স্ত্রীকে সঙ্গমে বাধ্য করতে পারেন স্বামী, সেটা কি ধর্ষণ?‌ প্রশ্ন বিচারপতির, দেশজুড়ে প্রতিবাদ

বৈবাহিক ধর্ষণ কি অপরাধ, এই বিষয়ে রায় দিতে গিয়ে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গেল দিল্লি হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। বুধবার দুই বিচারপতি রাজীব শাকধের ও সি হরি শঙ্করের ডিভিশন বেঞ্চ এই ইস্যুতে তাঁদের রায়ে একমত হতে পারেননি। একদিকে হাইকোর্টের বিচারপতি রাজীব শাকধের বৈবাহিক ধর্ষণ অপরাধের পক্ষে মত পোষণ করেছেন অন্যদিকে হরি শঙ্কর আইনের ব্যতিক্রমকে অসাংবিধানিক হিসাবে ধরে রাখতে অস্বীকার করেছিলেন যা স্বামীদের তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে অসম্মতিমূলক যৌন সম্পর্কের জন্য বিচার করা থেকে সুরক্ষা বলয় দেয়।

বৈবাহিক ধর্ষণের বিরুদ্ধে মত পোষণ

তবে বৈবাহিক ধর্ষণের ওপর রায় দেওয়ার আগে একটি পর্যবেক্ষণ রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিয়েছে। বুধবার বিচারপতি হরি শঙ্কর বলেন, '‌একজন স্বামী কখনও কখনও তাঁর স্ত্রীকে তাঁর সঙ্গে সহবাস করতে বাধ্য করতে পারে, স্ত্রীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও। যদিও বলা যেতে পারে যে ওই মহিলার অভিজ্ঞতা একই রকম হয়, যখন তিনি একজন অপরিচিত ব্যক্তির দ্বারা বিধ্বস্ত হন?'‌ বিচারপতি হরি শঙ্করের এই পর্যবেক্ষণ দেশজুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে।

প্রতিবাদে সরব সকলে

রাজনৈতিকবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ এই পর্যবেক্ষণের তীব্র নিন্দায় সরব হয়েছেন। বিচারপতি হরি শঙ্করের এই পর্যবেক্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শিবসেনা সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী বলেছেন, '‌হ্যাঁ, এটা বলা যেতে পারে সামান্য ন্যায্যতা এবং অধিকাংশ নারীর কর্তৃত্বের সঙ্গে:‌ সম্মানীয় বিচারপতি, অপরিচিত হোক বা স্বামী যে নিজেকে একজন মহিলা বা তাঁর স্ত্রীর উপর জোর করে, ক্ষোভ, অসম্মান এবং লঙ্ঘনের অভিজ্ঞতা ঠিক ততটাই শক্তিশালী। আপনার আশেপাশে থাকা মহিলাদের জিজ্ঞাসা করুন। ধন্যবাদ।'‌ অন্য এক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী লেখেন, '‌বিরক্তিকর!‌ বৈবাহিক ধর্ষণ ধর্ষণের সমকক্ষ, সেটাও অপরাধ।'‌ কংগ্রেস নেতা জয়বীর শেরগিল এই পর্যবেক্ষণের বিরুদ্ধে রীতিমতো সওয়াল উঠিয়ে বলেছেন, '‌বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে অস্বীকার করে বিচারপতি হরি শঙ্করের দেওয়া বিভক্ত রায়ের সাথে একমত নই। না বলার অধিকার, নিজের শরীরের ওপর তাঁর অধিকার, সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদে মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার বিবাহের প্রতিষ্ঠানের চেয়ে উচ্চ। আশা করব সুপ্রিম কোর্ট এক ন্যায্য বিচার করবে।'‌

দুই বিচারপতির ভিন্ন মত

বুধবার বিচারপতি হরি শঙ্কর জানিয়েছিলেন যে আইনসভার কণ্ঠস্বর হল জনগণের কণ্ঠস্বর এবং যদি আবেদনকারীরা মনে করেন যে স্বামী তাঁর স্ত্রীকে তাঁর বিরুদ্ধে যৌনতার জন্য বাধ্য করছেন, তাহলে তাঁদের সংসদে যাওয়া উচিত। হরি শঙ্কর বলেন, ' বিবাহের এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে, যার একটি অনন্য চরিত্র এবং জটিলতা রয়েছে, আইনসভা পরামর্শ দিয়েছিল যে ধর্ষণ অভিযোগের কোনও স্থান নেই এবং একটি আইন যা এই ধরনের সম্পর্কের প্যারামিটার থেকে দূরে রাখতে চায়।'‌ তার ২০০ পাতার রায়ে, বিচারপতি শঙ্কর পিটিশনকারীদের কৌঁসুলির সাথে একমত হয়েছেন যে মহিলাদের যৌন স্বায়ত্তশাসন বা যৌন ও প্রজনন পছন্দের কোনও মহিলার অধিকারের বিষয়ে কোনও আপোস করা যাবে না। একজন স্বামীর অধিকার হিসাবে, তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে, তাঁর ইচ্ছা বা সম্মতির বিরুদ্ধে, তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে, তাঁর ইচ্ছা বা সম্মতির বিরুদ্ধে, তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অধিকার নেই। অপরদিকে, রায় দেওয়ার সময় বিচারপতি শাকধের বলেন '‌আমি খুব উদ্বিগ্ন, অপ্রকৃত বিধান- ৩৭৫ ও ৩৭৫ (ই) এই দুটি ধারা ১৪, ১৫, ১৯(১) এবং ২১ নম্বর অনুচ্ছেদকে লঙ্ঘন করছে।'‌ তিনি আরও বলেন এই ঘোষণাটি ঘোষণার দিন থেকেই কার্যকর হবে। যদিও বিচারপতি শঙ্কর রাজীব শাকধেরের রায়ের সঙ্গে একমত হতে পারেননি।

বিতর্কিত বৈবাহিক ধর্ষণ

প্রসঙ্গত বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে বহু বিতর্ক আগেও হয়েছে আর তা এখনও চলছে। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে আদৌও ধর্ষণের নাম দেওয়া যায় কিনা সে নিয়ে মতপার্থক্য বহু আগে থেকেই চলছে। অনেকের মতে ভারতীয় সংস্কৃতিতে বৈবাহিক ধর্ষণের মতো কোনও বিষয় নেই বরং এটা এসেছে পশ্চিমি সংস্কৃতি থেকে। এমনকী, আইনের চোখেও বৈবাহিক ধর্ষণ অপরাধ নয়। কেন নয়? বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে দিল্লি হাইকোর্টে। মামলাকারীদের দাবি, বিয়ের পরেও যদি স্বামী স্ত্রীর সঙ্গে জোর করে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন, সেক্ষেত্রে তা অপরাধ বলে গণ্য করতে হবে।

দু'বছর পরও উপসর্গ থাকছে করোনা সংক্রমিতদের, বলছে ল্যানসেটের গবেষণা দু'বছর পরও উপসর্গ থাকছে করোনা সংক্রমিতদের, বলছে ল্যানসেটের গবেষণা

More RAPE News  

Read more about:
English summary
husband can force wife to have sex but is it rape sparks row across the country