তিন বছর আগে পুণ্যার্থীদের ভিড় ছিল এই মেলায়
এ বিষয়ে এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে ২০১৯ সালে সরকারের বন্দোবস্ত করে দেওয়া বাসে করে জম্মুর গাণ্ডেরবাল জেলার তুলমুল্লা গ্রামের আড়াই থেকে তিনহাজার পুণ্যার্থি এই মন্দিরে এসেছিলেন। তবে ২০১৯ সালের পর করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে কোনও ধরনের যাত্রা হয়নি। মঙ্গলবার, মন্দিরের সবচেয়ে শুভদিন অষ্টমীর আগে, মাত্র ৪০০-৫০০ জন পুণ্যার্থী মন্দিরে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নেতা কিং সি ভারতী জানিয়েছেন যে ২০১৯ সালে মোট ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার পুণ্যার্থী আসেন মন্দিরে।
এ বছর পুণ্যার্থী কম
প্রাথমিকভাবে, ১৪০০ তীর্থযাত্রী নিজেদেরকে জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসনের অভিবাসীদের জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগে রেজিস্ট্রার করেছিলেন। এই বিভাগ নিরাপত্তা পরিবেষ্টিত করে ৫০ টি বাসে করে এঁদের কাশ্মীরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। তবে টার্গেট কিলিং-এর জেরে অনেকেই নিজেদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দেন। মঙ্গলবার মাত্র ১৪টি বাস জম্মু শহরের বাইরে নাগরোটা থেকে ছাড়ে, যার মধ্যে ২টি বাসে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেয়। কিছু কর্মকর্তা এই কম সংখ্যক পুণ্যার্থীর জন্য কাশ্মীরে টার্গেট কিলিং-এর কারণে কাশ্মীরি পণ্ডিত কর্মীদের বয়কটের আহ্বানকে দায়ী করেছেন। যদিও ত্রাণ ও পুর্নবাসন কমিশনার (অভিবাসী) অশোক পাণ্ডিতা জানিয়েছেন যে অষ্টমীর দিন আরও পুণ্যার্থী আসবে। তিনি বলেন, 'কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নিয় আসার জন্য উপত্যকার বিভিন্ন অংশে ২৫টি বাস রাখা আছে।' এর সঙ্গে তিনি এও যোগ করেন যে এর পাশাপাশি দিল্লি থেকেও ২টি বাস তীর্থযাত্রীদের নিয়ে আসবে। তবে উপরে উল্লিখিত সরকারি সূত্রের মতে মন্দিরে দর্শনের জন্য তীর্থযাত্রীদের সংখ্যা ১০০০-১,৫০০-এর বেশি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
পুণ্যার্থীদের কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে নিয়ে যাওয়া হবে
১ মে থেকে কাশ্মীরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আটজন মানুষ নিহত হয়েছে জঙ্গিদের হাতে, যাদের মধ্যে পাঁচজন সাধারণ নাগরিক ও তিনজন অফ-ডিউটিতে থাকা পুলিশ কর্মী। পতাকা দেখিয়ে পুণ্যার্থীদের বাস ছাড়ার দায়িত্বে থাকা জম্মু ডিভিশনাল কমিশনার রমেশ কুমার বলেন, 'যাত্রার জন্য যাঁরা রেজিস্ট্রার করেছেন সরকার তাঁদের সুবিধা দিয়েছে। যাত্রার সময় তাঁদের কোনও অসুবিধা হবে না। যাত্রার সফর থেকে মন্দির পর্যন্ত কড়া নিরাপত্তা রয়েছে।' কুমার এ বিষয়ে জানিয়েছেন তীর্থযাত্রীরা বুধবার মন্দির দর্শন করে তার পরের দিন জম্মু ফিরে আসবেন। তিনি জানিয়েছেন সরকার সব ধরনের প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত সেরে রেখেছেন, যাতে পুণ্যার্থীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যাহত না হয়। প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর কর্মসংস্থান প্যাকেজের অধীনস্ত উপত্যকায় বদলি হওয়া অধিকাংশ কাশ্মীরি পণ্ডিত কর্মীরা তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রতিবাদে সামিল হওয়ায় এই মেলায় তাঁরা যোগ দিচ্ছেন না। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সংগঠনগুলি সাধারণত মন্দিরে লঙ্গারের ব্যবস্থা করে কিন্তু জম্মু থেকে যাওয়ার পথে ইতিমধ্যে উপত্যকায় কর্মরত আন্দোলনকারী অভিবাসী পন্ডিত এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কর্মচারীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করার জন্য তাঁদের এই মেলা থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল।
মেলা থেকে দূরে থাকছে রামকৃষ্ণ মহাসম্মেলন
অনন্তনাগের অচাবল এলাকার রামকৃষ্ণ মহাসম্মেলন আশ্রম, যারা গত দু'দশক ধরে মন্দিরের ভেতর পুণ্যার্থীদের জন্য লঙ্গারের ব্যবস্থা করে থাকে, তারাও এই বছর আর সেই কাজ করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মিশনের প্রশাসনিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বি এল ভাট বলেন, 'আমরা রেশন সংগ্রহ করেছি এবং ২০-২৫ হাজার তীর্থযাত্রীদের খাবার সরবরাহ করার ব্যবস্থা করেছি এবং এমনকি ধর্মার্থ ট্রাস্টের কাছ থেকে অনুমতি চেয়েছিলাম যা মন্দির এবং জেলা প্রশাসনকেও পরিচালনা করে। কিন্তু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে যেভাবে টার্গেট কিলিংয়ের মাধ্যমে হত্যা করা হচ্ছে যার জেরে আতঙ্ক ও প্রতিবাদ দেখা গিয়েছে সর্বত্র, তাই এই বছর আমরা আমাদের কর্মসূচি বাতিল করেছি।'
কেমন নিরাপত্তা রয়েছে
পুলিশ জানিয়েছে যে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ, সেনা ও আধাসেনা বাহিনী এই থ্রি-টায়ার নিরাপত্তা থাকছে তুলমুল্লাতে, যে গ্রামে মন্দির রয়েছে। মন্দিরের পথে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তার অনুভূতি দিতে স্থানীয় বাসিন্দাদেরও আস্থায় নেওয়া হয়েছে।
ক্ষীর ভবানি মেলা
কাশ্মীরের পাঁচটি মন্দির মিলে এই ক্ষীর ভবানি মেলার আয়োজন করা হয়। এই পাঁচটি মন্দির হল গাণ্ডেরবালের রাগন্যা ভাগবতী, কুলগামের মঞ্জগম, কুলগামের দেবসার, অনন্তনাগের লোগরিপোরা ও কুপওয়ারার টিক্কর। এই মন্দিরগুলির মধ্যে, বিশাল চিনার গাছের ছায়ায় অবস্থিত তুলমুল্লা মন্দির, কাশ্মীর এবং দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে পণ্ডিতদের বিশাল সমাবেশের সাক্ষী হয় প্রত্যেক বছর।