'শীঘ্রই জাতীয় স্তরে বড় পরিবর্তন হতে চলেছে’। বৃহস্পতিবার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়ার সঙ্গে দেখা করার পরে এমনই মন্তব্য করলেন তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও। চন্দ্রশেখর রাও এও জানিয়েছেন যে কয়েক মাসের মধ্যে 'চাঞ্চল্যকর খবর’ আসতে চলেছে। প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী নেতাদের সঙ্গে শেষ বৈঠকের পর এমনটাই জানিয়েছেন কে চন্দ্রশেখর রাও।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তেলঙ্গানার রাজধানী হায়দরাবাদে গিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে দেখা না করে এদিনই বেঙ্গালুরুতে গিয়েছেন কেসিআর। সেখানে জাতীয় রাজনীতি নিয়ে তিনি দেবগৌড়া ও তাঁর ছেলে এইচ ডি কুমারস্বামীর সঙ্গে আলোচনা করেন। এদিকে হায়দরাবাদে বিজেপির এক সভায় কেসিআরের কড়া সমালোচনা করেন মোদী। মোদী এদিন 'পরিবারবাদ’ কথা তুলে কেসিআরকে কটাক্ষ করেন। নরেন্দ্র মোদীর কটাক্ষের তীব্র জবাব দিয়ে কেসিআর বলেন, 'অনেক ভাষণবাজি হয়েছে, অনেক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তার বাস্তবায়ন কোথায়? কিন্তু দেশের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ নেই। শিল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, জিডিপি পড়ে যাচ্ছে, মুদ্রাস্ফিতী বাড়ছে, কৃষক, দলিত ও আদিবাসীরা অখুশি।’
২০২৪ সালে বিজেপির বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্টকে একত্রিত করার প্রচেষ্টায় কেসিআর সারা দেশে বিরোধী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। সাংবাদিকদের সামনে কেসিআর বলেন, 'আমি বলতে চাই যে আমি দৈব গৌড়া ও এইচডি কুমারস্বামীর সঙ্গে দেখা করেছি, আমরা সবকিছু নিয়ে আলোচনা করেছি। জাতীয় স্তরে পরিবর্তন হতে চলেছে এবং কেউ সেটা আটকাতে পারবে না। ভারতে পরিবর্তন হবে, দেশকে পরিবর্তন হতেই হবে। দেশের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা উচিত।’ কেসিআর এও বলেন, 'দুই–তিন মাসের মধ্যে আপনারা বড় খবর পাবেন।’ যদিও এ সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।
বৃহস্পতিবার হায়দরাবাদে এসে মোদী কেসিআর ও তাঁর তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতিকে কটাক্ষ করে জানিয়েছেন যে একটি পৃথক রাজ্যের সংগ্রাম শুধুমাত্র একটি পরিবারের শাসন করার জন্য তৈরি হয়নি। তাঁর কথায়, 'পরিবারবাদী পার্টির নেতারা কেবল নিজেদের উন্নয়নের কথা চিন্তা করেন। তাঁরা গরিব মানুষের কথা ভাবেন না। তাঁরা শুধু চেষ্টা করেন, কীভাবে একটিই পরিবার ক্ষমতায় থাকতে পারে।’ কেসিআরের নাম না করে, যিনি তাঁর কঠোর বিশ্বাস ও রীতি–নীতি পালনের জন্য পরিচিত, মোদী বলেন, 'তেলঙ্গানার জনগণকে অবশ্যই তাদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে যাদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন বিশ্বাস তাদের প্রশাসনের পথে আসে।’
নরেন্দ্র মোদীর কটাক্ষের জবাব কেসিআর সরাসরি না দিলেও তাঁর দলের মুখপাত্র কৃষাঙ্ক মান্নে এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'মোদী শুধু পরিবারবাদ নিয়ে কথা বলেছেন। সেটাই যদি হয়, তবে কে এই জয় শাহ (কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের পুত্র), যিনি ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনের দায়িত্বে আছেন?’ প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী মোদী হায়দরাবাদে ঢোকার কিছুক্ষণ আগেই বেঙ্গালুরুর উদ্দেশ্যে রওনা দেন কেসিআর। এখানে উল্লেখ্য যে চারমাসে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার কেসিআর মোদীর সঙ্গে দেখা না করেই বেরিয়ে গেলেন। এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে, যখন প্রধানমন্ত্রী মোদী এ রাজ্যে এসেছিলেন স্ট্যাচু অফ ইকুয়ালিটি, সাধু রামানুজাচার্যের একটি বিশাল মূর্তি উদ্বোধন করতে, কেসিআর তাঁর শরীর ভালো না থাকায় মোদীকে স্বাগত জানাতে যেতে পারেননি।
বিজেপিকে মোকাবিলা করার জন্য বিরোধীদের সভা–সমাবেশে যৌথ বিরোধী দল গড়ে তুলতে, কেসিআর সম্প্রতি দেখা করেছেন আম আদমি পার্টি (আপ) প্রধান ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে ও কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সঙ্গে। জানা গিয়েছে কেসিআর খুব শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে বাংলায় আসছেন। এছাড়া কেসিআর বিহারে যাবেন, যেখানে তিনি মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও বিরোধী নেতা তেজস্বী যাদবের সঙ্গে দেখা করবেন।