আফগানিস্তান বিষয়ে এলএসএ স্তরের বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য ইরান, রাশিয়া এবং তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান-এই পাঁচটি মধ্য এশিয়ার দেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত। আফগানিস্তান নিয়ে এ ধরনের সম্মেলন প্রথম আয়োজিত হচ্ছে ভারতের উদ্যোগে। কিন্তু কে সাতটি দেশের উপস্থতিতে সন্ত্রাসকে মূল অ্যাজেন্ডা করে ভারত এই এনএসএ বৈঠক ডাকল?
এই এনএসএ মিট ১০ নভেম্বর নির্ধারিত হয়েছে এবং এটি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বা এনএসএ স্তরে অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এর সভাপতিত্ব করবেন। এই ফর্ম্যাটে এর আগে দুটি সভা ২০১৮-র সেপ্টেম্বর এবং ২০১৯-এর ডিসেম্বরে ইরানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সূত্র জানিয়েছে, মহামারীর কারণে ভারতে তৃতীয় সভা আগে হতে পারেনি।
অ্যাজেন্ডায় কী আছে? প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনএসএ বৈঠকে সীমান্ত সন্ত্রাসের হুমকি, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উপস্থিতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে চরমপন্থার বিস্তার এবং আফগানিস্তান থেকে উগ্রপন্থী ক্রিয়াকলাপের বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা হবে। আফগানিস্তানে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আগস্টের মাঝামাঝি ক্ষমতা দখল করার পর ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগ রয়েছে। সম্মেলনের মূল আলোচ্যসূচির মধ্যে রয়েছে- তালেবান শাসন-পরবর্তী নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ, আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন এবং আলোচনা করা বর্তমান ব্যবস্থার স্বীকৃতি।
ভারত ইরানের চাবাহার বন্দর প্রকল্প এবং তুর্কমেনিস্তান-আফগানিস্তান-পাকিস্তান-ইন্ডিয়া বা টিএপিআই গ্যাস পাইপলাইন-সহ আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সংযোগে বিভিন্ন প্রকল্প জড়িত রয়েছে। এইসব প্রকল্পের উন্নয়নেও সম্মেলনটি তাৎপর্যপূর্ণ। আফগানিস্তানের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশে উন্নয়ন ও বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। প্রথমবারের মতো মধ্য এশিয়ার দেশগুলি আফগানিস্তান নিয়ে এই ফর্ম্যাটে বৈঠকে অংশ নেবে।
কে অংশগ্রহণ করবে আর কে করবে না? চিন, ইরান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, পাকিস্তান, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তানের এনএসএ বৈঠকের আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে। নয়াদিল্লিতে আমন্ত্রিত দেশগুলোর দূতাবাসের মাধ্যমে গত মাসে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল সেক্রেটারিয়েট থেকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছিল।
ইরান, রাশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশ- তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান এই বৈঠকে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। তবে চিন ও পাকিস্তান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেনি। পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মোইদ ইউসুফ ঘোষণা করেন, তিনি আফগানিস্তানে ভারতের কথিত নেতিবাচক ভূমিকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এই বৈঠকে যোগ দেবেন না।
এদিকে, ভারতীয় কর্মকর্তারা চিনের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী চেন ওয়েনকিং বা অন্য কোনও নিরাপত্তা কর্মকর্তা কার্যত সম্মেলনে যোগদানের বিষয়ে আশাবাদী। এখন পর্যন্ত 'প্রধানমন্ত্রী' হাসান আখুন্দের নেতৃত্বাধীন ভারপ্রাপ্ত তালেবান শাসনকে কোনও দেশ স্বীকৃতি দেয়নি। তবে ভারত-সহ অনেক দেশ বিভিন্ন স্তরে তালিবান কর্মকর্তাদের জড়িত করছে। আফগানিস্তানের উপর জাতিসংঘের একটি বৈঠকে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন যে, নয়াদিল্লি তালিবানদের আফগানিস্তান দখলের পরে 'বোধগম্য উদ্বেগের' সাথে উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ করছে।
ভারত বারবার তালেবান ব্যবস্থার কাছে স্পষ্ট করে বলেছে যে, আফগানিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাসকে আমল দেওয়া উচিত নয়, নতুন প্রশাসনকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত এবং সংখ্যালঘু, নারী ও শিশুদের অধিকার অবশ্যই সুরক্ষিত করা উচিত। এটি লক্ষণীয় যে আফগানিস্তান এবং আফগানিস্তানের জনগণের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘকাল ধরে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। আফগান সরকারের সঙ্গেও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল যেটি সম্প্রতি তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের ফলে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল। তালিবান অধিগ্রহণের পরে, ভারত পুনর্ব্যক্ত করেছে যে তারা সর্বদা আফগান জনগণের পাশে রয়েছে এবং অতীতের মতো মানবিক সাহায্য পাঠাতে তারা প্রস্তুত।
সাম্প্রতিক জাতিসংঘের বৈঠকে জয়শঙ্কর স্পষ্ট করে বলেছিলেন যে, ভারত আফগান জনগণকে মানবিক সহায়তা পাঠাতে প্রস্তুত এবং দেশে সর্বোত্তম সম্ভাব্য সক্ষম পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ভারত পাকিস্তানের সিদ্ধান্তকে 'দুর্ভাগ্যজনক, কিন্তু আশ্চর্যজনক নয়' বলে অভিহিত করেছে। তাদের এই সিদ্ধান্ত আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিকে সুরক্ষিত হিসেবে দেখার মানসিকতাকে প্রতিফলিত করে। পাকিস্তান এই ফর্ম্যাটের আগের বৈঠকগুলিতে যোগ দেয়নি। সূত্র জানায়, আলোচনার আয়োজনে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের মন্তব্য আফগানিস্তানে তাদের ক্ষতিকর ভূমিকা থেকে মনোযোগ সরানোর একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা বলে বর্ণনা করা হয়েছে।