ঐতিহাসিক উচ্চমাধ্যমিক
তবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে অন্যান্য বছরের থেকে এই বছর একদম আলাদা রাজ্যের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। সেক্ষেত্রে একদিকে যেমন এটি নতুন প্রজন্মের প্রথম উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা, অপরদিকে এটি অনেক দিক থেকেই ঐতিহাসিক, এমনটাই মন্তব্য করলেন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জিব ভট্টাচার্য। তিনি জানান, কাউন্সিলের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। টানা দু বছর পর পরীক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়ায় পুরোটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার দায়িত্ব ছিল কাউন্সিলের উপরেই। এছাড়া এই বছরের এক থেকে দশ মেধা তালিকায় নামের সংখ্যাও রেকর্ড তৈরি করেছে। প্রথম ১০-এ এই বছর রয়েছে প্রথম দশে ২৭২ জনের নাম। যার মধ্যে ছাত্র সংখ্যা ১৪৪ জন, এবং ছাত্রী সংখ্যা ১২৮ জন। মাত্র ৪৪ দিনেই প্রকাশিত হল পরীক্ষার ফলাফল, যা উচ্চমাধ্যমিকের ইতিহাসে প্রথম।
বাড়ল ভোকেশনাল সাবজেক্টের সংখ্যা
এই বছর আরও একটি বিষয়ে বিশেষ হয়ে উঠেছে রাজ্যের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। আর তা হল ভোকেশনাল সাবজেক্টের সংখ্যা বৃদ্ধি। এই বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে মোট ৫৬ টি আলাদা বিষয়ের উপর পরীক্ষা হয়েছে। এবং এরই সঙ্গে ৯টি ভোকেশনাল বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছে। এই বছর সর্বমোট ১১৬টি বিষয়ে প্রশ্নপত্র প্রকাশ করেছে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। ২০২২ সালের ৯টি ভোকেশনাল বিষয়গুলি হল যথা, আটোমোবাইল, অর্গানাইসড রিটেলিং, সিকিউরিটি, আইটি অ্যান্ড আইটি ই এস, হেলথ কেয়ার, ইলেকট্রনিক, টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি, প্লাম্বিং, কনস্ট্রাকশন। এই ৯টি ভোকেশনাল বিষয়ে এই বছর পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু যে সকল পড়ুয়ারা ২০২১ সালে উচ্চমাধ্যমিকের রেজিস্ট্রেশন করেছে অর্থাৎ যারা আগামী বছর ২০২৩ সালে পরীক্ষা দিতে চলেছে তাদের জন্য আরও ৪টি ভোকেশনাল সাবজেক্টের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সেগুলি হল যথাক্রমে, বিউটি অ্যান্ড ওয়েলনেস, অ্যাপারেল, এগ্রিকালচার এবং পাওয়ার। ফলে এখন মোট ভোকেশনাল বিষয় বেড়ে দাঁড়াল ১৩টি। ২০২৩ সালের পরীক্ষা পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসের উপরেই হবে বলে জানিয়েছেন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি।
চলতি বছরে পাশের হার
এই বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন ৭ লক্ষ ২০ হাজার ৮৬২ জন ছাত্র ছাত্রী। এই বছর ছাত্র থেকে ছাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৫ হাজার ৪৮৬ জন। মোট এনোরলমেন্ট এর ৯৬.৮% ছাত্র ছাত্রী পরীক্ষা দেয়। তাদের মধ্যে মোট পাস করেছে ৬ লক্ষ ৩৬ হাজার ৮৭৫ জন। এই বছর পরীক্ষার্থীর পাশের হার ৮৮.৪৪%। যাদের মধ্যে ছাত্র পরীক্ষার্থীর পাশে হার ৯০.১৯% এবং ছাত্রীদের পাশের হার ৮৬.৯৮%।
ফের জেলার জয়
তবে এই বছরেও শহর ও শহরতলিকে টেক্কা দিয়ে জয় জয়কার হল জেলার। পূর্ব মেদনীপুর, পশ্চিম মেদনীপুর, বাঁকুড়া, মালদা সহ ৭ জেলার পাশের হার ৯০ শতাংশের উপরে বলে জানান সংসদ সভাপতি। জেলাভিত্তিক পাশের হার সবথেকে বেশি পশ্চিম মেদিনীপুরে। ২০২২ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম ১০ জনের মধ্যে রয়েছে মোট ২৭২ জন। যার মধ্যে ১৪৪ জন ছাত্র এবং ১২৮ জন ছাত্রী রয়েছে। এই বছর ৯৯.৬% নম্বর পেয়ে ২০২২ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার একক ভাবে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন কোচবিহার জেলার অদিসা দেব শর্মা। যার সর্বমোট নম্বর ৪৯৮। দ্বিতীয় স্থানেও ৯৯.৪% নম্বর পেয়ে একক ভাবে স্থান করে নিয়েছে পশ্চিম মেদনীপুরের সায়ান্দীপ সামন্ত। তিনি মোট পেয়েছেন ৪৯৭। তবে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন ৪জন। যাদের মোট নম্বর ৪৯৬ যা মোট নম্বরের ৯৯.২ শতাংশ। তৃতীয় হয়েছেন কলকাতার পাঠভবন স্কুলের রহিন সেন, হুগলির সোহম দাস, অভিক দাস ও পশ্চিম মেদনীপুরের পরিচয় পারিক।