চাঁদের পাথুরে মাটিতেও গাছপালা গজিয়ে তুলেছেন বিজ্ঞানীরা
গবেষকরা সংশয়ে ছিলেন চাঁদের পাথুরে মাটিতে কোনও গাছপালা গজিয়ে উঠবে কি না। তাঁরা তা দেখতে চেয়েছিলেন, এই অসাধ্যসাধন সম্ভব হয় কি না। এটি পরবর্তী সময়ে চন্দ্র অভিযাত্রীরা তাঁদের খাদ্য বৃদ্ধিতে ব্যবহার করতে পারেন কি না, তা নিয়েও গবেষণা চলছে। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল সায়েন্সেসের রবার্ট ফেরল এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
অ্যাপোলো ১১-এর মহাকাশচারীরা য়ে মাটি এনেছিলেন
ফেরল এবং তাঁর সহকর্মীরা চাঁদের মাটিতে থ্যাল ক্রেস রোপণ করেছিলেন, যা অ্যাপোলো ১১-এর নীল আর্মস্ট্রং, বাজ অলড্রিন এবং অন্যান্য চন্দ্র মহাকাশচারীরা যে মাটি এনেছিলেন চাঁদ থেকে। সেই মাটিতেই সবুজায়ন ঘটাতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। চাঁদের মাটির রুক্ষতার কারণে চারাগুলির রোপণে সমস্যা দেখা দেয়। তবে তা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে।
নাসার পরবর্তী পদক্ষেপ হবে চাঁদের পৃষ্ঠে গাছ গজানো
চাঁদে মহাজাগতিক বিকিরণ এবং সৌর বায়ু প্রবাহের কারণে গাছপালাগুলির অবস্থা খারাপ বলে মনে হয়েছিল। অ্যাপোলো ১১-র নমুনাগুলি কয়েক বিলিয়ন বছর বেশি সময় ধরে সংরক্ষিত ছিল। বিজ্ঞানীদের মতে, এই কারণেই গাছপালা বৃদ্ধির জন্য ওই মাটি কম সহায়ক ছিল৷ উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মহাকাশ উদ্ভিদ জীববিজ্ঞানী সাইমন গিলরয় বলেছেন, এর পরবর্তী পদক্ষেপটি হবে চাঁদের পৃষ্ঠে গিয়ে গাছ গজিয়ে দেখানো।
রোপণের মাটি খননের জন্য চাঁদে লাভা প্রবাহের গর্ত ব্যবহার
চাঁদের মাটি আবর্জনাময়। পাথরে মাটিতে নানা টুকরো ছড়িয়ে রয়েছে। ফলে ওই মাটি তে গাছ জন্মানো দুরুহ ছিল। এই অবস্থায় বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই সমস্যার উল্লেখযোগ্য সমাধান হতে পারে রোপণের মাটি খননের জন্য চাঁদে লাভা প্রবাহের মতো ছোট ভূতাত্ত্বিক দাগগুলি ব্যবহার করা। পরিবেশকেও পরিবর্তন করা যেতে পারে, পুষ্টির মিশ্রণ পরিবর্তন করে বা কৃত্রিম আলোর সামঞ্জস্যে।
আগ্নেয়গিরির ছাই দিয়ে তৈরি সিমুলেটেড মাটি নিয়ে পরীক্ষা
শুধুমাত্র ৮৪২ পাউন্ড বা ৩৪২ কিলোগ্রাম চাঁদের পাথর এবং মাটি ছয়টি অ্যাপোলো ক্রু দ্বারা ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। চাঁদ থেকে ফিরে আসার পর হিউস্টনে অ্যাপোলো মহাকাশচারীদের সঙ্গে কোয়ারেন্টাইনে থাকা উদ্ভিদের উপর প্রথম কিছু চাঁদের মাটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। গবেষকরা পৃথিবীতে আগ্নেয়গিরির ছাই দিয়ে তৈরি সিমুলেটেড মাটি নিয়ে পরীক্ষা করে এই সাফল্য পেল অবশেষে।
মহাকাশচারীদের চাঁদে নিয়ে গিয়ে এই গবেষণার পরিকল্পনা
নাসা অবশেষে গত বছরের শুরুর দিকে ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দ্বারা দীর্ঘ প্রতীক্ষিত রোপণটি করতে সফল হয়। গত মে মাসে একটি ল্যাবে তা হয়েছিল। নাসা বলেছে যে, এই ধরনের পরীক্ষার সময় শেষপর্যন্ত সঠিক ছিল। মহাকাশ সংস্থা কয়েক বছরের মধ্যে মহাকাশচারীদের চাঁদে নিয়ে গিয়ে এই গবেষণা সফল করার পরিকল্পনা করেছে।
গাছ উৎপাদনের পাশাপাশি জল ও অক্সিজেন সরবরাহে নজর
ভবিষ্যৎ মহাকাশচারীদের জন্য আদর্শ পরিস্থিতি তৈরি করাই লক্ষ্য নাসার। চাঁদের মাটিতে গাছ উৎপাদনের পাশাপাশি জল ও অক্সিজেন সরবরাহ অফুরান করতে চাইছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। নাসার মহাকাশ জীববিজ্ঞানের প্রোগ্রাম সায়েন্টিস্ট শর্মিলা ভট্টাচার্য বলেন, আমাদের সত্যিই একটি ভালো সূচনা করেছিল এই অভিযানে। এখন প্রশ্ন হল আমরা কীভাবে অপ্টিমাইজ করব এবং উন্নতি করব।
চাঁদ ক্রমেই হাতের মুঠোয় আসতে চলেছে বিজ্ঞানীদের
ফ্লোরিডার বিজ্ঞানীরা এই বছরের শেষের দিকে চন্দ্রের মাটি পুনর্ব্যবহারের আশা ব্যক্ত করছেন। নাসার বিজ্ঞানীরা চাঁদের মাটিতে গাছ গজিয়েছেন আবার চিনের নানজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা চাঁদের মাটিতে কার্বন ডাই অক্সাইড, অক্সিজেন ও জল আবিষ্কার করেছেন। ফলে চাঁদ ক্রমেই হাতের মুঠোয় আসতে চলেছে পৃথিবীবাসীর কাছে।