হাজার অন্ধকারের মধ্যেও বাড়িতে শিক্ষার আলো জ্বালাল কৃতি অর্পিতা মণ্ডল

শুক্রবার উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের বিদ্যাসাগর ভবন থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে চলতি বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচর্য্য। এই বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল মোট ৭ লক্ষ ২০ হাজার ৮৬২ জন পড়ুয়া। এবছর উচ্চমাধ্যমিক ফলের প্রথম ১০এর মেধা তালিকায় রেকর্ড সংখ্যক ছাত্র ছাত্রী জায়গা করে নিয়েছে। ২০২২ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম ১০ জনের মধ্যে রয়েছে মোট ২৭২ জন, যাদের মধ্যে রয়েছে ১৪৪ জন ছাত্র এবং ১২৮ জন ছাত্রী। এই বছর ৯৯.৬% নম্বর পেয়ে ২০২২ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার একক ভাবে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন কোচবিহার জেলার অদিসা দেব শর্মা। যার সর্বমোট নম্বর ৪৯৮। এরই পাশাপাশি অসাধারণ ফল লাভ করেছে অন্যান্য জেলার পরীক্ষার্থীরাও। আর তারই মধ্যে অন্যতম হল অর্পিতা মণ্ডল। কিন্তু আর সকল পরীক্ষার্থীদের থেকে কিছুটা আলাদা অর্পিতা।

অন্ধকারেই শিক্ষার আলো

বাড়িতে তেল কিনে প্রদীপ জ্বালানোর মত আর্থিক অবস্থা ছিল না বলে রাস্তার ধারে ফুটপাথে বসে ল্যাম্পপোস্টের আলোতেই পড়াশোনা করতেন মেদিনীপুরের ঈশ্বর। পরবর্তীতে যিনি হয়ে উঠেছিলেন 'বিদ্যাসাগর'। আপামর ভারতীয়র কাছে পরম শ্রদ্ধেয় সমাজ সংস্কারকের দৌলতেই আজ শিক্ষার প্রসার ঘটেছে ভারতের নারীদের মধ্যে। কারণ ঊনবিংশ শতাব্দীতে নারীশিক্ষার পুনরায় প্রবর্তন তিনিই করেছিলেন বাংলায়। অশিক্ষার অন্ধকার থেকে যে নারীদের তিনি এনেছিলেন আলোর পথে, সেই বাংলারই এক ছাত্রীর জীবন খানিক তাঁরই মত। অন্ধকারে থেকেই বাড়িতে শিক্ষার আলো জ্বালাল বাঁকুড়ার অর্পিতা মণ্ডল।

প্রতিকূলতাকে জয়

বাংলার আরও এক সোনার মেয়ে ঝুলন গোস্বামীর একটি বিখ্যাত উক্তি রয়েছে, 'এভারেস্ট জয়ের কোনও শর্টকাট হয় না'। ঠিক তেমনই, পরিশ্রম, জেদ আর অধ্যাবসায়ের যে কোনও শর্টকাট হয় না তা আরও একবার প্রমান করে দিয়েছে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের ২০২২ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অর্পিতা মণ্ডল। সোনামুখীর পাথরমোড়া হাই স্কুলের কৃতি ছাত্রী অর্পিতা এবারে উচ্চমাধ্যমিকে সারা রাজ্যে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছে। সোনামুখীর পাথরমোড়া হাই স্কুলের এই ছাত্রীর প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৫। কিন্তু বাড়ির আর্থিক অবস্থা একদমই ভালো নয় অর্পিতার। বিদ্যুৎ বিল না দিতে পারার জন্য সেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ অফিসের পক্ষ থেকে। কিন্তু সেই সকল কঠিন পরিস্থিতির কড়া মোকাবিলা করে সামান্য ইমারজেন্সি আলোতে পড়াশোনা করেও অভাবনীয় সাফল্য ছিনিয়ে এনেছে অর্পিতা।

অর্পিতার স্বপ্ন

এই অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য সে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছে মা বাবা এবং তার শিক্ষাগুরুদের। কারণ আলাদা করে বাড়িতে টিউশন নেওয়ার ক্ষমতা ছিল না অর্পিতার। তাই স্কুলের শিক্ষাগুরুরাই তাঁকে সবরকম সাহায্য করেছেন, যার ফলে এই রেজাল্ট। তার এই সাফল্যের পিছনে শিক্ষকদের অবদান সবচেয়ে বেশী বলে সে জানিয়েছে। বড় হয়ে শিক্ষকতা করার স্বপ্ন দেখে অর্পিতা। দর্শন তার প্রিয় বিষয় বলেও জানিয়েছে। সেইসঙ্গে অবসর সময়ে বই পড়তে আর কবিতা লিখতেও পছন্দ করে সোনামুখীর পাথরমোড়া হাই স্কুলের অর্পিতা মণ্ডল।

HS Exam 2023: ১৪ মার্চ উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম ভাষার পরীক্ষা! এরপর কবে কী পরীক্ষাHS Exam 2023: ১৪ মার্চ উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম ভাষার পরীক্ষা! এরপর কবে কী পরীক্ষা

More HIGHER SECONDARY News  

Read more about:
English summary
despite adversity arpita mandal got fourth place in wb higher secondary 2022