চিনের উহান বাজার থেকেই প্রথম কোভিড–১৯ ছড়িয়েছে, নতুন সমীক্ষায় চাঞ্চল্যকর দাবি

২০১৯ সালের শেষের দিকে চিনের উহান থেকেই প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা বিশ্বে। এরপর এই মারণ ভাইরাস গ্রাস করে পুরো বিশ্বকে। কিন্তু সত্যিই কি এই মারণ ভাইরাস তৈরি হয়েছিল চিনের উহানের ল্যাবরেটরিতে?‌ করোনা ভাইরাসের জন্য দায়ী কে?‌ এই প্রশ্ন নিয়ে এখনও উত্তাল বিশ্বের একাধিক দেশ। তবে নতুন এক সমীক্ষায় কিছুটা উত্তর পাওয়া গেল। সেখানে বলা হয়েছে চিনের উহানের মাছ–মাংসের বাজারের এক মহিলা সামুদ্রিক মাছের বিক্রেতার শরীরে প্রথম কোভিড–১৯ উপসর্গ দেখা দেয়। এই বাজারের সঙ্গে কোনওভাবেই যুক্ত নন এমন একজন হিসাবরক্ষকের কথা যে আগে বলা হচ্ছিল তা ঠিক নয়। সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত রিপোর্টে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

ফের উর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণ, বাড়ছে উদ্বেগ
প্রথম করোনা রোগী অন্য কেউ

প্রথম করোনা রোগী অন্য কেউ

সমীক্ষায় বলা হয়েছে, প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী মধ্য চিন শহরের হুনান পশুজাত বাজারে কাজ করতেন। বৃহস্পতিবার এই তথ্য প্রকাশ করেছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। এই উহান শহর থেকেই ২০১৯ সালে প্রথম করোনা ভাইরাস ধরা পড়ে এবং তা মহামারির আকার নেয়। প্রসঙ্গত, বিশ্বের প্রথম করোনা সংক্রমণ নিয়ে নয়া তথ্য দিলেন বিজ্ঞানী, ভাইরোলজিস্ট মাইকেল উরুবি জানিয়েছেন যে এক হিসাব রক্ষক, যাঁকে প্রথমে মনে করা হয়েছিল তিনি প্রথম করোনার রোগী, তাঁর উপসর্গ ধরা পড়েছিল ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর, প্রাথমিকভাবে জানার অনেকদিন পর।

হিসাবরক্ষক প্রথম করোনা রোগী নন

সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ‘‌হুনান বাজারে বেশ কিছু কর্মীদের করোনা কেস ধরা পড়ার পর ওই হিসাব রক্ষকের উপসর্গ সামনে আসে, তবে ১১ ডিসেম্বর মহিলা সামুদ্রিক মাছ বিক্রেতার শরীরে এই মারণ ভাইরাস প্রথম ধরা পড়েছিল।' অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোলজি ডিপার্টমেন্টের প্রধান ভাইরোলজিস্ট মাইকেল উরুবি বিভিন্ন কমিউনিটি সংক্রমণও এই বাজার থেকেই হয়েছে দাবি করেছেন। তিনি বিভিন্ন তথ্য ঘেঁটে ও লোকজনের সাক্ষাৎকার নিয়ে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন বলে দাবি করেন। উরুবি জানিয়েছেন যে ওই বিক্রেতার সঙ্গে হুনান সামুদ্রিক মাছের পাইকারি বাজারের সঙ্গে যোগ ছিল। নতুন বিশ্লেষণে বলছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের সঙ্গে ওই বাজারের নিবিড় যোগাযোগ ছিল, যা মহামারি সেখান থেকে ছড়িয়েছে দৃঢ় প্রমাণ দিচ্ছে।

সংক্রমণ কীভাবে ছড়িয়েছে তা এখনও প্রশ্নের মুখে

তবে নিজের গবেষণা নিয়েও একশো শতাংশ নিশ্চিত নন ভাইরোলজিস্ট উরুবি। তাঁর বক্তব্য,‘‌১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষের বসবাসের শহরে এটা খুঁজে বের করা খুবই কঠিন যে কীভাবে সংক্রমণ ছড়িয়েছিল। ল্যাব কিংবা বাজার - কোনও কিছুকেই সংক্রমণের নিশ্চিত উৎস হিসেবে ধরা যাবে না।'‌ যদিও নিজের দাবির সপক্ষে তিনি বেশ কয়েকটি হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল রিপোর্ট তুলে ধরেছেন। তবে সেসবও আরও বেশি করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার অবকাশ রাখে। একাধিক বিশেষজ্ঞ, যার মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দ্বারা নিয়োজিত মহামারি তদন্তকারী জানিয়েছেন যে উরুবি যে তদন্ত করেছে তা সঠিক পথে রয়েছে এবং কোভিড-১৯-এ প্রথম আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সামুদ্রিক মাছ বিক্রেতার।

