ইতিহাস রচনা করে ঐতিহ্যশালী থমাস কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। থমাস কাপে ৭৩ বছরের সুদীর্ঘ ইতিহাসে এই প্রথম বার ফাইনাল খেলার ছাড়পত্র পায় ভারতীয় পুরুষ ব্যাডমিন্টন দল। খেতাব নির্ধরণকারী ম্যাচে টুর্নামেন্টের সফলতম ইন্দোনেশিয়াকে হারিয়ে কিদাম্বী শ্রীকান্ত-লক্ষ্য সেন'রা যে বিজয়গাথা রচনা করেছেন তা স্বর্ণক্ষরে লেখা থাকবে বিশ্ব ক্রীড়াক্ষেত্রে। ভারতের থামস কাপ জয়ী দলের অন্যতম প্রধান কাণ্ডারী এবং ভারতীয় টেনিসের মুখ কিদাম্বী শ্রীকান্ত ওয়ানইন্ডিয়া'কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভাগ করে নিলেন ইতিহাস তৈরির প্রতিটা মুহূর্ত।
প্রশ্ন:থমাস কাপের মতো টুর্নামেন্ট জেতা কখনওই সোজা নয়। এই সফরটা কেমন ছিল?
কিদাম্বী শ্রীকান্ত: আমরা বিশ্বাস করতাম আমাদের দলের এই টুর্নামেন্ট জেতার ক্ষমতা রয়েছে। আমরা সব সময়ে একে অন্যের মনোবল বাড়াতাম, নিজেদের মধ্যে বিশ্বাসটা সব সময়ে অটুট ছিল। পুরো টুর্নামেন্টে আমাদের কঠিন পরিশ্রম করতেই হতো, আমরা জানতাম সাফল্য পেতে শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে হবে। একটা দল হিসেবে আমরা খেলেছি। প্রথম থেকে আমরা চেষ্টা করেছিলাম ভাল করার। ছোট ছোট বিষয়গুলো অত্যন্ত বড় ভূমিকা পালন করে সব সময়ে। আমরা এক সঙ্গে লাঞ্চ-ডিনার করতাম, অনুশীলনের সময়ে হোক কিংবা জিমের সময়, আমরা সব সময়েই চাইতাম একটা দল হিসেবে সব কিছুই এক সঙ্গে করার জন্য। একে অন্যের পাশে থেকেছি প্রতি মুহূর্তে।
প্রশ্ন: টুর্নামেন্টের সফলতম দল ইন্দোনেশিয়ার বিরুদ্ধে ফাইনালে নামার আগে বিশেষ কোনও পরিকল্পনা ছিল?
কিদাম্বী শ্রীকান্ত: আমরা এটা আর পাঁচটা ম্যাচের মতোই নিয়েছিলাম। বিশেষ কিছুই আমরা ভাবিনি। কারণ ফাইনালে দুই দলের কাছেই একই পরিস্থিতি, সবই কিছুই এক। ওরাও (ইন্দোনেশিয়া) চাপের মধ্যে ছিল। আমরা নিজেদেরকে বলাবলি করছিলাম, ঠিক মতো র্যালি করতে পারলে, নিজেদের সেরা ব্যামিন্টনটা খেলতে পারলে আমাদের মধ্যে সেই যোগ্যতা রয়েছে যেখানে জেতার সুযোগ তৈরি করা যায়। আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই চলানোর শপথ নিয়েছিলাম। অত্যন্ত খুশি যে প্রত্যেকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করেছে এবং এটাই আমাদের সাফল্যের কারণ।
প্রশ্ন: থাইল্যান্ডে যখন প্রথম পা রেখেছিলেন ভেবেছিলেন দেশে ফিরবেন চ্যাম্পিয়ন হয়ে? যখন ইতিহাস করল ভারত, প্রথম অনুভূতিটা কেমন ছিল?
