পুরুলিয়ার প্রশাসনিক বৈঠকের শুরুব থেকেই এদিন মেজাজ ছিল চড়া। আচমকাই সেখানে শীতল পরশ দিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরুলিয়ার ঝালদা পুরসভার চেয়ারম্যান সুরেশ আগরওয়ালের ভুঁড়ি নিয়ে চর্চায় বেশ মজুত ছিল হাস্যরস। সভার শেষে যাতে প্রাণে খুশির জোয়ার নিয়ে গেলেন উপস্থিত প্রশাসনিক কর্তা থেকে শুরু করে জন প্রতিনিধিরা।
মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন ঝালদা পুরসভার চেয়ারম্যান সুরেশ আগরওয়াল। তারপর হল ভর্তি সভাসদদের মাঝে মুখ্যমন্ত্রী বলে ওঠেন, এই আপনার এত ভুঁড়ি কেন? সত্যিই চেয়ারম্যান সাহেব উঠে দাঁড়াতেই ভুঁড়িটি প্রকট হয়ে উঠেছিল তাঁর। কিন্তু ভুঁড়ি বলে কথা, দিদির কথা কি সহজে মেনে নেন তিনি।
চেয়ারম্যান সুরেশ আগরওয়াল বলে ওঠেন, দিদি, না আমরা সুগার আছে, না প্রেসার। শুধু ভুঁড়িটাই আছে। কিন্তু কোনও রোগ নেই। মমতা তখন বলেন, কিছু তো ডেফিনেটলি আছে। নিশ্চয় লিভারটা বড়। কিছু না থাকলে এত বড় মধ্যপ্রদেশ হয় কী করে! তখন চেয়ারম্যান যুক্তি দেখান, আসলে তিনি তেলেভাজা খেতে খুব ভালোবাসেন।
সুরেশের কথায়, রোজ সকালে পকোড়া খাই। ওটা না খেলে একেবারেই চলে না তাঁর। তখন মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন ওঝন কত? কোনও সংকোট না করেই তিনি বলে বসেন, ১২৫ কেজি। তারপর আবার গর্ব করে বলেন প্লাস্টিকের চেয়ারে বসতে ভেঙে যাবে বসলেই তো কাঠের চেয়ারের ব্যবস্থা। তা শুনে মুখ্যমন্ত্রী হাসি হাসি মুখে বলেন, হুঁ, আবার গর্ব করে বলছে, ১২৫ কেজি।
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে 'বকা' খেয়ে সুরেশ বলেন, দিদি আমি প্রতিদিন তিনঘণ্টা ব্যায়াম করি। মুখ্যমন্ত্রী তখন জানতে চান, কী ব্যায়াম করেন, দেখান তো দেখি! তখন সুরেশ তৎক্ষণাৎ অনুলোম-বিলোম করতে থাকেন। অর্থাৎ এক নাক বন্ধ করে অন্য নাক দিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়া। তখন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এ তো আপনি প্রাণায়ম করছেন। ব্যায়াম করতে হবে। তখন সুরেশ পেট নাচাতে শুরু করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এ তো কপালভাতি করছেন। তখন তিনি প্রশ্ন করেন, দিনে কত বার করেন। সুরেশ অকপটে জবাব দেন, দিদি এক হাজার বার। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এক হাজার বার? হতেই পারে না। তাহলে মধ্যপ্রদেশরে হাল ওইরকম হত না!
এখানেই থেমে থাকেননি মমতা। তিনি চটজলদি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। একেবারে বাজদি ধরে বসেন। বলেন, কই দেখান তো দেখি। তখন রীতিমতো অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন সুরেশ। বলেন, এখনই দেখাতে হবে? মুখ্যমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ, স্টেজে এসে দেখান। এক হাজার বার এটা করতে পারলে, আমি আপনাকে দশ হাজার টাকা পুরস্কার দেব।
তখন একটা যুক্তি দেখিয়ে নিস্তার পান পুরসভার 'হেভিওয়েট' চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, এটা বিকেল পাঁচটার আগে করা যায় না। সকালে আর বিকেলেই একমাত্র করা যায়। তখনও পাঁচটা বাজতে বাকি প্রায় দেড় ঘণ্টা। তাই ভুঁড়ি-বিড়ম্বনা থেকে কোনওরকমে রক্ষা পান এদিনের মতো। কেননা মুখ্যমন্ত্রী এবার সুরেশের জন্য ডায়েট চার্ট তৈরি করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, কোনও পকোড়া বা তেলে ভাজা নয়, এক মাস এখন থেকে শুধু সেদ্ধ ভাত খেতে হবে। ব্যায়াম করতে হবে, হাঁটতে হবে নিয়মিত। সুরেশও জানেন, আর রক্ষা নেই। পরেরবার এলে তিনি জানতে চাইবেনই- ওজন কমল কি না, ঠিকঠাক মেন্টেন করছেন কি না, তারও জবাবদিহি করতে হবে।