দুনিয়ার এক ফুসফুসের ২২% খতম ! ৯টি দেশের সীমান্তে চরম আমাজন কূটনীতি

By: Simanto Chowdhury

November 22, 2021

Share

ধরুণ আপনার ফুসফুসের ২২ শতাংশ কাজ করছে না। কী হবে তহলে ? শ্বাস-প্রস্বাসে টান ধরবে। দম নিতে অসুবিধা হলে জীবন সংকট হতেই পারে। ঠিক যেমন করোনাভাইরাস হামলায় ক্ষতির মুখে পড়া ফুসফুস নিয়ে বা অন্য কারণে ‘বুকের রোগ’ বাঁধানো যে কারোর ক্ষেত্রে হয়। বিশ্বের সেটাই হয়েছে।
 
বিশ্ব ফুসফুসের দুটি প্রধান অংশ একটি হলো দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদীর অরণ্য। অন্যটি আফ্রিকার কঙ্গো নদীর বনাঞ্চল। বিশালাকার এই দুই অরণ্যাঞ্চল লাগাতার চোরা কাঠ পাচারকারীদের হামলায় ও কৃত্রিম দাবানল তৈরি করায় কমতে শুরু করেছে। উপগ্রহ চিত্রে স্পষ্ট দুটি ফুসফুস ক্ষতির মুখে। এর মধ্যে আমাজন নদীর বনাঞ্চলের ২২ শতাংশ শেষ।
 
কী হবে তাহলে ?
সোজা হিসেব, দুনিয়ার দম বন্ধ হবে। অক্সিজেন উৎপাদন কমবে। আর অক্সিজেনে ভর করে বেঁচে থাকা সব প্রাণীর প্রাণ আইঢাই করবে।
 
আমাজন নদীর গতিপথে পড়ছে দক্ষিণ আমেরিকার ৯টি  দেশ।  ব্রাজিল, বলিভিয়া, পেরু, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, গায়ানা, সুরিনাম ও ফরাসি গায়ানা। এদের মধ্যে ক্ষমতাশালী দুটি দেশ ব্রাজিল ও ভেনেজুয়েলার সরকার রাজনৈতিক কারণে বিপরীতমুখী। দক্ষিণপন্থী ব্রাজিল আর বামপন্থী ভেনেজুয়েলা (২০২১ সালের প্রেক্ষিত)। ফলে আমাজন নদী ও বনাঞ্চলের ব্যবহার নিয়ে পরস্পর বিরোধী অবস্থান।
 
ভেনেজুয়েলার অভিযোগ, আমাজনের একটি অংশকে কর্পোরেট হাতে তুলে দিয়ে প্রবল ক্ষতি করছে ব্রাজিল সরকার। বারবার দাবানলের পিছনে আছে কর্পোরেট সংস্থার অভিষন্ধি। দক্ষিণ আমেরিকার কমবেশি বাম মানসকিতার কারণে আমাজন অববাহিকার বাকি কিছু দেশ একই অভিযোগ করছে। এই নিয়ে দশকের পর দশক তীব্র রাজনৈতিক কূটনৈতিক ঘাত প্রতিঘাত চলছে। সররকারের রঙ পাল্টে গেলে সংঘাতের চরিত্র পাল্টায়। আবহাওয়া ও জলবায়ুর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাম মানসিকতার দেশগুলি আমাজন রক্ষায় বেশি উদ্যোগী।
 
আপাতত ব্রাজিলের দক্ষিণপন্থী সরকারের বিরুদ্ধে আমাজন ধংসের অভিযোগ প্রবল। সাম্প্রতিক জলবায়ু সম্মেলনে (কপ ২৬) আমাজনের অন্যতম অংশীদার ব্রাজিলের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ সংঘটিত হয়। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা জানিয়ে দেন ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর সরকার আমাজন নদী ও বনাঞ্চল থেকে মুনফার লোভে বিশ্বের ক্ষতি করছে।
 