হু–এর ভুল তথ্য পেশ

কিন্তু বিশেষজ্ঞদের অনেকেই জানিয়েছেন যে মহামারি কোথা থেকে শুরু হয়েছে এ নিয়ে কিন্তু যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে এখন তা বড় প্রশ্ন রূপে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই বিশেষজ্ঞদের মতে ভাইরাসটি সম্ভবত বিক্রেতার কেসের কিছু সময় আগে একটি ‘‌রোগী শূন্য'‌ সংক্রমণ ছিল এবং তারপরে তা বাজারে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার জন্য গুরুতর আকারে পৌঁছেছিল। জানুয়ারিতে হু দ্বারা মোতায়েন করা গবেষকরা চিনে পরিদর্শনে যান এবং বেশ কিছু সাক্ষাতকার করার পর এটা জানতে পারেন যে প্রথম উপসর্গ দেখা দেয় ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর। তাঁরা এ নিয়ে ২০২১ সালের মার্চ মাসে রিপোর্ট প্রকাশ করে এবং সেই ব্যক্তিকেই প্রথম করোনা কেস হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।

উরুবির তত্ত্বকে সমর্থন হু–এর

তবে হু-এর দলে থাকা ইকোহেল্‌থ গোষ্ঠীর ইকোলজিস্ট পিটার ডাসজ্যাক জানিয়েছেন যে তিনি উরুবির বিশ্লেষণের সঙ্গে একমত এবং তিনি এও স্বীকার করেন যে তাঁরা ভুল ছিলেন। ডাসজ্যাক এও বলেন, ‘‌ডিসেম্বরের ৮ তারিখটি ভুল ছিল।'‌ ডাসজ্যাক এও জানান যে তাঁদের দলটি ওই হিসাবরক্ষককে তাঁর উপসর্গ কবে শুরু হয়েছিল তা তাঁরা জিজ্ঞাসাই করেননি। বরং তার বদলে হুবেই সিনহুয়া হাসপাতালের চিকিৎসকদের দেওয়া ৮ ডিসেম্বর তারিখটি সত্যিই বলে মেনে নেন তাঁরা। তাই ভুলটা সেখানেই হয়েছে। হু বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ডাসজ্যাক জানান যে হিসাবরক্ষকের সাক্ষাতকার এখন সত্যিত মৃত। ওই হিসাবরক্ষকের সঙ্গে কোনও প্রাণী বাজার, ল্যাব ব গণ সমাবেশের সঙ্গে যুক্ত নন। তিনি জানিয়েছিলেন যে তিনি ইন্টারনেটে সময় কাটাতে ও জগিং করতে ভালোবাসেন এবং তিনি খুব একটা সফর করেন না।

কোভিড ভাইরাসের উৎস নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেল

এদিকে বিভিন্ন মহল থেকে আগেই সংশয় প্রকাশ করা হয়েছিল যে চিনে ইয়াংতি নদীর কাছে একটি ভাইরাস ল্যাবরেটরি থেকে ভাইরাস লিক হয়ে থাকতে পারে। এরপর সেটি উহানের সামুদ্রিক মাছের বাজারে ছড়িয়ে পড়েছিল বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছিল। এবার নতুন এই সমীক্ষা অনেকটা সেই তত্ত্বকেই সমর্থন করল। তবে প্রশ্নটা থেকেই গিয়েছে কোভিড ভাইরাসের উৎসটা বাস্তবে ঠিক কোথায়? প্রসঙ্গত, শুক্রবারও বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ কেস দাঁড়িয়ে রয়েছে ২৫৬,০৯২,৩৯২-তে এবং কোভিডে মারা গিয়েছেন ৫,১৩২,৪৪৩ জন।

খবরের ডেইলি ডোজ, কলকাতা, বাংলা, দেশ-বিদেশ, বিনোদন থেকে শুরু করে খেলা, ব্যবসা, জ্যোতিষ - সব আপডেট দেখুন বাংলায়। ডাউনলোড Bengali Oneindia


More CORONAVIRUS News  

Read more about:
English summary
The coronavirus was first detected of a vendor at the Wuhan Animal Market in China