মোদীর কৃষি আইন প্রত্যাহারে কার লাভ কতটা, রাহুল-মমতাদের পথে রয়েছে পাঁচ কাঁটা
৩৫৭ দিন টানা আন্দোলন চালিয়েছেন কৃষকরা। তারপর মিলেছে জয়। প্রধানমন্ত্রী মোদী হার মেনে কৃষি আইন রদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ৬৭০ জনেরও বেশি কৃষকের রক্তে রাঙা আন্দোলন বৃথা যায়নি ঠিকই, কিন্তু কৃষি আইন রদে কার ফায়দা হবে, তা নিয়েই জোর পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। মমতা-রাহুলরা কী পারবেন এর ফায়দা তুলতে। তাঁদের পথে রয়েছে ৫ কাঁটা।

কৃষি আইন রদের পিছনে ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উত্তরপ্রদেশ ও পাঞ্জাব-সহ পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে কৃষি আইন রদরে কথা ঘোষণা করেছেন। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মোদীর এই সিদ্ধান্তকে মাস্টারস্ট্রোক হিসেবে বর্ণনা করেছে। দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে কৃষি আইন রদের পিছনে ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি রয়েছে। মোদী তাঁর ফায়দা নিতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বিরোধীদের শিক্ষা দিয়ে গিয়েছে কৃষকদের আন্দোলন
মোদীর এই সিদ্ধান্ত আপাত দৃষ্টিতে তাঁর পিছু হটা বা বিজেপির ব্যাকফুটে চলে যাওয়া মনে হলেও তিনি যে বিশেষ পরিকল্পনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। লাভ-ক্ষতির অঙ্ক কষেই তিনি এগিয়েছেন। কৃষকরা সাবধানী মোদীর সিদ্ধান্তের পর। এটা ঠিক যে কৃষকদের আন্দোলনের জয় হয়েছে, কিন্তু বিরোধীদের কি কোনও ফায়দা হবে। বরং বিরোধীদের শিক্ষা দিয়ে গিয়েছে কৃষকদের আন্দোলন।

মমতা-রাহুলদের পথে প্রথম কাঁটা
কৃষি আইন রদের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে মোদী সরকার। হার মোদীর, কিন্তু সেই জয় শুধু কৃষকদের। গণ আন্দোলনের জয় হয়েছে অবশেষে। কোনও অঙ্কেই কৃষকদের আন্দলনের ফসল তুলতে পারে না বিরোধীরা। কেননা কৃষক আন্দোলনে বিরোধীদের সে অর্থে কোনও ভূমিকা নেই। যা আত্মত্যাগ করেছেন কৃষকরা। কৃষক সংগঠনের পক্ষ থেকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন হয়েছে।

মমতা-রাহুলদের পথে দ্বিতীয় কাঁটা
কৃষকদের এই আন্দোলনে কোনও রাজনৈতিক রং লাগেনি এই এক বছরে। কৃষক সংগঠনগুলি রাজনৈতিক রং লাগতে দেননি। কোনও রাজনৈতিক দলই কৃষক আন্দোলনকে হাইজ্যাক করতেও পারেননি। কৃষকরা স্বতন্ত্র বজায় রেখেই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে গিয়েছেন। কৃষকরা বুঝিয়ে দিয়েছেন, মানুষের থেকে বড় কিছু নেই। তা সরকারের ক্ষমতা যতই হোক। সঙ্ঘবদ্ধ আন্দোলন তাঁদের পিছু হটাতে পারে। কোনও রাজনৈতিক রংয়েরও প্রয়োজন নেই আন্দোলন করতে গেলে।

মমতা-রাহুলদের পথে তৃতীয় কাঁটা
বিরোধীরা কৃষকদের পক্ষেই ছিলেন। বিরোধিতা করেছিলেন মোদী সরকারের আনা কৃষি বিল ও কৃষি আইনের। কিন্তু তাঁরা তাঁদের জায়গা থেকে বিরোধিতা করেছেন। কৃষকরা কৃষকদের জায়গা থেকে আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন। কখনই কৃষক ও বিরোধীরা সমার্থক হননি। একযোগে মোদী সরকারের বিরোধিতাও করেননি। বিরোধীরা সংসদ অচল করে দিয়েও কাজের কাজ করতে পারেননি, যা করে দেখিয়েছে কৃষকদের গণ আন্দোলন।

মমতা-রাহুলদের পথে চতুর্থ কাঁটা
মোদী কৃষি আইন রদ করেছেন উত্তরপ্রদেশ ও পাঞ্জাবের ভোটের আগে। তা মোদীর হার ভেবে বিরোধীরা যদি ভেবে থাকেন, তাঁরা মাইলেজ পাবেন আসন্ন নির্বাচনে, তবে তা ভুল হবে। কারণ মোদী-শাহ অনেক ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেননা তাঁরা যা পরিকল্পনা করেন, সম্ভাব্য পরিণাম ভেবেই নেন। বিজেপির যা হারানোর হারিয়ে গিয়েছে, নতুন করে হারানোর কিছু নেই। কিন্তু বিরোধীদের কী ফায়দা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
কিষাণ বিজয় দিবস: গোটা দিশে মিছিল করে কৃষকদের জন্য উৎসব উদযাপনের ডাক কংগ্রেসের

মমতা-রাহুলদের পথে পঞ্চম কাঁটা
রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্ত বিরোধীদের লাভের থেকে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি। কারণ এই সিদ্ধান্তের ফলে বিরোধীদের অনেক অস্ত্রই ভোঁতা হয়ে যাবে। আর সেটাই নরেন্দ্র মোদীর গেমপ্ল্যান। কৃষক আন্দোলন ছিল বিজেপির বিরুদ্ধে সবথেকে বড় অস্ত্র, তা ভোঁতা হয়ে গেল। মোদী কোনওদিন দেশবাসীর মন কী বাত শোনেননি, শুধু নিজের মন কী বাতেই ব্যস্ত থাকতেন, তাও আর বলা যাবে না। কারণ দেশবাসীর মন কী বাত শুনেই তিনি দেরিতে হলেও কৃষি আইন রদ করে দিয়েছেন।

পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশে ফায়দা মোদীর
এখন দেখার উত্তরপ্রদেশ ও পাঞ্জাব নির্বাচনে কৃষক আন্দোলন শেষে কৃষি আইন রদের কী ফায়দা তুলতে পারেন বিরোধীরা। পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশে কৃষক আন্দোলনের ফলে বিজেপি কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। বিজেপির অনেক জোটসঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল। পাঞ্জাবে সবথেকে পুরনো জোটসঙ্গী অকালি দল, উত্তরপ্রদেশে লোকদলও ছেড়ে গিয়েছিল বিজেপিকে। এই অবস্থায় বিজেপি চাইবে সেসব মেরামত করে সম্পর্ক জোড়া লাগাতে। তাই রাজনৈতিক লাভ তুলতেই মোদীর এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।