
English summary
TRS chief K Chandra Shekhar Rao skips opposition meet called by TMC,’s Mamata Banerjee due to Congress factor
Story first published: Wednesday, June 15, 2022, 13:03 [IST]