আম্ফানের মাসে ঘূর্ণিঝড় শুনেই আতঙ্ক জনমানসে, আসলে কী পূর্বাভাস আবহাওয়া দফতরের

এপ্রিলের দাবদাহের পরে মে মাস পড়তেই ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাজুড়ে। আন্দামান সাগরে নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে, তা শুনই আম্ফান আতহ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে। কতটা ভয়ঙ্কর হবে এবারের ঝড়? নেটদুনিয়া তোলপাড় মে মাসের শুরু থেকেই। আম্ফানের থেকেও বিধ্বংসী রূপ নিয়ে তা আছড়ে পড়তে পারে বলে সর্বত্রই চর্চা শুরু হয়েছে।

মোক্ষম সময় হল মে ও নভেম্বর মাস

সাধারণ দুটি পর্যায়ে বাংলা তথা ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলির উপকূলবর্তী এলাকায় ধেয়ে আসে ঘূর্ণিঝড়। ঝড় ধেযে আসার একটা সময় হল মার্চ থেকে মে। আর একটি সময় হল বর্ষা পরবর্তী অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর। ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার সবথেকে মোক্ষম সময় হল মে ও নভেম্বর মাস। আর মে পড়তেই সেই সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।

ঝড় গঠনের পূর্বাভাস নেই, তবে সম্ভাবনা আছে

আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, আন্দামান সাগরে ঘূর্ণাবর্ত তৈরিহবে মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই। সেই ঘূর্ণাবর্ত আগামী ৬ মে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। শুধু মে মাস বা সমুদ্রের আবহাওয়া নয়, আরও আনুষঙ্গিক কারণ থাকে একটি ঘূর্ণিঝড় গঠন হওয়ার জন্য। আবহাওয়া দফতরের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, গোটা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে, এখনও ঝড় গঠনের কোনও পূর্বাভাস নেই, তবে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

পরপর ২ বছর ২ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব টাটকা

২ বছর আগে অর্থাৎ ২০২০ সালের মে মাসে বাংলা মুখোমুখি হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের। রাজ্যের সুন্দরবন উপকূল তছনছ হয়ে গিয়েছিল বিধ্বংসী সেই ঝড়ের প্রভাবে। আবার পরের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস তাণ্ডব চালায়। তা সরাসরি বাংলার বুকে আছড়ে না পড়লেও ওড়িশায় আছড়ে পড়ার পর সমুদ্র এমনই উত্তাল হয় যে উপকূল লন্ডভন্ড করে দিয়ে যায়। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় বহু জায়গায়।

ঘূর্ণিঝড় মাঝ সমুদ্রে গঠনই হয়নি, অভিমুখ তো দূরস্ত

পূর্ববর্তী দুই বছরের সেই ভয়াবহতাই এবার তাড়া করে বেড়াচ্ছে জনমানসে। আন্দামান সাগরে ঘূর্ণাবর্ত নিম্নচাপ হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে- এই সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি হতেই আতঙ্ক গ্রাস করেছে। এখনও ঘূর্ণিঝড় মাঝ সমুদ্রে গঠনই হল না, তাঁর গতিপথ বা অভিমুখ নির্ধারিত হল না, তাতেই আতঙ্কিক জনসাধারণ। প্রচার চলছে এই ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের থেকেও শক্তিশালী রূপ নিতে পারে।

আগামী ৬ মে নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে

আইএমডির ডিজি মুত্যুঞ্জয় মুখপাত্র জানিয়েছেন, মে মাসে যখন বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হয়, তখন তা ঘণীভূত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও পূর্বাভাস নেই। আগামী ৬ মে দক্ষিণ আন্দামান সাগর এবং সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে। তারপর তা কী রূপ নেয়, তার উপর নির্ভর করবে পরিস্থিতি।

আম্ফান ও ইয়াসের স্মৃতি এখনও টাটকা, তাই

গত তিন বছরে এপ্রিল-মে মাসেই বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঝড় সাংঘাতিক রূপ নিয়েছে। ২০১৯-এ ঘূর্ণিঝড় ফণী, ২০২০-তে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এবং ২০২১-এ ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। ফণী ও ইয়াস আছড়ে পড়েছিল ওড়িশায় আর আম্ফান বাংলায়। আম্ফানের বাংলার বিশাল ক্ষয়ক্ষতি করেছিল, বাংলায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল ইয়াসেও।

অনেক অনুঘটক ক্রিয়া করলেই ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়

মার্চ মাসে দুটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল বঙ্গোপসাগরে। কিন্তু পরিস্থিতি প্রতিকূল থাকায় তা সমুদ্রেই শক্তি হারিয়ে ফেলে। উপকূলে আছড়ে পড়েনি। এবার মে মাসে যে নিম্নতাপ তৈরি হচ্ছে, তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। আবহবিদরা জানিয়েছেন, জলের উষ্ণতা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে অতিক্রম করলে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তাপমাত্রা ৩০-৩১ ডিগ্রিতে পৌঁছলে পরিস্থিতি আরও অনুকূল হয়। এখন তেমনই পরিস্থিতি। তবে শুধু জলের উষ্ণতা বৃদ্ধি নয়, আবহাওয়ামণ্ডলের আরও কয়েকটি অনুঘটক ক্রিয়া করলেই ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়।

আলিপুর কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টরের বার্তা

আলিপুর কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনালের সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এখন ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা অনেক আগে থেকে দেওয়া হয়। মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে তার ফলে। ১৯৯৯ সালে ওড়িশায় সুপার সাইক্লোন হয়েছিল। সেখানে ১০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। এখন তা কমে ডাবল ডিজিটে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। মৃতের সংখ্যা শূন্য করা এবং ক্ষয়ক্ষতি কমানোই আমাদের লক্ষ্য।

১.৮ কিলোমিটারের প্রকাণ্ড গ্রহাণু বিপজ্জনকভাবে ধেয়ে আসছে, সতর্ক করল নাসা১.৮ কিলোমিটারের প্রকাণ্ড গ্রহাণু বিপজ্জনকভাবে ধেয়ে আসছে, সতর্ক করল নাসা

More WEATHER News  

Read more about:
English summary
Cyclone fear spread in every corner of West Bengal before Weather office forecast
Story first published: Monday, May 2, 2022, 20:14 [IST]