জম্মু-কাশ্মীর জুড়ে টার্গেট কিলিং এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে কাশ্মীরের সরকারি কর্মীরা তাঁদের বদলি করে দেওয়ার জন্য ক্রমাগত সরকারকে চাপ দিতে শুরু করে। উপত্যকার সংখ্যালঘুদের দাবি মেনে কাশ্মীরি পণ্ডিত সম্প্রদায়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাকে নিরাপদ স্থানে বদলি করা শুরু করে দিল জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন। প্রসঙ্গত, গত একমাসে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৯ জন মানুষ নিহত হয়েছে জঙ্গিদের হাতে।
শ্রীনগরের মুখ্য শিক্ষা কর্মকর্তা ১৭৭ জন কর্মীকে, যাঁরা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ কর্মসংস্থান প্যাকেজে নিয়োগ হয়েছিল, তাঁদের শহরের আরও নিরাপদ জায়গায় বদলি করে দেওয়া হয়েছে। এঁদের মধ্যে অধিকাংশকে সেনা অধ্যুষিত এলাকা বাদামিবাগ, বাটওয়ারা ও আটওয়াজান অথবা উচ্চ নিরাপত্তা এলাকা জওহর নগর, রাজবাগ ও বারজুল্লাতে বদলি করে দেওয়া হয়। অশিক্ষা পণ্ডিত কর্মীদেরও নিরাপদ এলাকায় বদলি করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ১৭৭ জন শিক্ষকের তালিকা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পরই এই পদক্ষেপ নিয়ে সরকারকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। অন্যদিকে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) পাবলিক ডোমেনে এই বদলির তালিকা ফাঁস হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মীদের বিরুদ্ধে বিজেপি শাস্তির দাবি করেছে। বিজেপির মুখপাত্র আলতাফ ঠাকুর এ প্রসঙ্গে বলেন, 'সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ্যে এই বদলির তালিকা ফাঁস করে দেওয়ার ফলে জঙ্গিরা স্পষ্ট ধারণা পেয়ে যাবে কে কোথায় বদলি হয়েছে।'
জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে তারা যেন তাদের পণ্ডিত কর্মীদের, যারা উপত্যকার ১০টি জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করছেন, তাদের নিরাপদ জায়গায় বদলি করে দেওয়া হয়। কেন্দ্র সরকারের এই আদেশ স্পষ্ট করে দিয়েছে যে লেফটেন্যান্ট-গভর্নরের প্রশাসন কর্মচারীদের কাশ্মীর উপত্যকার বাইরে স্থানান্তরিত করার দাবিতে কর্ণপাত করছে না।
কাশ্মীরের ডিভিশনাল কমিশনার পাণ্ডুরাঙ্গ কে. পোল শনিবার ডেপুটি কমিশনার ও সিভিল বিভাগের সব বিভাগী্য প্রধানদের নিয়ে কর্মীদের বদলির অবস্থা নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠকে বসেন। জানা গিয়েছে সরকার হিন্দু কর্মীদের উপত্যকার মধ্যে নিজের পছন্দের বদলির জায়গা জানাতে বলেছে এবং পোলকে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পোল নির্দেশ দিয়েছেন যে পন্ডিত কর্মচারী যারা বদলিতে সম্মত, তাদের জেলা সদর দপ্তরে বা পৌর শহরে বা পৌর শহরের ৩ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে বদলি করা উচিত। সরকারিভাবে বলা হয়েছে, 'সস্ত্রীক পণ্ডিত কর্মীদেরও নিরাপত্তার জন্য একই এলাকায় বদলি করা উচিত।'
প্রসঙ্গত, গত ১২ মে বুদগামের ছাঁদোরাতে রাহুল ভাট নামে এক পণ্ডিত কর্মীর হত্যার পর থেকে পণ্ডিত কর্মীরা কাজে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। স্কুলের বাইরে এক হিন্দু শিক্ষক ও দক্ষিণ কাশ্মীরে ব্যাঙ্কের মধ্যে এক হিন্দু ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের হত্যার পর ৩১ মে থেকে একাধিক পণ্ডিত কর্মী উপত্যকা ছাড়তে শুরু করে দেন। ২০০৮ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ কর্মসংস্থান প্যাকেজে ৪ হাজারের বেশি পণ্ডিতকে কাশ্মীরে নিয়োগ করা হয়। জম্মুর ডোগরা হিন্দু কর্মচারী, যারা উপত্যকায় ৮% তফসিলি জাতি কোটার অধীনে নিয়োগ পেয়েছিলেন, তারাও জম্মুতে একটি প্রতিবাদ মিছিল করেছে।
গত এক বছরে কাশ্মীরে জঙ্গিদের হাতে নিহত হয়েছে ৩জন ডোগরা হিন্দু, যাঁদের মধ্যে ২ জন স্কুল শিক্ষক, যাঁদের জম্মু থেকে কাশ্মীরে বদলি করা হয়েছিল। এই বছর ১৯ জন সাধারণ মানুষ জঙ্গিদের টার্গেট কিলিং-এর শিকার হয়েছে। যার মধ্যে ১৩ জন স্থানীয় মুসলিম ও পুলিশ কর্মী ও পাঁচজন অমুসলিম ছিল। দক্ষিণ কাশ্মীরের কুলগাম ও সোপিয়ান সহ গোটা উপত্যকায় কড়া নিরাপত্তা মোতায়েন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সাম্প্রতিক ঘটনাগুলির বিষয়ে শুক্রবার দিল্লিতে শীর্ষ আধিকারিক এবং লেফটেন্যান্ট-গভর্নর মনোজ সিনহাকে নিয়ে একটি বৈঠকও করেন।