২০০৫ বিশ্বকাপ ফাইনাল
তখন জন মানবের অগোচরে মিতালির হাতে তৈরি হচ্ছে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল। দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ খেলতে গেল ভারত। বিশেষ কোনও আশা ছিল না যেমনটা ছিল না ২০০৭ টি-২০ পুরুষদের প্রথম বিশ্বকাপ নিয়ে। তবে ধীরে ধীরে দুরন্ত খেলে ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছিল মিতালির ভারত। মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়া। ঠিক যেন সৌরভ গাঙ্গুলির নেতৃত্বে সেই দক্ষিণ আফ্রিকায় ফাইনাল ম্যাচের পুনরাবৃত্তি। সারা টুর্নামেন্ট ভালো খেলে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে বিশ্রী ভাবে হেরে যায় ভারত। ২১৫ রান তারা করতে গিয়ে মিতালির ভারত অল আউট ১১৭ রানে। হার ৯৮ রানে,
২০১৭ বিশকাপ
ইংল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপ। এখন সবাই চেনে এবং জানে ভারতীয় মহিলা দলের বহু ক্রিকেটারকে। বেশ নাম করে নিয়েছেন হরমন , স্মৃতিরা , সঙ্গে মিতালি , ঝুলনদের বিশাল অভিজ্ঞতা। দুরন্ত খেলে ফাইনালে যায় ভারত। লর্ডসের ফাইনালে ২২৮ রানে আটকে দেয় ইংল্যান্ডকে। ব্যাট করতে নেমেও ভালো জায়গায় ছিল ভারত। শেষে এসে আচমকা ছন্দ হারায়। মাত্র ৯ রানে হারে ভারত। আরও একবার স্বপ্ন ভঙ্গ হয় মিতালির।
শেষ বিশ্বকাপ
অনেকেই ভেবেছিলেন এটা মিতালির শেষ বিশ্বকাপ। একটা ট্রিবিউট প্রাপ্য মিতালি রাজ , ঝুলনদের। সেটা করতে যান প্রাণ লড়িয়ে দেবেন স্মৃতি মন্ধনারা। দেশ ভাবছিল সচিনের মতো শেষটা দারুণ ভাবে হবে মিতালির। একটা বিশ্বকাপ নিয়ে ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন তারকা। সোজা কথা স্বপ্ন দেখছিল ভারতবাসী। সেটা তো হয়নি। উলটে গ্রুপ লিগে বিদায় নিতে হয় ভারতকে। শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে হত। সব ঠিকঠাক চলছিল। তীরে এসে একটা নো বলে তরী ডোবে ভারতের। বিশ্বকাপ জয়ের আশা শেষ হয় মিতালির।আর আজ তো তিনি বিদায় জনালেন ক্রিকেটকে। না বললেও তাঁর মনে এই না পাওয়াটা তাঁকে কোথাও না কোথাও কুড়ে কুড়ে খাবে।
কেন ধোনির মতো কাউকে দরকার ছিল মিতালির
২০০৭ টি-২০ বিশ্বকাপে একাধিক তারকাকে ছাড়া বিদেশের মাটিতে খেলতে গিয়েছিল ভারত। তার আগেই চরম হার হয়েছে একদিনের বিশ্বকাপে। দেশের ক্রিকেট ভক্তরা তখন খেলা দেখার জন্য খেলা দেখছেন। তেমন কোনও বিশেষ আশা নেই। আর নতুন ধরনের ক্রিকেট। আরপি সিং, রবিন উথাপ্পা, রোহিত শর্মা, যোগিন্দর শর্মা , শ্রীসন্থ, ইউসুফ পাঠানের মতো এক ঝাঁক তরুণদেরকে নিয়ে টি-২০ বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিলেন হঠাৎ জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব পাওয়া মহেন্দ্র সিং ধোনি। মোটামুটি ভালো খেলেই ফাইনালে যায় ভারত। উল্টো দিকে চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান। ভয়ঙ্কর চাপ। শেষ ওভার। টান টান উত্তেজনা। শেষ ওভারে ১৩ রান দরকার। অচেনা হাই ভোল্টেজ ম্যাচের শেষ ওভার করতে গিয়ে দুটো ওয়াইড ছক্কা খেয়ে ম্যাচ প্রায় পাকিস্তানের দিকে ঠেলে দিয়েছেন । ফিল্ড চেঞ্জ করলেন এমএস। মিসবা সব ভালো করে যোগিন্দরের ধীর গতির বল ভুল করে স্কুপ করতে গেলেন। মুহূর্তের ভুল ম্যাচ চলে যায় ভারতের হাতে। কাপ যেতে ভারত। ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে হারের ক্ষতে মলম লাগে। শেষ ওভারেরধোনির যোগিন্দর দাওয়াই এবং ফিল্ড চেঞ্জ করে শ্রিসন্থকে এগিয়ে নিয়ে আসা ভারতকে বিশ্বকাপ এনে দেয়। তখন সবাই ভাগ্য বললেও পরে তা বোঝা যায় ওটা ধোনির কৃতিত্ব অনেক বেশি।
২০১১ বিশ্বকাপ। সারা টুর্নামেন্টে ভালো খেলতে পারেননি ধোনি। যুবরাজ সিং এবং দলগত পারফর্মেন্সে ভর করে ফাইনালে যায় ভারত। শ্রীলঙ্কার ২৭৪ রান তাড়া করতে গিয়ে শুরুতেই আউট সচিন , সেওয়াগ। বিরাট ভালো খেলতে খেলতে আউট, সবাই ভেবেছিল এরপর সারা টুর্নামেন্টে দারুণ ছন্দে থাকা যুবরাজ ক্রিজে আসবেন। হল উল্টো। ডান বাম কম্বিনেশন ব্জায় রাখতে এবং মুরলীকে খেলতে এগিয়ে এলেন ধোনি এবং গম্ভীরের সঙ্গে রুপকথার পার্টনারশিপ। ৯৭তে গম্ভীর আউট হলেও। যুবরাজকে সঙ্গে ২৮ বছর পর দেশকে একদিনের বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ দেন ধোনি। ৯১ রানে নট আউট থাকেন। ফিনিশ আবার ছয় মেরে।
২০১৩ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনাল। এই টুর্নামেন্টেও দুর্দান্ত দলগত পারফর্মেন্স ভারতের। ব্যাট বল ফিল্ডিংয়ে অনবদ্য ভারত। তবে এই দলে নেই ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ী দলের প্রায় কোনও সদস্যই। নতুন ভাবে রোহিতকে আবিস্কার করেন ধোনি। ইংল্যান্ডের মাঠে তাঁদেরই বিরুদ্ধে বৃষ্টি বিঘ্নিত ফাইনালে ২০ ওভারে ভারত ১২৯ রানে আটকে যায়। কিন্তু ইংল্যান্ডকে শুরু থেকেই চাপে রাখে ভারত। স্পিন, পেসে নাস্তানাবুদ ইংল্যান্ড ব্যাটিং। খেলা ধরেন বোপারা, মরগ্যান। মাঝের ওভারে ধোনি ফেরান ইশান্তকে। এসেই পরের পর ওয়াইড বল , চার খেয়ে ম্যাচ যেতে বসেছে ভাবছে ভারতবাসী। কিন্তু ধোনি উইকেটের পিছনে চিন্তাতেও নেই। উলটে ওয়াইড বলে হাত তালি দিচ্ছেন। সেটাই তো পরিকল্পন ছিল। ওভারের তৃতীয় বলে ওই মাথার উপর দিয়ে যাওয়া স্লোয়ার পুল করতে গিয়ে আউট বোপারা। পরের বলে দূর দিয়ে যাওয়া বল খেললেন মরগ্যান। এবং আউট। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল ইংল্যান্ড। ধোনির প্ল্যানে পরাস্ত ইংরেজরা। বাকি ছিল এই আইসিসি ট্রফিটা। সেটাও নিয়ে যান ধোনি।
এমনই একজন ক্রিকেটার দরকার ছিল মিতালির দলের যে শেষ মুহূর্তে কোনও এক মুহূর্তে কোল্যাপ্স না করে রুখে দাঁড়াবেন। ঠিক সময় ঠিক কাজটা করে দিয়ে যাবেন। তেমন একজন কেউ ভেরি ভেরি স্পেশাল কেউ ছিলেন না। তাই সব ভালো হয়েও শেষটা ভালো হয়নি মিতালির । আর নেই কোনও আইসিসি ট্রফিও।