প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে সুপ্রীতির মা বলমতী দেবী জানিয়েছেন ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে এক কুয়াশা-ঘেরা রাতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। ঝাড়খণ্ডের গুমলা জেলার বুরহু গ্রামে ফিরছিলেন রামসেবক ওরাওঁ। তিনি ছিলেন গ্রামীণ চিকিৎসক। চার গ্রামবাসীকে নিয়ে তিনি গিয়েছিলেন পাশের গ্রামে রোগী দেখতে। তাঁর বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় পাঁচ সন্তানকে নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন বলমতী দেবী। পরের দিন রামসেবক ও তাঁর সঙ্গীদের গুলিবিদ্ধ দেহ গাছে ঝোলানো অবস্থায় উদ্ধার হয়। নকশাল হামলাতেই এই মৃত্যু বলে জানানো হয়েছিল।
(ছবি- কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রকের টুইটার)
|
গর্বিত পরিবার
রামসেবকের কন্যা সুপ্রীতি নতুন রেকর্ড গড়ে খেলো ইন্ডিয়া ইউথ গেমসে সোনা জিতেছেন। তিনি সময় নিয়েছেন ৯ মিনিট ৪৬.১৪ সেকেন্ড। আগে এই বিভাগে জাতীয় জুনিয়র রেকর্ডটি ছিল ২০১৭ সালে করা সীমার দখলে, তিনি সময় নিয়েছিলেন ৯ মিনিট ৫০.৫৪ সেকেন্ড। মেয়ের সাফল্যে চোখের জল আটকাতে না পেরে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বলমতী দেবী বলেছেন, "যখন সুপ্রীতির বাবা নকশাল হামলায় প্রাণ হারান তখন ও হাঁটাও শেখেনি। কয়েক বছর ধরে সন্তানদের বড় করতে অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। সুপ্রীতি ছোট থেকেই দৌড়াতে ভালোবাসে এবং আমাকে বলে আজ বাবা যদি বেঁচে থাকত তাহলে এই সাফল্যগুলি দেখে খুব খুশিই হতেন। সুপ্রীতির বাবা যেখানেই থাকুন মেয়ের এই সাফল্য দেখছেন, আশীর্বাদ করছেন।" সুপ্রীতি ফিরলে পদকটি গ্রামের বাড়িতেই রেখে দেবেন বলমতী দেবী।
|
আলোর পথে
স্বামীর মৃত্যুর পর সুপ্রীতির মা গুমলার ঘাঘরা ব্লকে বিডিও অফিসে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর চাকরি পান। এরপর গ্রামের বাড়ি থেকে সন্তানদের নিয়ে তিনি চলে আসেন সরকারি কোয়ার্টারে। সুপ্রীতিকে প্রথমে ভর্তি করানো হয় নুকরুডিপ্পা চৈনপুর স্কুলে। সেখানে মাটির ট্র্যাকেই অনুশীলন করতেন। পরে সেন্ট প্যাট্রিক স্কুলে গিয়ে স্কলারশিপও পান সুপ্রীতি। আন্তঃ স্কুল প্রতিযোগিতায় সুপ্রীতি কোচ প্রভাত রঞ্জন তিওয়ারির নজরে পড়েন। তিনি ২০১৫ সালে সুপ্রীতিকে গুমলায় ঝাড়খণ্ড স্পোর্টস ট্রেনিং সেন্টারে রেখে প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করেন। সুপ্রীতি প্রথমে ৪০০ ও ৮০০ মিটারে নামলেও ধাপে ধাপে লং ডিসটান্স রানিংয়ে চলে আসেন। কোচের হাত ধরেই প্রথমে ১৫০০ মিটার ও পরে ৩০০০ মিটারের প্রশিক্ষণ চালাতে থাকেন। ২০১৬ সালে বিজয়ওয়াড়ায় জুনিয়র ন্যাশনাল অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ১৫০০ মিটারের ফাইনালে ওঠেন। পরে রাজ্য ও জাতীয় স্তরে ৩ হাজার মিটারে অংশ নেন। ২০১৮ সালে ভোপালে সাইয়ের মিডল ও লং ডিসটান্স আকাদেমিতে সুযোগ পান, সেখানে জাতীয় রৌপ্যবিজয়ী অ্যাথলিট প্রতিভা টোপ্পোর অধীনে প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন।
|
দেশকে পদক এনে দেওয়া লক্ষ্য
২০১৯ সালে ২০০০ মিটারে প্রথম রুপো জেতেন সুপ্রীতি, মথুরায় ন্যাশনাল ক্রস কান্ট্রি চ্যাম্পিয়নশিপে। ওই বছরই ন্যাশনাল জুনিয়র অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ৯ মিনিট ৫৩.৮৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে ৩ হাজার মিটারে জেতেন সোনা। গত বছর গুয়াহাটিতে জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ১০ মিনিট ৫ সেকেন্ড সময় করে ৩ হাজার মিটারে সোনা জেতেন। জুনিয়র ফেডারেশন কাপে ৩ ও ৫ হাজার মিটারে জেতেন ব্রোঞ্জ। খেলো ইন্ডিয়া ইউথ গেমসের আগে সুপ্রীতি ফেডারেশন কাপ সিনিয়র অ্যাথলেটিক্সে ৫ হাজার মিটারে ১৬ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড সময় করেন, তাতে তিনি আগামী অগাস্টে কলম্বিয়ায় অনুষ্ঠেয় অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে নামার ছাড়পত্র আদায় করে নিয়েছেন। ৩ হাজার মিটারে স্টিপলচেজে রেকর্ডধারী অবিনাশ সাবলেই সুপ্রীতির আদর্শ। দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা অবিনাশের সঙ্গে নিজের জীবনের মিল খুঁজে পান, তাই যখনই মনে করেন অবিনাশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতার ভিডিও দেখে নিজেকে উদ্বুদ্ধ করেন। পরের লক্ষ্য দেশকে পদক এনে দেওয়া।