কিদাম্বী শ্রীকান্ত: দেখো, থমাস কাপের মতো একটা টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়া কখনই সহজ নয়। ব্যক্তিগত ভাবে আমরা ভাল পারফর্ম করেছি, সাফল্য পেয়েছি কিন্তু টিম ইভেন্টে আমরা কখনও তেমন বড় কিছু সাফল্য পাইনি। থমাস কাপ বা এই ধরনের টিম ইভেন্টে সাফল্য পাওয়ার মন্ত্র টিম গেন। প্রত্যেকে একটা কথাই বলেছে, 'নিজেদের উপর ভরসা রাখতে হবে এবং প্রত্যেকেই জানি যে এই থমাস কাপ জেতার ক্ষমতা আমাদের রয়েছে এবং ততটাই শক্তিশালী এই দল। তবে, এর মধ্যেও বড় বিষয় ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং একটা দল হিসেবে পারফর্ম করা, কারণ টিম ইভেন্টে কখনওই ব্যক্তিগত ইভেন্টের মতো পারফর্ম করলে চলে না।' একে অপরকে সাপোর্ট করাটা এক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি এবং প্রতিপক্ষকেও বোঝাতে হবে যে এখানে একাকী কেউ নয়, আমরা একটা দল হিসেবে খেলছি। আমি খুশি যে প্রত্যেকেই সেইটা করেছে। প্রত্যেকের নজিরবিহীন পারফরম্যান্সের জন্যই এই সাফল্য এসেছে। এটা কোনও এক জনের সাফল্য নয়, এটা গোটা দলের সাফল্য।
প্রশ্ন: গ্রুপ পর্যায়ের শেষ ম্যাচে হারের পর কী কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েছিল দল?
কিদাম্বী শ্রীকান্ত: এই ধাক্কাটা আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছিল কোয়ার্টার, সেমি এবং ফাইনালে আরও অনেক লড়াই করতে হবে। কোনও খারাপ প্রভাব তৈরির পরিবর্তে এই হারটা আমাদের সাহায্য করেছিল আরও বেশি কঠিন পরিশ্রম করার ক্ষেত্রে মোটিভেট করতে। আরও ভাল খেলার তাগিদ বাড়িয়ে দিয়েছিল এই হার। গ্রুপের শেষ ম্যাচের ধাক্কা প্রত্যেককে খেতাবের জন্য আরও মরিয়া হয়ে ওঠার শিক্ষা দিয়েছিল
প্রশ্ন: পুরো টুর্নামেন্টে আপনি অপরাজিত ছিলেন। লাগাতার সাফল্যের রসায়নটা কী?
কিদাম্বী শ্রীকান্ত: হ্যাঁ, এটা ঠিক যে আমি এই টুর্নামেন্টের ছ'টি ম্যাচের প্রতিটাই জিতেছি (হাসি)। শুরু থেকেই পজিটিভ মাইন্ডসেট রাখার চেষ্টা করেছিলাম এবং লক্ষ্য ছিল নিজের সেরাটা দেওয়ার। দলের জন্য ম্যাচগুলো জিততে চেয়েছিলাম এবং দলের এই সাফল্যে নিজের অবদান রাখতে পেরে আমি অত্যন্ত খুশি। বাকিরাও নিজেদের সেরাটা দেওয়ারই চেষ্টা করেছে।
প্রশ্ন: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ফোন পেয়ে কেমন লাগছিল সেই সময়? সবে ইতিহাস তৈরি হয়েছে তখন।
কিদাম্বী শ্রীকান্ত: সত্যি বলতে সেই সময়ে আমরা এতটাই আবেগাপ্লুত ছিলাম যে ইতিহাস তৈরি হয়েছে সেই কথাটা আমাদের মাথাতেও ছিল না। আমরা এটা ভেবেই আনন্দে আত্মহারা ছিলাম যে থমাস কাপ জিতেছি। কারণ এটাই আমাদের লক্ষ্য ছিল, এই খেতাব জেতার জন্যই তো আমরা খেলছিলাম, প্রচন্ড খুশি ছিল গোটা দল। প্রধানমন্ত্রীর থেকে পাওয়া ফোন আমাদের এই আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দেয়। প্রায় দশ মিনিট উনি কথা বলেন আমাদের সঙ্গে। সত্যিই, ওনার এই ভালবাসা পেয়ে আমরা মুদ্ধ, আমরা কৃতজ্ঞ ওনার কাছে।
প্রশ্ন: আগমী দিনে আর কোন কোন প্রতিযোগীতায় অংশ নিচ্ছেন এবং প্রস্তুতি কেমন?
কিদাম্বী শ্রীকান্ত: এই সপ্তাহে থাইল্যান্ড ওপেনে নামছি এবং ওটাই এখন আমার মূল ফোকাস। এছাড়া কমনওয়েলথ গেমস, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের মতো ইভেন্ট রয়েছে। এই ইভেন্টগুলোতেও সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখাই আমার লক্ষ্য। কমনওয়েলথ অনেক বড় একটা ইভেন্ট, চার বছরে এক বার এই ইভেন্টে অংশ নেওয়ার সুযোগ আসে এবং সত্যিই মুখিয়ে রয়েছে ওখানে ভাল পারফর্ম করার জন্য।