পাকসেনা মোতায়েনের তথ্য দিয়ে সাহায্য
সীমান্ত পেরনোর সময় লেফটেন্ট্যান্ট কর্নেল কাজি সাজ্জাদের কাছে ছিল পাক সেনার মোতায়েনের তথ্য আর মাত্র কুড়ি টাকা। সীমান্তে তাঁকে পাক সেনার গুপ্তচর বলে সন্দেহ হওয়ার নিয়ে যাওয়া হয় পাঠানকোটে। এরপর তাঁকে জেলার সময় তিনি পাকিস্তানের সেনা মোতায়েনের তথ্য তুলে দেন ভারতীয় সেনার আধিকারিকদের হাতে। এরপর তাঁকে দিল্লিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখানেই তিনি দীর্ঘদিন ছিলেন। পাশাপাশি পাকিস্তানের সেনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে মুক্তিবাহিনীকে প্রশিক্ষণও দিয়েছিলেন তিনি। পরে তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন।
পাকিস্তানের রয়েছে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ
অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্ট্যান্ট কর্নেল কাজি সাজ্জাদ গর্বের সঙ্গে জানিয়েছেন, পাকিস্তানের তাঁর বিরুদ্ধে এখনও মৃত্যুদণ্ডের আদেশ রয়েছে। তবে সেটা তার কাছে পুরস্কারের মতোই। ইতিমধ্যেই তিনি বাংলাদেশ সরকারের তরফে ভারতের বীরচক্রের সমমর্যাদার বীর প্রতীক এবং স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন। এবার তাঁর হাতে ভারত সরকার তুলে দিল দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী। ১৯৭১-এর যুদ্ধে ভারতকে সাহায্য করার জন্যই তাঁকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। যেসময় বাংলাদেশ তাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পালন করছে, সেই সময় সাজ্জাদ ৭১ বছরে পা দিয়েছেন।
জিন্নার পাকিস্তান হয়ে উঠেছিল কবরস্থান
অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্ট্যান্ট কর্নেল কাজি সাজ্জাদের সেই সময়কার ছবি মনে রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানে থাকা নিজের দেশের মানুষদের ওপরেই সেই সময় হামলা চালিয়েছিল, নৃশংস অত্যাচার করেছিল পাকিস্তানের সেনা। পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, জিন্নার পাকিস্তান তাদের কাছে করবস্থান হয়ে উঠেছিল। তাঁদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বলে মনে করা হত। গণতন্ত্রের কথা বলা হলেও, তা দেওয়া হয়নি। জিন্না বলেছিলেন সমানাধিকারের কথা, কিন্তু তা দেওয়া হয়নি। পাকিস্তানের চাকরের মতো মনে করা হয়েছে।
যেভাবে চলে এলেন ভারতে
শিয়ালকোটে পাকিস্তানের এলিট প্যারা ব্রিগেডের এই সদস্য বলছেন, বাহিনীতে একা হয়ে পড়েছিলেন। তবে নিজের মধ্যেই তিনজনের শক্তি যুগিয়েছেন। কীভাবে পালিয়ে যাওয়া যায় ভেবেছেন। জম্মু যাওয়ার জন্য তিনি শাকারগড় রুটকেই বেছে নেন। কেননা এই রুটে পাকিস্তানের বাহিনীর সেরকম নজরদারি ছিল না।
পরিবারে তিনি দ্বিতীয় প্রজন্মের মিলিটারি অফিসার। বাবা ছিলেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তাঁর বাবা তৎকালীন বার্মায় যুদ্ধ করেছেন। অন্যদিকে নিজের ছোটভাই মুক্তিবাহিনীতে যুদ্ধ করেছিলেন।
পাকিস্তানের থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে স্মরণ করে তিনি বলেছেন, তিনি যখনই পাকিস্তানের সীমানা পেরিয়েছেন, সেই সময় পাকিস্তানের দিক থেকে গুলি ছুটে এসেছিল। অন্যদিকে বিএসএফও গুলি চালাচ্ছিল। দুপক্ষের গুলি চলার মধ্যেই তিনি একটি খাদের মধ্যে ঝাঁপ দেন। সেইভাবেই তিনি ভারতের হাতে ধরা পড়েন। ভারতের সেনাবাহিনী প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, তারা কখনই বলেনি তাদের হেফাজতে রয়েছেন। ভাল খাবার ও ব্যবহার করা হয়েছে। দিল্লির সফদরজং এনক্লেভে থাকতে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর শীর্ষ আধিকারিকরা।
দিল্লি থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার হয়েছিস অসম-ত্রিপুরা সীমান্তে, সেখানে তিনি প্রায় ৮৫০জনকে সেনা প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, পাকিস্তানের সেনার লড়াই করার মনোবল ছিল না, কেননা তারা ঘর্ষণ, খুন, লুটপাট, গণহত্যায় জড়িত হয়ে পড়েছিল। তবে আত্মসমর্পণ করার পরে ভারতীয় সেনারা পাকিস্তানের সেনাকে রক্ষা করেছিল বলে জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্ট্যান্ট কর্নেল কাজি সাজ্জাদ। তা না হলে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা তাঁদের হত্যা করত।