স্কটল্যান্ডের রাজধানী গ্লাসগোতে শেষ হওয়া জলবায়ু সম্মেলনে বিতর্কের মুখে পড়ে ব্রাজিল। চাপের মুখে ২০৩০ সাল নাগাদ আমাজনের বনাঞ্চল রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দেয় ব্রাজিল। অথচ দেশটিতে গাছপালা নিধনের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। এতে উদ্বিগ্ন পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞরা।
 
দুনিয়ার ২০ শতাংশ অক্সিজেন আসে আমজন থেকে। ঘন অরণ্যের ৬০ শতাংশই ব্রাজিলে। অথচ আমাজনের ব্রাজিলীয় অংশে গত ১৫ বছরে গাছ কাটা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এ রিপোর্ট 
ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইনপ) জানাচ্ছে।  সর্বশেষ তথ্য গত ১ বছরে আমাজনে গাছ কাটার পরিমাণ ২২ শতাংশ।  বনভূমির প্রায় ১৩ হাজার ২৩৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গাছ উজাড় করা হয়েছে।
 
পরিস্থিতি বুঝছে ব্রাজিল সরকার। ব্রাজিলের পরিবেশমন্ত্রী জোয়াকিম লেইটে জানান, এ তথ্য আমাদের চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এখান থেকেই উঠছে পরবর্তী প্রশ্ন। আমাজনের বাকি দেশগুলির বিশেষত ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক অবস্থান কি বিশ্বকে রক্ষা করতে পারে ? পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতামত, যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশা। 
 
কিন্তু এই ব্রাজিল সরকারের বিরুদ্ধেই আমাজনকে ফেসবুকের মাধ্যমে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। বিবিসি সেই খবর প্রকাশ করে। রিপোর্টে বলা হয় ” ব্রাজিলে আমাজনের উষ্ণমণ্ডলীয় বনভূমির কিছু অংশ অবৈধভাবে ফেসবুকে বিক্রি করা হচ্ছে।  যেসব এলাকা বিক্রি হচ্ছে এগুলো সংরক্ষিত এলাকা যার মধ্যে আছে জাতীয় বনভূমি এবং আদিবাসীদের জন্য নির্ধারিত এলাকা। ফেসবুকে ‘ক্লাসিফায়েড অ্যাড’ সেবার মাধ্যমে তালিকাভুক্ত আমাজনের এসব প্লটের কোনো কোনোটি এক হাজার ফুটবল মাঠের সমান বড়।
 
বিবিসি স্টিং অপারেশনের মাধ্যমে ব্রাজিল সরকারের এই অবস্থানকে তুলে ধরে বিবিসি। রিপোর্টে বলা হয়, ব্রাজিলের আমাজন বনভূমি সবচেয়ে বেশি উজাড় হচ্ছে যেখানে  সেই রাজ্যটির নাম রন্ডনিয়া। আমাজনের বনভূমি বিক্রির চক্রাম্ত ফাঁস করতে বিবিসি এখানকার চারজন বিক্রেতার সাথে বৈঠকের ব্যবস্থা করেছিল। 
 
একনজরে আমাজন:
আমাজনের অববাহিকা পৃথিবীর সর্ববৃহত। প্রায় ৭০,৫০,০০০ বর্গ কিলোমিটার। আমাজন ব্রাজিলে শুধুমাত্র তার পুরো প্রবাহের পাঁচ ভাগের একভাগ নিয়ে প্রবেশ করে এবং সবশেষে আটলান্টিক মহাসাগরে গিয়ে মেশে। তবুও সেখানেই সবথেকে বড় প্রবাহ রয়েছে, যা অন্যান্য নদীর চেয়ে বেশি। আমাজন  এটি দুনিয়ার দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী। এর উৎস পেরুর আন্দিজ পর্বতমালায়। প্রায় ৩০০০ মাইল পাড়ি দিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে গিয়ে পড়েছে। এই নদী যে পরিমাণ জল ধারণ করে তা বিশ্বের যেকোন নদীর তুলনায় বেশি। আমাজন নদী যেখানে সাগরে গিয়ে মিশেছে সেখানে প্রতি সেকেন্ডে ৪.২ মিলিয়ন ঘন ফুট জল সাগরে গিয়ে পড়ে।

More Articles

error: Content is protected !!